গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের জমি ফেরত দেয়া, হামলা-হত্যাকাণ্ডের বিচার ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে সকালে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে বাণিজ্য অনুষদের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি সংসদের আহ্বায়ক মশিউির রহমানের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের জমি ফেরত দেওয়া, হামলা-হত্যাকাণ্ডের বিচার ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবি তুলে ধরেন বক্তারা।
সেখানে বক্তব্য রাখেন গাইবান্ধা সাঁওতাল পল্লীর বাসিন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সম্পদ অয়ন মারান্ডী। গত ৬ নভেম্বর গোবিন্ধগঞ্জে সাঁওতালপল্লীতে হামলার পর বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। নিজ চোখে দেখে এসেছেন পিতৃপুরুষের ভিটার জন্য আর্তনাদ।
তিনি বলেন, ‘গত ৬ নভেম্বর সাঁওতালপল্লীতে হামলার পর এখনো সেখানে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মানুষজন গ্রাম থেকে বের হতে পারছে না, বের হতে গেলে স্থানীয় মানুষজন তাদেরকে হামলা করছে। পুলিশ সেখানে আছে, কিন্তু পুলিশ সেখানে নিপীড়িত মানুষের পাশে নাই।
হামলার ব্যাপারে প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করে অয়ন মারান্ডী বলেন, ‘প্রশাসন একদিকে বলছে যে, প্রশাসন আমাদেরকে নিরাপত্তা দিচ্ছে, আমাদেরকে ত্রাণ দিতে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের ১৮০০ একর যে ধানের জমি, সে ধানের জমি থেকে আমাদেরকে উচ্ছেদ করছে এবং সে ধানের জমি এখনো তারা পুরোপুরি কাটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিতে চাচ্ছে। তারা আমাদেরকে ত্রাণ দিতে চাচ্ছে কিন্তু আমাদের যে পাঁচজন মারা গেছে এবং আরো যারা আহত হয়েছে, যারা নিখোঁজ আছে; এই বিষয়ে কোন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেনি, কোন মামলা করেনি। প্রশাসন এ বিষয়ে নজর দিচ্ছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের বাড়ি-ঘর পুরিয়ে দেবার পরও চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাথে সাথে জমি পরিষ্কার করে সেখানে তারা আখের বীজ রোপন করল। কিন্তু আমরা যেখানে ৩০০ একর জমিতে ধানের চাষ করেছি, সে ধানের জমিতো তারা পুরিয়ে দিলো না, সেই ধানের জমিতো তারা চাষ করলো না। প্রশাসনের এই্ দ্বিমুখিতাকে আমরা মেনে নেবো না। আমাদের একটাই মাত্র দাবি, ত্রাণ না, পুনর্বাসন না, আমাদেরকে পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরিয়ে দিতে হবে।’
‘সাঁওতালদের ন্যায় সঙ্গত লড়াইয়ের পাশে দাঁড়াই’ ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।