ব্যক্তিগত অনুশীলন, দলীয় অনুশীলন, ম্যাচ অনুশীলন। বেশ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে তামিম-মুশফিকরা পেতে যাচ্ছেন সত্যিকার ক্রিকেটের স্বাদ। ত্রিদলীয় ওয়ানডে টুর্নামেন্ট বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরছেন দেশের শীর্ষ ক্রিকেটাররা। শিরোপায় চোখ রেখে রোববার দুপুর দেড়টায় আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে লড়বেন মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকরা।
করোনাভাইরাসের কারণে অন্ধকারে চলে গিয়েছিল দেশের ক্রিকেট। ব্যাট-বলের লড়াইয়ে হোম অব ক্রিকেট এবার আলোকিত হওয়ার অপেক্ষায়। সর্বশেষ ১১ মার্চ জ্বলেছিল শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট। ঠিক সাত মাস পর আলোর ঝলকানি দেখা যাবে মাঠে।
তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নাজমুল হোসেন শান্ত। তিন দলের তিন অধিনায়ক শনিবার সোনারগাঁও হোটেলে ট্রফি উন্মোচনে অংশ নেন। আনুষ্ঠানিকতা সেরে জানান, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই মাঠে লড়বেন তারা।
অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেলে প্রতিটি দলই ভারসাম্যপূর্ণ। নিজেদের মধ্যে খেলা হলেও তীব্র প্রতিদ্বন্দিতার আশা করছেন জাতীয় দলের নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল, ‘আমরা অনেক দিন পর প্রতিযোগিতামূল ক্রিকেটে আসছি। একটা প্রতিদ্বন্দিতামূলক আসর হবে। প্রায় ৫০-৬০ জন ক্রিকেটার আমরা এই টুর্নামেন্টটা খেলবো। জাস্ট ক্রিকেটে ফিরে আসছি এই চিন্তা না করে আমার কাছে মনে হয় ব্যক্তিগতভাবে অনেক কিছু পেতে পারি।’
‘কেউ যদি ভালো ব্যাটিং করে, ভালো একটি বোলিং পারফরম্যান্স করে। তার জন্য জাতীয় দলের দরজা খুলে যেতে পারে। এমন কোনো তরুণ খেলোয়াড় যদি থাকে… অথবা তাদের নিয়ে চিন্তা করতে পারে। এটা একটা সুযোগ সবার জন্য। এই টুর্নামেন্টে পারফর্ম করে ভালো করে নিজের জায়গাটা তৈরি করে নেওয়ার। আমার কাছে মনে হয় না যে কেউ এটাকে সাধারণ টুর্নামেন্ট বলে হিসেব করবে। আমরা যতটুকু জাতীয় দলে বাংলাদেশের হয়ে ম্যাচ খেলার সময় সিরিয়াস থাকি ওই লেভেলের প্রতিদ্বন্দিতামূলক ব্যাপার থাকবে।’
‘অবশ্যই তাই (শিরোপা জয়) চেষ্টা করবো। যেহেতু টুর্নামেন্টে আমরা একটা টিম। চ্যাম্পিয়ন হওয়ারই আমাদের চিন্তা। চ্যাম্পিয়ন হওয়াই আমাদের ইচ্ছা। ইচ্ছা তো সবারই থাকবে। দিন শেষে যে ভালো খেলবে সেই শিরোপা পাবে’-বলেন তামিম।
করোনা বিরতি কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দিয়ে টাইগারদের ফেরার কথা ছিল মাঠে। কিন্তু কোয়ারেন্টিন ইস্যুতে শ্রীলঙ্কা সফর স্থগিত হওয়ায় সেটি হয়নি। তবে ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরার অপেক্ষা খুব দীর্ঘ হচ্ছে না। ঘরোয়া আয়োজনের জন্য মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ক্রিকেট বোর্ডের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। জানালেন ক্রিকেটাররা সবাই মুখিয়ে আছেন টুর্নামেন্ট খেলতে।’
‘ভালো লাগছে। কারণ মাঠের মানুষ আমরা, মাঠে ফিরছি। এতদিন অনুশীলন করছিলাম। ওটার একটা আনন্দদায়ক ব্যাপার ছিল। এখন প্রতিযোগিতামূলক খেলা চালু হচ্ছে, তো খুবই ভালো লাগছে। দিনশেষ এটাই আমাদের কাজ, ভালোবাসার জায়গা। তো সে দিক থেকে ভালো লাগছে।’
‘প্রত্যাশা অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। তার চেয়েও এটা ব্যাপার যারা প্রমিসিং ও অভিজ্ঞতার দিক থেকে সেরারাই খেলছে। এটা আমাদের নিজেদের ভেতরে ভালো একটা প্রতিযোগিতা। প্রমাণ করার মঞ্চও। অনেক দিন পর যেহেতু আমরা মাঠে নামছি। সবার ভেতর একটা কৌতুহল, উদ্দীপনা কাজ করবে।’
‘দল খুব ভালো হয়েছে টপঅর্ডার টু লেট মিডলঅর্ডার। স্পিনিং সাইড, পেস বোলিং ইউনিটও খুব ভালো। সবমিলিয়ে খুবই ভারসাম্যপূর্ণ সাইড। আমার কাছে মন হয় যে এটা খুবই ভালো একটা উদ্যোগ এবং এজন্য বিসিবিকে ধন্যবাদ। আমার মনে হয় এটা খুবই ভালো একটা টুর্নামেন্ট হবে। আমরা সবাই মুখিয়ে আছি সব খেলোয়াড়রা, উদগ্রীব টুর্নামেন্টটা খেলার জন্য’-বলেন মাহমুদউল্লাহ।
সিনিয়র দুই অধিনায়কের চেয়ে একটু বেশিই আত্মবিশ্বাসী শান্ত। মুশফিকুর রহিমের মতো একজন ব্যাটসম্যানকে দলে পাওয়ায় বাড়তি ভালো লাগা তার। তরুণ খেলোয়াড় বেশি থাকায় দলের ফিল্ডিং নিয়ে নির্ভার শান্ত।
‘অবশ্যই ভালো লাগছে। কখনোই তো এরকম হয়নি এতদিন মাঠের বাইরে ছিলাম। কিন্তু মাঠে এরকম একটা সিরিজ শুরু হচ্ছে তো অবশ্যই অনেক রোমাঞ্চিত। আশা করছি খুব ভালো একটা সিরিজই হবে।
‘যদি দেখেন প্রত্যেকটা টিমই ভালো। প্রত্যাশা অনেক হাই, আমাদের যে টিমটা হয়েছে অবশ্যই আমাদের আমাদের পরিকল্পনা থাকবে চ্যাম্পিয়নশিপের জন্যই খেলার। আশা করছি যদি ন্যাচারাল গেমটা আমরা খেলতে পারি ভালো কিছুই হবে।’
‘সব মিলিয়ে খুব ভালো একটা সাইড আমি মনে করি। তিনটা দলই খুব ভালো হয়েছে তবে আমাদের পজিটিভ দিক যেটা মনে করি, ফিল্ডিং সাইডটা খুবই ভালো আমাদের। সাথে বোলিং-ব্যাটিং তো আছেই। আমাদের পজিটিভ যেটা থাকবে তরুণ খেলোয়াড় খুব বেশি। তো আমাদের ফিল্ডিং সাইডটা খুব ভালো। আশা করি তিন বিভাগেই ভালো কিছু হবে।’
মুশফিককে এই দলের অধিনায়ক করতে চেয়েছিল বিসিবি। কিন্তু দায়িত্ব রাজি না হওয়ায় শান্তর কাঁধেই পড়েছে দলকে পরিচালনা করার ভার। মি. ডিপেন্ডেবলকে পেয়ে ব্যাটিং নিয়ে চিন্তামুক্ত তরুণ অধিনায়ক, ‘এটা তো অনেক বড় একটা ব্যাপার। আমরা তো জানি উনি টিমের জন্য কতটা প্রভাব ফেলতে পারেন। উনার কাছ থেকে অনেক বড় কিছু আশা করছি। আমরা সবাই জানি উনি ওনার খেলার প্রতি কতটা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আশা করছি বড় কিছু হবে।’
দেশের শীর্ষ ক্রিকেটার ছাড়াও অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে আসা দলের একঝাক তরুণ পাচ্ছেন ওয়ানডে টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ। টাইগার যুবাদের অধিনায়ক আকবর আলী, পারভেজ হোসেন ইমন, শরিফুল ইসলাম, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, তৌহিদ হৃদয়, শাহাদাত হোসেন দীপু, রাকিবুল হাসান, মাহমুদুল হাসান জয় আছেন মূল স্কোয়াডে।
সব ম্যাচই বিসিবির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ www.facebook.com/bcbtigercricket থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। বাংলাদেশ বেতারে শোনা যাবে ধারাবিবরণী। করোনা পরিস্থিতির কারণে মাঠে সাধারণ দর্শকের প্রবেশাধিকার রাখা হয়নি।
মাহমুদউল্লাহ একাদশ: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), নাঈম শেখ, লিটন দাস, মুমিনুল হক, মাহমুদুল হাসান, নুরুল হাসান সোহান, সাব্বির রহমান, ইমরুল কায়েস, হাসান মাহমুদ, ইবাদত হোসেন, রুবেল হোসেন, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, মেহেদী হাসান মিরাজ, রকিবুল হাসান, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।
নাজমুল একাদশ: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, সাইফ হাসান, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মুশফিকুর রহিম, তৌহিদ হৃদয়, ইরফান শুক্কুর, পারভেজ হোসেন ইমন, তাসকিন আহমেদ, আল-আমিন হোসেন, আবু জায়েদ রাহি, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ, নাসুম আহমেদ, রিশাদ হোসেন।
তামিম একাদশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মো: মিঠুন, শাহাদাত হোসেন দীপু, ইয়াসির আলি চৌধুরী, এনামুল হক বিজয়, মো: সাইফউদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, শেখ মেহেদী হাসান, তাইজুল ইসলাম, মিনহাজুল আবেদীন আফ্রিদি।