নেপালে শনিবারের ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দেশটিতে সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কমপক্ষে ১৪ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে দুপুরের দিকে ৭.৯ মাত্রাটা ছিলো সবচেয়ে তীব্র ছিলো । ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নেপালের পোখারা থেকে ৮০ কিলোমিটার পূর্বে লামজুমে।
শনিবারের তীব্র এই ভূমিকম্প ছাড়াও আরো অনেকবারই এ বিশ্ব প্রাণঘাতি এমন দূর্যোগের সাক্ষি হয়েছে। ইতিহাস ঘেটে এমন ১০ টি সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্পের কথা পাঠকদের উদ্দেশ্যে দেয়া হলো।
চিলি, ১৯৬০
পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয়েছিলো চিলিতে ১৯৬০ সালে। এই পর্যন্ত রেকর্ডকৃত ভূমিকম্পের মধ্যে সবচেয়ে তীব্রতা সম্পন্ন এ ভূমিকম্পটি ছিলো ৯.৫ মাত্রার। এ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ১ হাজার ৬শ ৫৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিলো। সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়েছিলো এবং লক্ষাধিক মানুষ ঘড়হারা হয়েছিলো। উত্তর চিলিতে ৫৫০ মিলিয়ন ইউএসডলার ক্ষতির শিকার হয়। এ ভূমিকম্পের ফলে সুনামির সৃষ্টি হয়েছিলো যাতে হাওয়াইতে ৬১ জন, জাপানে ১৩৮ জন, এবং ফিলিপাইনে ৩২ জনের মৃত্যু ঘটেছিলো।
আলাস্কা, ১৯৬৪
আলাস্কার প্রিন্স উইলিয়াম সাউন্ডে ১৯৬৪ সালে আঘাত হানা তীব্রতার দিক থেকে দ্বিতীয় এই ভূমিকম্পটি ছিলো ৯.২ মাত্রার। এ ভূমিকম্পে এবং এর ফলে সৃষ্ট সুনামিতে ১২৮ জন প্রাণ হারায় এবং ৩১১ মিলিয়ন ইউএস ডলার মূল্যের ক্ষতি হয়। ৩ মিনিট ব্যাপি এ কম্পনের ফলে বিভিন্ন শহরে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়।
উত্তর সুমাত্রা, ২০০৪
উত্তর সুমাত্রার পশ্চিম উপকূলে ২০০৪ সালে আঘাত হানা ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্পে ২ লাখ ২৭ হাজার ৮শ ৯৮ জন মানুষ নিহত হয় এবং ১.৭ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুহারা হয়। এর ফলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব আফ্রিকার ১৪ টি দেশে সুনামি আঘাত হানে। সুনামির ফলে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। যদিও কোন পরিসংখ্যানে দেখানো হয় যে ২০১০ এর হাইতি ভূমিকম্পে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটে।
জাপান, ২০১১
জাপানের হনশুর পূর্ব উপকূলের কাছে ২০১১ সালে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। মার্চের ১১ তারিখে এ ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামিতে ২৯ হাজার মানুয়ের প্রাণ হানি ঘটেছিলো। এতে করে কয়েকটি নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর ক্ষতিগ্রস্থ হয়। জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে তীব্রতা সম্পন্ন ছিলো এই ভূমিকম্প।
রাশিয়া, ১৯৫২
রাশিয়ার কামকাটকা উপদ্বীপে ১৯৫২ সালে বিশ্বের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। এর ফলে কোন হতাহতের ঘটনা না হলেও হাওয়াইতে ১ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ক্ষতির শিকার হয়। কামাকাটকায় অনেক সক্রিয় আগ্নেগিরি ছিলো এবং এখানে ১৯২৩ সালে ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাত হেনেছিলো।
চিলি, ২০১০
চিলির মাউলি উপকূলে ২০১০ সালে ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিলো। এই ভূমিকম্প এবং এর ফলে সৃষ্ট সুনামি যা চিলির কেন্দ্রে আঘাত হানে, এর ফলে কমপক্ষে ৫০০ মানুষ প্রাণ হারায় এবং ৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। কমপক্ষে ১০ লাখ ৮ হাজার মানুষ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মোট আর্থিক ক্ষতি নির্ণিত হয় ৩০ বিলিয়ন ইউএস ডলার।
ইকুয়েডর, ১৯০৬
ইকুয়েডর এবং কলম্বিয়ার উপকূলে ১৯০৬ সালে ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর ফলে সৃষ্ট সুনামিতে ৫শ থেকে ১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিলো। সেন্ট্রাল আফ্রিকার উপকূলে, এমনকি সান ফ্রান্সিসকো, এবং জাপানেও এই সুনামি ছড়িয়ে পড়ে।
আলাস্কা, ১৯৬৫
আলাস্কার রেট দ্বীপে ১৯৬৫ সালে ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর ফলে সৃষ্ট ৩০ ফুটেরও বেশি উচ্চতাসম্পন্ন সুনামি হয়েছিলো। তবে দূরবর্তী স্থানের জন্য এর ফলে ক্ষতির পরিমান অনেক কম ছিলো।
ইন্দোনেশিয়া, ২০০৫
ইন্দেনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রায় ২০০৫ সালে ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ১ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলো। আহত হয়েছিলো শতাধিক।
আসাম-তিব্বত, ১৯৫০
আসাম-তিব্বতে ১৯৫০ সালে ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ভারতের পূর্ব তিব্বত এবং আসামের কমপক্ষে ১ হাজার ৫শ মানুষ নিহত হয়েছিলো। এই ভূমিকম্প চিনের সিচুয়ান এবং ইউনান প্রদেশ এবং ভারতের কলকাতায় আঘাত হানে।