টাঙ্গাইলের সখীপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা একটি মামলা থানায় দায়েরের পর পুলিশ তিন ঘণ্টার মধ্যে আসামীসহ চার্জশীট (প্রতিবেদন) আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। এটিকে দেশের প্রথম থানায় কোনো মামলা রেকর্ডের পর পুলিশি তদন্ত শেষে আদালতে দ্রুততম প্রতিবেদন জমা বলে দাবী জেলা পুলিশ সুপারের।
জানা যায়, বুধবার (৯ জুন) দুপুর ১২টা পাঁচ মিনিটের সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সখীপুর থানার উপপরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ টাঙ্গাইল আদালতে ওই মামলার প্রতিবেদন জমা দেন। এর আগে ওই দিন সকাল ৯টা ৫ মিনিটে সখীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুমি আক্তার বাদী হয়ে তার স্বামী স্কুল শিক্ষক মিজানুর রহমান সবুজের (৩৮) নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা রেকর্ড হওয়ার আধাঘণ্টার মধ্যেই রুমি আক্তারের স্বামী মিজানুর রহমান সবুজকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার মিজানুর রহমান উপজেলার লাঙুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০১৩ সালের ১৫ নভেম্বর মিজানুর রহমানের সঙ্গে উপজেলার দাড়িয়াপুর গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নানের মেয়ে রুমির বিয়ে হয়। বিয়ের সময় রুমি আক্তারের বাবা মেয়েকে ৪ ভরি স্বর্ণালংকার দেন। বিয়ের পরের বছর মিজানুর একটি মোটরসাইকেল দাবি করেন। শ্বশুর জামাতাকে দেড় লাখ টাকার একটি মোটরসাইকেলও কিনে দেন। ২০১৭ সালে রুমির গর্ভে সন্তান আসে। আলট্রাসনোগ্রাম প্রতিবেদনে ‘কন্যা সন্তান’ জন্ম নেওয়ার খবরে তিনি অখুশি হন। তাই এক্ষেত্রেও ছেলে না হয়ে মেয়ে হওয়ার কারণে অস্ত্রোপচারের সব খরচ শ্বশুরের কাছে দাবি করেন ওই জামাতা। মেয়ের সুখের কথা ভেবে অস্ত্রোপচারের ২০ হাজার টাকাও পরিশোধ করেন রুমির বাবা। গত দুই বছর আগে চাকরিতে সমস্যার কথা বলে শ্বশুরের কাছ থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন মিজানুর।
রুমি জানান, গত চারমাস ধরে সে আরও দুই লাখ টাকা দাবি করে নির্যাতন করছেন। কয়েক মাস ধরে বাপের বাড়ি দিন কাটাচ্ছেন। মঙ্গলবার সকালে রুমি স্বামীর বাসায় গেলে তাকে মারধর করে। পরে রুমি সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। আজ সকালে রুমি আক্তার বাদী হয়ে স্বামীকে একমাত্র আসামি করে যৌতুক দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগে সখীপুর থানায় মামলা করলে পুলিশ মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক মিজানুরের বিরুদ্ধে তার বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে। মিজানুর রহমান সবুজকে সমিতি থেকে বরখাস্ত করা হবে।
সখীপুর থানার উপদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ বলেন, মামলাটি সকাল নয়টা পাঁচ মিনিটে থানায় রেকর্ড হয়। রেকর্ডের ৩৫ মিনিট পর আসামিকে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পাঁচজনের সাক্ষ্য গ্রহণ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা সনদ গ্রহণ (এমসি), উর্ধ্বতন কর্মকর্তার ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ মামলার সব কার্যক্রম শেষ করে বেলা ১২টা পাঁচ মিনিটে আসামীসহ টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বিশেষ এই কাজে তাকে সহায়তা করেছেন সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে সাইদুল হক।
সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে সাইদুল হক বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম পুলিশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় এত দ্রুত চার্জশীট আদালতে জমা দিয়েছে। এর আগে থানায় মামলা রেকর্ড হওয়ার পুলিশ সুপারের ‘এমি’ পাওয়ার পরই পুলিশের দু’টি টিম মাঠে কাজ শুরু করে। সাধারণত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার চার্জশীট আদালতে পাঠানোর আগে পুলিশ সুপারের অনুমোদন লাগে। কিন্তু এই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামী গ্রেপ্তার ও হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সহায়তায় দ্রুত মেডিকেল রিপোর্ট পাওয়ায় তদন্ত শেষে তিন ঘণ্টার মধ্যে আদালতে চার্জশীট প্রেরণ করা সম্ভব হয়েছে। এটিই বাংলাদেশে প্রথম ঘটনা।
জেলা পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান, পুলিশ থানায় মামলা রেকর্ডের তিন ঘণ্টার মধ্যে আদালতে চার্জশীট প্রেরণ করতে সক্ষম হয়েছে। ইচ্ছে করলেই পারা যায়। বাংলাদেশে এটাই প্রথম ঘটনা।