প্রথম দিনে একটি সেঞ্চুরি, দুটি ফিফটি আর ছোট-মাঝারি কয়েকটি ইনিংসে প্রস্তুতি সেরেছেন ব্যাটসম্যানরা। পরের দিন আলো ছড়ালেন তাসকিন-মোস্তাফিজ। দুজনে মিলে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে মূল লড়াইয়ে জুটি বাঁধতে ভরসা দিলেন। তবে শ্রীলঙ্কার স্পিন পিচে ঘূর্ণিতে তোপ দাগার কথা যাদের, সেই স্পিনারদের নিষ্প্রভ থাকার দুশ্চিন্তা নিয়েই প্রস্তুতি পর্ব সারল মুশফিকুর রহিমের দল।
মোরাতুয়ার ডি জয়সা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের বিপক্ষে দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। দুদল দুদিনে ৯০ ওভার করে ব্যাটিং করেছে। উইকেট পড়েছে ৭টি করে। তবে লঙ্কানরা রান তুলেছে ১২টি বেশি।
স্বাগতিকদের চারশো পেরোনো এই সংগ্রহে উইকেটে জমে গিয়েছিলেন দিনেশ চান্ডিমাল। ম্যাচে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব সামলানো এই তারকার ব্যাট থেকে এসেছে অপরাজিত ১৯০ রানের একটি নয়নাভিরাম ইনিংস। ২১ চার আর ৭ ছয়ে ২৫৩ বলে সাজিয়েছেন ঝলমলে ইনিংসটি। বাকিদের মধ্যে চামিকা করুনারত্নেই (৫০*) কেবল ফিফটি ছুঁতে পেরেছেন।
শুক্রবার চান্ডিমালের ইনিংসটি ছাড়া বাকি অংশে টাইগার বোলারদের জ্বলা-নেভার গল্প। তাতে জ্বললেন তাসকিন-মোস্তাফিজ। আর নিভলেন সাকিব-তাইজুল-মিরাজরা। প্রস্তুতি শেষে সেটাই বরং একটু ভাবাতে পারে টিম ম্যানেজম্যান্টকে।
মিরাজ তাও ১৩ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৬৮ রানে একটি উইকেট তুলে নিয়েছেন। সাকিব সেখানে ১১ ওভারে ৪৯ রান আর তাইজুল ১২ ওভারে ৭৯ রান খরচ করে উইকেট শূন্য। তবে একাদশে বাড়তি একজন বোলার হওয়ার আশ্বাস দিয়ে সৌম্য ১৩ ওভার বল করলেন। ৫৩ রানে একটি উইকেটও তুলে নিয়েছেন তামিমের উদ্বোধনী সঙ্গী।
তবে দিনটি ভলোভাবেই ছিল পেসারদের। শুরুতে দুই উইকেটসহ ৩টি উইকেট তাসকিনের। দারুণ বল করা মোস্তাফিজের দুটি। দুজনে বল করেছেন যথাক্রমে ১১ ও ১২ ওভার করে। গতির ঝড় তোলা তাসকিন স্পিন-ট্র্যাকেও সুবিধা তুলে নিতে পারেন, সেটা টাইগার শিবিরের জন্য বাড়তি স্বস্তিদায়কই। তারচেয়েও বেশি স্বস্তিদায়ক অবশ্য মোস্তাফিজকে স্বরূপে বল করতে দেখা।
তাসকিন নিজের তৃতীয় ওভারে জোড়া উইকেটের দেখা পান। ফার্নান্দোকে অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন। একই ওভারের পঞ্চম বলে ফের আঘাত হানেন সামারাসুরিয়াকে শূন্য রানে বিদায় করে। পরে রোশেন সিলভাকে লিটন দাশের গ্লাভসে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন।
সিলভার ক্যাচটি ছাড়াও ইনিংসে আরো একটি ডিসমিসাল করেছেন লিটন। মিরাজের বলে আরেক সিলভাকে স্টাম্পিং করেছেন দুর্দান্ত ক্ষীপ্রতায়। মুশফিকের হাত থেকে কিপিংগ্লাভস কেড়ে নিয়ে তার হাতে তুলে দেওয়ার মহড়া ছিল প্রস্তুতি ম্যাচ। তাতে ভালোভাবেই উতরে গেলেন এই তরুণ। ব্যাট হাতে অপরাজিত ফিফটি করে ভরসার প্রতিদান তো দিয়ে রেখেছেন প্রথম দিনেই।
অন্যদিকে মোস্তাফিজ ছিলেন নিজের মতই। প্রথম ওভারেই উইকেট পেতে পেতে পাননি! চন্দ্রগুপ্তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে আসা বল তৃতীয় স্লিপের পাশ দিয়ে সীমানা পেরিয়ে যায়। পরের ওভারেও ব্যাটসম্যানের ব্যাটের কানার পরীক্ষা নিয়ে ভাগ্যের ছোঁয়া পাননি।
মোস্তাফিজ দমে যাননি। স্বাভাবিক গতি আর সুইংয়ে ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষায় ফেলে গেছেন। বাঁহাতি পেসার প্রথম সাফল্যটি পান দ্বিতীয় স্পেলে। প্রথম উইকেটটি স্লোয়ারে। অফস্টাম্পের সামান্য বাইরের স্লোয়ারে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন ব্যাটসম্যান চন্দ্রগুপ্তা। পরে লিও ফ্র্যন্সিসকোকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেছেন। ১২ ওভারে ২৮ রানে দুই উইকেটের সঙ্গে চারটি মেডেন। সঙ্গে কাটার মাস্টারকে স্বরূপে পাওয়ার ভরসা!
কাঁধে অস্ত্রোপচারের পর নিউজিল্যান্ড সফরে ফিরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না। টেস্ট তো খেলেনইনি। ২১ বছর বয়সী পেসার ঘরোয়া লিগ বিসিএলের দুটি রাউন্ডে ছন্দে বল করেছেন। এবার শ্রীলঙ্কায় ভরসা মেলাটা তো শুভ কিছুর বার্তাই দেয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার ৭ উইকেটে ৩৯১ রান তোলে বাংলাদেশ। তামিম ৯ চার ৭ ছয়ে ১৩৬ রান করে স্বেচ্ছা অবসর নেন। বড় ইনিংস খেলার প্রস্তুতিটা সেরেছেন মুমিনুল হকও। ১০৩ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে অবসরে যান তিনিও। আসল লড়াইয়ে মাঠে নামার অপেক্ষায় থাকা লিটন দাস ৫৭ রানে অপরাজিত থেকে ঝালিয়ে নিয়েছেন। যার ৪০ রানই নিয়েছেন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে।
অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে কিছুটা নড়বড়ে মনে হয়েছে। ৩৭ বল খেলে ২১ রানের মাথায় এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়েন। সাকিবও এলবি হয়ে ফিরে যান ৩০ রানে। রিয়াদের প্রস্তুতিটা সেখানে মুশফিক-সাকিবের তুলনায় ভালোই হয়েছে। ৭৩ বল খেলে ৪৩ রান করে করুনারত্নের বলে কাটা পড়েন। প্রতিটি শটে ছন্দে ফেরার আভাস ছিল তার।
সব মিলিয়ে স্পিনে দুশ্চিন্তার পিঠে বাকি সব বিভাগে প্রস্তুতিটা ভালোই হলো বাংলাদেশের। এখন মূল মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরার পালা। আগামী ৭ মার্চ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নামবে বাংলাদেশ।