পৃথিবীর অশুভ শক্তিগুলো বহুরূপী। তারা নানাভাবে নানা সময়ে নিজের স্বার্থ বুঝে রূপ পাল্টায়। আর সেই অশুভ শক্তিগুলোকে চিহ্নিত করা এবং প্রয়োজনে মোকাবেলা করতে শেখাটাই একজন সুন্দর মানুষের কাজ।
সমাজে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে বা শিক্ষার কাজের সাথে যুক্ত তাদের দায়িত্ব পৃথিবীকে সুন্দর করবার জন্য পৃথিবীতে শোষণকারী, অন্যায়কারী, ধনী-গরীবের পাৰ্থক্য তৈরিকারী, শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্য তৈরিকারী, ধর্মের নামে অধর্মের চর্চা করা, মানুষের অনিষ্ট করা, ক্ষমতার দম্ভকারী মানুষরূপী অসুরগুলোকে চিনিয়ে দেয়া।
সমাজের রাজা, মোড়ল, আকাশসম ক্ষমতাধর লোকেদের সমাজে অদৃশ্য অসম কাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে যে ভূমিকা থাকে তাকে খালি চোখে দেখতে শিখতে হবে। আমরা যেন বিভ্রান্ত হয়ে না যাই বা ভয় না পাই সমাজের সেই শোষক অপশক্তিগুলোকে দেখে। আমাদের শিশু -কিশোরদেরকে তাই ছোটবেলা থেকেই শেখাতে হবে আমাদের চারিপাশের পরিবেশে কত অন্ধকার লুকিয়ে আছে এবং সেই সাথে তারা কেমন করে আলো হয়ে জ্বলে উঠবে, দেবী দুর্গার মতো শক্তিশালী হয়ে বেরিয়ে আসবে বহুরূপে সমাজের মহিষাসুরদের বধ করতে।
আমাদের শিশুদের সমাজের আলো হিসেবে গড়তে, এক জীবন চলে যায় আর সেই প্রচেষ্টায় ছোট্ট বেলা থেকেই আমার সন্তানদের শিখিয়েছি বর্ণ বৈষম্য কী, পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক কাঠামো কাকে বলে, ধর্মীয় গোঁড়ামি বলতে কী বুঝায়, উঁচু বা নিম্ন শ্রেণী কেমন করে সমাজে তৈরি হলো, নারী-পুরুষের অসম সামাজিক কাঠামো কেমন করে তৈরি হলো, নারীর সামাজিক ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সমাজের সম্পদের অসম বন্টন এর মেকানিজম এবং নারীর ক্ষমতায়ন বলতে আসলে আমরা কি বুঝি।
শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসব চলছে চারিদিকে। কোভিড এর মাঝে ঘরবন্দী হয়ে দেবী দুর্গাকে নিয়ে ভাবছিলাম এবং বোঝার চেষ্টা করছিলাম তার জীবনের অন্তর নিহিত অর্থ। আমাদের প্রতিদিনকার জীবন থেকেই দেবী দূর্গাকে জানতে হবে। শুধুমাত্র মূর্তি পূজার মাঝেই দেবী দুর্গার অন্তর্নিহিত অর্থ লুকিয়ে নেই। এর অর্থ ভীষণ ব্যাপক এবং গভীর যা আমাদের সারা বছরের প্রাত্যহিক কর্ম- কাণ্ডের মাধ্যমে জানতে হবে এবং একটু একটু করে শিখতে হবে।
আমার তেরো বছরের মেয়ে প্রার্থনাকে বলছিলাম কথাগুলো এবং তাকে দেবী দুর্গার অর্থ কী তা শেখাবার চেষ্টা করছিলাম। মেয়ে আমার আমেরিকাতে জন্মগ্রহণ করবার জন্য বাংলা খুব ভালো বোঝে না কিন্তু ছবি আঁকতে ভালোবাসে। আমার বলে যাওয়া কথাগুলো সে ছবি এঁকে প্রকাশ করলো। দুর্গা মানে শুভ শক্তির বিজয়, অশুভ শক্তির পরাজয়।
আমার মেয়ের চোখে তার মা একজন দুর্গা এবং সে আরও বললো, সে নিজেই একজন ভবিষ্যৎ দুর্গা। আর সমাজের ঘরে ঘরে অনেক দুর্গা রয়েছে যাদের সবাইকে একসাথে পৃথিবীর কালো এবং অশুভ শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এভাবেই আমাদের মা-মেয়ের কথোপকথন শেষ হলো।