সাংবাদিক কন্যা নূরজাহান বেগমের রক্তেই ছিলো সাংবাদিকতা। বাবা মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন ছিলেন সওগাত পত্রিকার সম্পাদক। তাই যেন সাংবাদিকতাকেই আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছিলেন তিনি।
নূরজাহান বেগমের জন্ম ১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুর জেলার চালিতাতলী গ্রামে। ভারত উপমহাদেশের প্রথম নারী সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘বেগম’র সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ৬০ বছর।
নূরজাহান বেগমের ছোটবেলাটা কাটে কলকাতায়। তার প্রথম স্কুল সাখাওয়াত মেমোরিয়াল বিদ্যালয়। সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর আই এ ভর্তি হন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। সেখানেই দর্শন, ইতিহাস ও ভূগোল বিষয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ১৯৪৪ সালে আই এ পাশ করে ১৯৪৬ সালে সেখান থেকেই বি এ ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৪৭ সালে তিনি হাত দেন বেগম পত্রিকার কাজে। বাবা মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিনের উদ্যোগেই প্রকাশিত হয় বেগম পত্রিকা। পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন দায়িত্ব পালন করেন সুফিয়া কামাল। বেগম পত্রিকার প্রথম চার মাস সম্পাদক হিসেবে এর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বেগমের শুরুর দিক থেকে নূরজাহান বেগম ছিলেন বেগমের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। সেই শুরু তার বেগমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা।
রোকনুজ্জামান খান যিনি সাহিত্য জগতে ‘দাদা ভাই’ নামেই পরিচিত। তাকে বিয়ে করে ১৯৫০ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন এই দম্পতি। লেখালেখির জগতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে তাদের ছবি আঁকতে, লিখতে উৎসাহ দিতেন নূরজাহান বেগম। যারা লেখা পাঠাত, তাদের ছবিও ছাপাতেন বেগম পত্রিকায়। এভাবেই শুরু হয় এদেশে নারী সাংবাদিকতার পথচলা।
ঢাকার শরৎ গুপ্ত রাস্তার ৩৮ নম্বর বাড়িতে বাস করতেন এবং এখান থেকেই বেগম পত্রিকার দেখভাল করতেন নূরজাহান বেগম। নারী জাগরণ, নতুন লেখক সৃষ্টি, সাহিত্য ও সৃজনশীলতায় নারীকে উৎসাহী করাই ছিল বেগম পত্রিকার মূল লক্ষ্য।
নূরজাহান বেগম অনেক সম্মাননা লাভ করেছেন তার জীবদ্দশায়। ১৯৯৬ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তিত্ত্ব হিসেবে নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠ চক্রের সন্মাননা লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার থেকে রোকেয়া পদক, ১৯৯৯ সালে গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি থেকে শুভেচ্ছা ক্রেস্ট, ২০০২ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৩ ও ২০০৫ সালে নারী পক্ষ দুর্বার নেটওয়ার্ক ও কন্যা শিশু দিবস উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে তিনি সংবর্ধনা লাভ করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, চট্রগ্রাম লেডিজ ক্লাব, চট্রগ্রাম লেখিকা সংঘ, ঢাকা লেডিজ ক্লাব, ঋষিজ শিল্প গোষ্ঠী, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র প্রভৃতি সংগঠনের কাছ থেকেও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। স্বর্ণপদক পেয়েছেন বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, লেখিকা সংঘ, কাজী জেবুনন্নেসা মাহাবুবুল্লাহ ট্রাষ্ট, বাংলাদেশ সাংবাদিক ফোরাম, রোটারি ক্লাব প্রভৃতি সংগঠন থেকে। ২০১০ সালে পত্রিকা শিল্পে তার অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক নারী সংগঠন ইনার হুইল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮ সম্মাননা পান বেগম সম্পাদক।
গৌরবমণ্ডিত এক জীবন পেরিয়ে ২০১৬ সালের ২৩মে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন মহিমান্বিত এই নারী।