সদ্য প্রয়াত খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক আজিজুর রহমানের পাঁচটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন চিত্রনায়িকা অঞ্জনা। এরমধ্যে ‘অশিক্ষিত’, ‘মেহমান’ ও ‘ফুলেশ্বরী’ এই তিনটি ছবি ব্যাপকভাবে সাফল্য পেয়েছিল। পরবর্তীতে নায়িকা হিসেবে অঞ্জনাও প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন।
আজিজুর রহমান পরিচালিত কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘ছুটির ঘণ্টা’-তেও কাজের কথা ছিল অঞ্জনার। তবে বিশেষ কারণে সেটি আর করতে পারেননি বলে জানান তিনি। অঞ্জনার কথা, ‘ছুটির ঘণ্টা’ করতে না পারলেও অন্য ছবিগুলো করেছি।
‘অশিক্ষিত’, ‘মেহমান’ ও ‘ফুলেশ্বরী’ ছবি তিনটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকায় আজিজুর রহমানের স্নেহভাজন হয়েছিলেন অঞ্জনা। সোমবার রাতে কানাডার টরেন্টোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই নির্মাতা পাড়ি জমান অনন্তলোকে।
রাতেই প্রিয় পরিচালকের মৃত্যু সংবাদ শুনে ‘সারারাত কেঁদেছেন’ বলে জানিয়েছেন অঞ্জনা। মঙ্গলবার বিকেলে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে অঞ্জনা বলেন, তাঁর মৃত্যু সংবাদ জানার পর থেকে সারারাত কেঁদেছি। একে একে গুণী, লিজেন্ড মানুষগুলোকে হারিয়ে ফেলছি। সবাইকে চলে যেতে হবে। তবে এই চলে যাওয়াটা মেনে নিতে ভীষণ কষ্ট হয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে অঞ্জনা বলেন, আজিজুর রহমান ভাইদের একটা গ্রুপ ছিল। উনিসহ দীলিপ বিশ্বাস, সত্য সাহা সবাই চলে গেছেন। আরও একজন আছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার সাহেব। তাদের প্রত্যেকের স্থান আমার কাছে অন্যরকম। একেবারে ধরে ধরে তাদের থেকে কতকিছু শিখছি। তারাই আমার পথপ্রদর্শক ছিলেন।
আজিজুর রহমানের সঙ্গে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অঞ্জনা বলেন, একসঙ্গে কাজ করতে গিয়েও তাকে কখনও চড়াও হতে বা রাগতে দেখিনি। কথার মধ্যে সবসময় মিষ্টি করে ‘স্টুপিড’ বলতেন। তবে আমাকে কখনও বলেননি।
অঞ্জনা মনে করেন, তার ক্যারিয়ারে সামনে এগুতে আজিজুর রহমানের নির্দেশনায় চলচ্চিত্র করা অনেক বড় ভূমিকা রেখেছিল।
বিশেষ করে আজিজুর রহমানের ছবির গান ‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে’ এবং ‘আমি যেমন আছি তেমন রবো বউ হবো না রে’ গান দুটি এখনও মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। পর্দায় দুটি গানেই পারফর্ম করেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী অঞ্জনা।
অঞ্জনা বলেন, চলচ্চিত্রগুলো সুপারহিট হওয়ার পাশাপাশি এই গান দুটোর জন্য আমি চলচ্চিত্রে তখন একেবারে সামনে সারিতে উঠে আসি। তার অবদান আমি কখনই ভুলতে পারবো না। আজিজুর রহমান যেমন চমৎকার মানসিকতার ব্যক্তি ছিলেন, তার কাজগুলো তেমন গোছানো ছিল। তিনি যেটা ভাবতেন সেটাই স্ক্রিনে তুলে আনতেন।শিল্পীদের সঠিকভাবে ব্যবহার করতেন। তার কাজগুলো সেই সাইন দেখায়। তার প্রতি দোয়া ভালোবাসা আমার সবসময় ছিল, আগামীতেও থাকবে।
দীর্ঘদিন যাবৎ শ্বাসকষ্ট ও বার্ধক্যজনিত রোগে ভুলছিলেন আজিজুর রহমান। জানা যায়, শেষ একবছর অক্সিজেন ছাড়া চলতে পারতেন না। ৫০টির অধিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন আজিজুর রহমান। শেষ দিকে তিনি ফেরদৌসকে নিয়ে ‘সাম্পানওয়ালা’ এবং শাকিব খানকে নিয়ে ‘ডাক্তারবাড়ি’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন।
প্রায় একযুগ ধরে কানাডায় তার দুই সন্তানের সাথে বসবাস করতেন আজিজুর রহমান। তার মরদেহ বগুড়ার শান্তাহারে তার পারিবারিক গোরস্থানে দাফন হবে জানা যায়। পারিবারিকভাবে আজিজুর রহমানের মরদেহ দেশের আনার প্রক্রিয়া চলছে।