নারী শিক্ষার্থীদের ওপর তালেবানের চাপিয়ে দেওয়া পোশাকরীতির বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের নারীরা এক প্রচারণা শুরু করেছে।
নারীদের বিরুদ্ধে তালেবানের কঠোর আইনের প্রতিবাদস্বরূপ আফগান নারীরা রঙিন ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নিজেদের ছবি শেয়ার করছেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ডুনটটাচমাইক্লদস এবং আফগানকালচার হ্যাশট্যাগ দিয়ে এসব ছবি শেয়ার করছেন তারা। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য তালেবানের নির্ধারণ করে দেওয়া রক্ষণশীল পোশাক যে ঐতিহ্যবাহী পোশাকের থেকে অনেক অনেক দূরবর্তী তাই তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে এই প্রচারণায়।
ক্ষমতায় ফিরে তালেবানরা কলেজ ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া নারীদের জন্য নতুন পোশাকরীতি ঘোষণা করেছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর তালেবান পরিচালিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্যমতে, নারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মীদের অবশ্যই আবায়া এবং নিকাব পরতে হবে যেটা তাদের চুল, শরীর এবং মুখের বেশিরভাগ অংশ ঢেকে রাখবে। সেসব পোশাক অবশ্যই কালো রঙের হতে হবে এবং হাত ঢেকে রাখার জন্য গ্লভস পরতে হবে।
কাবুল ইউনিভার্সিটিতে তালেবানরাও একটি র্যালির আয়োজন করে, সেখানে পুরো কালো পোশাকে মুখ ঢেকে ৩০০ নারী অংশ নেয়। সেসব নারীরা ঘোষণা করে, তারা এই দলটিকে সমর্থন করে এবং সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নারীদের সরিয়ে দেওয়াতেও সমর্থন জানায় তারা।
এই প্রচারণার প্রতিষ্ঠাতা এবং আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ইন আফগানিস্তানের ইতিহাসের অধ্যাপক ড. বাহার জালালি বলেন, আমি বিশ্বকে জানাতে চাই যে, আপনারা যে পোশাক (তালেবানপন্থীদের র্যালিতে) গণমাধ্যমে দেখছেন, সেটা আমাদের সংস্কৃতি নয়, সেটা আমাদের পরিচয় নয়।
সবুজ পোশাকে নিজের একটি ছবি দিয়ে টুইটারে তিনি লিখেন, এটা আমাদের সংস্কৃতি। আমি এতিহ্যবাহী আফগান পোশাক পরে আছি।
আফগানিস্তানের পরিচিতি ও সার্বভৌমত্ব আক্রমণের মুখে পড়ায় এই প্রচারণা শুরু করেছেন বলে জানান জালালি।
এরপরই তার সাথে এই প্রচারণায় যোগ দেন আরও অনেকে। তারাও ঐতিহ্যবাহী আফগান পোশাক পরা নিজেদের ছবি শেয়ার করছেন সবার সাথে।
যদিও আফগানিস্তানের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পোশাক রয়েছে। কিন্তু সবগুলোই উজ্জ্বল রঙের, এমব্রয়ডারি ও মিরর ওয়ার্ক করা।
এর আগে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সালে ক্ষমতায় থাকার সময়ও তালেবানরা নারীদের সব ধরনের কাজ থেকে বিরত করেছিলো। কোনো পুরুষ স্বজন ছাড়া তারা ঘরের বাইরে যেতে পারতো না এবং জনসমাগমে পুরো শরীর ঢাকা বোরকা পরতে বাধ্য করা হতো।
তালেবান এবার মধ্যপন্থী ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করছে, কিন্তু সম্প্রতি এটি দেশের নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে প্রতিস্থাপন করেছে।
২০ বছর পর আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার সাথে সাথেই সেখানে অস্থিরতা তৈরি হয়। গত ১৫ আগস্ট পুরোপুরি দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবানরা।
সবার আশঙ্কা, ২০০১ সালে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে আফগানিস্তানে যেসব মানবাধিকার অর্জন করা গিয়েছিল এখন তা আবার হারিয়ে যাবে।