চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘তার চেয়ে কিছু বই কিনতে চাই’

বাঙালির সপ্তম ঋতু (পর্ব-৮)

কুড়িগ্রামের রৌমারীর মোস্তাফিজ এবার মেলায় নিয়ে এসেছেন উপন্যাস। বহু চরিত্রের এক উপন্যাস। একদল বন্ধুসহ মেলায় ঢুকেছেন। আনন্দ নিয়ে ঘুরছেন। গতবারও মেলায় তার এই আনন্দবিচরণ ছিল। মেস্তাফিজ মেলায় আসেন সারা বছরের শক্তি নিতে। বইটি হাতে থাকে মাত্র। এর কাটতি পাঠকপ্রিয়তা কোনোকিছুতেই মনোযোগ থাকে না।

মোস্তাফিজের জীবনের গল্পটি অন্যরকম। অতিসাধারণ পরিবারের সন্তান তিনি। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকায় পড়তে এসে জীবনের এক নতুন পাঠ নিয়েছেন। থাকতেন এক মেসে। প্রতি মাসে মা বাবার কষ্টের টাকার জন্য অপেক্ষা করতে হতো। একদিন এক বাসার কেয়ারটেকারের পরামর্শে বাড়ি থেকে আর টাকা না আনার সিদ্ধান্তে নিলেন। সর্বশেষ মায়ের কাছ থেকে ফেরত দেবার শর্তে আনলেন ২৫ হাজার টাকা। তাতেই পাল্টে গেল জীবন। একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করলেন। বন্ধুদের নিয়ে মেস গড়ে তুললেন সেই ফ্ল্যাটে।

শুরুর গল্পটি চার বছরের। এর মধ্যে পাঁচটি মেসবাড়ির তত্ত্বাবধায়ক হয়েছেন মোস্তাফিজ। ৭০ জন শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা তার ব্যক্তিগত উদ্যোগের আওতায়। মেস্তাফিজ এখন ঢাকা শহরের একজন ক্ষুদে উদ্যোক্তা। স্বপ্ন দেখেন বড় একজন সমাজকর্মী হয়ে ওঠার।

মোস্তাফিজ প্রতি মাসের ২৭ তারিখ একটি বিশেষ আয়োজন করেন। নিজে হাতে বিরিয়ানি রান্না করে এই শহরের ছিন্নমুল বস্তিবাসীদের ঘরে পৌঁছে দেন। এখন প্রায় সত্তর আশি জন তার বিরিয়ানি খাওয়ার সুযোগ পায়। মোস্তাফিজের স্বপ্ন তার রান্না করা খাবার একসময় খাবে হাজার মানুষ। কোনো কোনো মাসে রান্না করা খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করে উঠতে পারেন না। সেই মাসে ৭০ টি টিশার্ট কিনে দরিদ্র রিক্সাওয়ালা এ ছিন্নমুল মানুষ দেখে দেখে গায়ে পরিয়ে দেন।

মোস্তাফিজ এখন অনেক সাহসী। দেখে মনে হয় সাহসের চর্চা করেন। প্রতিদিন বইমেলায় এসে ভীড়ের মধ্যে এ মাথা থেকে ও মাথা ঘোরেন। বলেন, বইমেলা মানুষের স্বপ্ন দেখার সাহস দেয়।

মোস্তাফিজ বড় এক স্বপ্ন রচনা করেছেন এবার। বাসার একটি কক্ষে তিনি পাঠাগার গড়ে তুলবেন। ওই পাঠাগারে প্রথম সদস্য হবেন তার মেস বাড়িতে বসবাসকারী ৭০ জন কলেজ শিক্ষার্থী। তাদের জন্য তিনি বেছে বেছে বই কিনবেন এবারের মেলা থেকে।

পোশাকে আধুনিক পরিপাটি মোস্তাফিজ একটা ভাঙা মোবাইল ব্যবহার করেন। জিজ্ঞেস করেছিলাম দামী একটা স্মার্ট ফোন নেই কেন? বলছিলেন, অপচয় করতে চাই না। মোবাইলের বিনিয়োগটির কোনো ভবিষ্যৎ দেখি না। তার চেয়ে কিছু বই কিনতে চাই। এই বিনিয়োগের সুফল সুদূরপ্রসারি।