‘‘মনোনয়নের লোভ দেখিয়ে মা বোনদের ইজ্জত হরণ বন্ধ করুন। জনগণ জেগে উঠলে সমস্যা হবে৷ লন্ডন কিন্তু বেশি দুর না।’’ বিএনপি নেত্রী নিলুফার চৌধুরী মনি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই স্ট্যাটাস দিয়ে আলোচনার ঝড় তুলেছেন৷ সম্প্রতি তিনি অপহৃতও হন৷ সংবাদপত্রে খবর বেরোয় রাতে বাড়ি ফেরার পথে তার গতিরোধ করে কিছু লোক তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।
বিএনপির এই নেত্রীর ড্রাইভার বাড়ি গিয়ে তার পরিবারকে বলেন, তারা ম্যাডামকে গাড়ি থামিয়ে প্রশ্ন করেন, কেন তারেক ভাইয়ের বিপক্ষে ফেসবুকে লিখছে? তারপর তারা কালো মাইক্রোবাসে উঠতে বলে। ম্যাডাম উঠবে না বললে তারা বলেন, ভাইয়া লন্ডন থেকে স্কাইপিতে আপনার সাথে কথা বলবেন৷ ভাইয়া মানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অনুগতদের সাথে নিলুফার চৌধুরী মনি তখন যেতে বাধ্য হন৷
অতঃপর তিনি ড্রাইভারকে চলে যেতে বলেন৷ দণ্ডিত পলাতক আসামি তারেক রহমান দেশে না থেকেও বিএনপি, ২০ দল, ঐক্যফ্রন্টের রাজনীতির মূল নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছেন৷ খোদ বিএনপিতেই তার বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠছে৷ যে বিএনপি রাজপথে লড়াই করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে দীর্ঘসময় কেবলই ঘরোয়া বৈঠক ও সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়েই সময় পার করেছে৷ বিএনপি ও ২০ দল রাজপথে যাওয়ার কোন সাহসই পায়নি৷ সেই দলটির নেতাদের হঠাৎ মারমুখী হয়ে উঠতে দেখা যায় নিজ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলার মাধ্যমে৷
শুধু কি তাই বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপরেও হামলা চালিয়েছে তারা৷ এরপর বিএনপির নেতা-কর্মীরা দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে অপহরণ করলো নিজ দলের নেত্রী নিলুফার চৌধুরী মনিকে৷ দণ্ডিত তারেক রহমান কী দণ্ড দিতে চাচ্ছে বিএনপিকে, ২০ দলকে ও এ দেশের রাজনীতিকে? লন্ডনে রাজকীয় শান শওকত নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তিনি৷ বিএনপি নেতাকর্মীরাই বলছে মনোনয়ন বাণিজ্য করে এদেশ হতে কোটি কোটি টাকা তিনি লন্ডনে নিয়ে যাচ্ছেন৷
শুধু কি তাই কথা উঠছে মনোনয়ন প্রদানের মাধ্যমে নারীদের ইজ্জত হরণেরও৷ তারেক রহমান কি তবে হাওয়া ভবনকে লন্ডনে নিয়ে গেলেন? বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার বিশ্বস্ত কয়েকজন নেতার কথোপকথনের একটি ভিডিও শুনেছিলাম৷ এতে বেগম জিয়া সরকার বিরোধী আন্দোলন ও দলীয় নেতৃত্বের প্রশ্নে বলেছেন, এই মুহূর্তে তাদের আন্দোলন করার মত কোন অবস্থা নেই৷ আর নেতৃত্বের ব্যাপারে বলেছেন ছেলেও নেতৃত্ব চায় ও বউও চায়৷ তবে কি বেগম খালেদা জিয়া বাধ্য হয়ে পুত্র তারেক রহমানের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়েছেন? নইলে কেন দেশে এত এত নেতা উপস্থিত থাকতে অনুপস্থিত, ফেরারী ও দণ্ডিত ব্যক্তিটিকেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করতে হল?
বিএনপি ২০ দল নিয়ে রাজপথে মিছিল কিংবা কোথাও কোন সমাবেশের ডাক দিতে পারল না৷ অবশেষে গণফোরাম, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের কাঁধে ভর দিয়ে তারা সমাবেশ ও রাজপথমুখী হতে পারল৷ শুরুতে বিএনপির কেউ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র হতেও ভরসা পেলেন না৷ মুখপাত্র হয়ে গেলেন জাসদ নেতা আ স ম আব্দুর রব৷ যেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামে তারা রাজপথে ওঠার ও সমাবেশ করার সুযোগ পেয়ে গেল তখন বদলে গেলো মুখপাত্র৷ মুখপাত্র হয়ে গেলেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ দণ্ডিত খালেদা জিয়ার বদলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়ে গেলেন দণ্ডিত ও ফেরারী তারেক রহমান৷ ক্ষমতা থাকতে তারেক রহমানের হাওয়া ভবন বাংলাদেশের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতো৷ এবার ক্ষমতাবিহীন নির্বাসিত থেকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন বিএনপিকে, ২০ দলকে ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে৷ শোনা যাচ্ছে তারেক রহমান না বললে কেউ ধানের শীষ পাচ্ছে না৷ তবে কি তিনি ধান বেঁচেই তার নির্বাসিত জীবনের সারাজীবনের খোরাক মজবুত করতে চাচ্ছেন?
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ পেলেন না বেগম জিয়া, তারেক রহমান আর ধানের শীষ নিলেন না জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড.কামাল হোসেন৷ ধানের শীষ পেলেন বঙ্গবন্ধুর সৈনিক দাবীদার কাদের সিদ্দিকী, সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর তারা কি পারবেন জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু না বলে শহীদ জিয়া অমর হোক, খালেদা জিয়া জিন্দাবাদ বলতে? এ কথা বলতে পারবেন আ স ম আব্দুর রব, অধ্যাপক আবু সাইদ, রেজা কিবরিয়া, গোলাম মওলা রনি?আসলে বিএনপির এই হযবরল রাজনীতির ভবিষ্যত কী? ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেও কেউ কেউ নিজেদের বঙ্গবন্ধুর সৈনিক দাবী করছেন? এতদিন সরকার বিরোধিতায় চুপসে ছিল যে দলটি তারা এখন বিদ্রোহ করছে দলের বিরুদ্ধে৷ বিদ্রোহ করার সঙ্গত কারণও রয়েছে৷
২০০১ সাল থেকেই যশোর-৫ আসনে বিএনপি নিজের প্রার্থী না দিয়ে ছাড় দিয়ে আসছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের নেতা মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে। তবে এবার বিদ্রোহ করে বসেছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের পছন্দের দলের প্রার্থী না পেয়ে বিএনপি ছেড়ে দিলেন বিএনপির যশোরের মনিরামপুর শাখার নেতা-কর্মীরা। দলত্যাগীদের সংখ্যা ১০ হাজার৷ তবে এ সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে৷ মুফতি ওয়াক্কাস বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি নিয়ে এলাকায় গেলে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা হামলা করেছে তার গাড়িতে। আর অভিমানে বিএনপি থেকে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে। মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে চলেছেন। উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের সব নেতাকর্মীই পদত্যাগপত্রে সই করেছেন বলে জানা যায়। মনোনয়ন নিয়ে আরও অনেক জায়গায় বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে৷ যে নেতাকর্মীরা প্রতিপক্ষ সরকারের বিরুদ্ধে চুপ ছিল তারাই এবার সরব হয়ে উঠেছে নিজেদের বিরুদ্ধে৷
বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে এক হযবরল কাণ্ড৷ যারা এতদিন বিএনপির রাজনীতি করেছে তাদের অনেকেই ধানের শীষ পায়নি৷ পেয়ে যাচ্ছে গণফোরাম, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, জামাত, জাসদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ প্রভৃতি৷ তবে কি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জিয়ার জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের পরবর্তী সংস্করণ? জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের মধ্য দিয়েই বিএনপির সৃষ্টি হয়েছিল৷ বিএনপি কি তবে আবার উল্টো দিকে ঘুরলো? ধানের শীষ পাওয়ার জন্য কেউ গণফোরামে যোগ দিচ্ছে, কেউ জাসদ (রব), নাগরিক ঐক্য প্রভৃতিতে যোগ দিচ্ছে৷
জিয়ার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট বিলুপ্ত হয়ে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবার জিয়াপুত্র তারেক রহমানের নেতৃত্বে কি আবার তা হতে চলল? হাওয়া ভবনের ভাইয়া সেই ভবনের লন্ডনী সংস্করণে কোন খেলা খেলছে? বাংলাদেশে ধানের শীষ দিয়ে কত টাকা আয় করেছেন তিনি? বাংলাদেশের টাকা দিয়ে তিনি বাংলাদেশ বিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত নয়তো?
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রীর সুপারিশে তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেনকে মনোনয়ন দিয়েছেন বলে জানা গেছে৷ আর এতে মনোনয়ন বঞ্চিত হন দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন। এ নিয়ে মিলন সমর্থকদের মধ্যে চরম ক্ষুব্ধতার সৃষ্টি হয়। তারা বলছে, মালয়েশিয়া প্রবাসী ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন এলাকায় অপরিচিত। এলাকার রাজনীতিতে কখনো দেখা যায়নি তাকে। টাকার জোরে মনোনয়ন পেয়ে গেছেন তিনি৷
মনোনয়ন বঞ্চিত মিলনের সমর্থক ও নেতা-কর্মীরা দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর পরই তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় তারা মিলনের পক্ষে এবং দলীয় সিদ্ধান্তের বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। তারেক রহমান বাংলাদেশ হতে টাকা নিয়ে লন্ডনী হাওয়া ভবনে বসে কোন ভয়ংকর দুষ্টু বুদ্ধি আঁটছেন? আর এ নির্বাচনে তার কী লাভ? টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হয় প্রধানমন্ত্রী কি হয়? টেকনোক্র্যাট সংসদ সদস্য, সংসদ নেতা, উপনেতা কিংবা বিরোধী দলীয় নেতা কি হয়? এই সুযোগতো তার মাতা বেগম খালেদা জিয়ারও নেই৷ সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর পুত্র পরিচয়ের দাপটওতো তিনি দেখাতে পারছেন না? সুতরাং একাদশ সংসদ নির্বাচনে তার কি লাভ?
তবে কি তিনি নির্বাচন বর্জন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন? যদি তাই হয় এই বর্জনের কি অর্জন হবে তার? কি অর্জন হবে বিএনপির? ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সব জায়গাতেই বিএনপি নেতাদের দলত্যাগ শুরু হয়ে গেছে৷ বিএনপির আরেক নেতা খন্দকার মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে আইএস সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠছে৷ এসব কিসের আলামত? এসবের মূলে কি ভাইয়া তারেক রহমান নয়? একজন দণ্ডিত ব্যক্তি নিজে নির্বাচন করতে পারবেন না কিন্তু যারা নির্বাচন করবে তাদের ঠিক করতে পারবে এটা কেমন কথা হল? লন্ডনে তারেক রহমানের বাড়িটির প্রভাব কি এদেশীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের চেয়ে বেশী নয়?
বিএনপি নেতারা অনেক জায়গায় নির্বাচনী প্রচারে যেতে পারছে না৷ যেসব এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থীর অবস্থান সম্ভাবনাময় সেসব এলাকায় তারা মাইকিং করতে পারছে না, পোস্টার লাগাতে পারছে না, প্রার্থী ভোট চাইতে যেতে পারছে না৷ বিএনপি নেতারা সেসবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী না হয়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠছে নিজ দলের বিরুদ্ধে৷ এসব কিসের আলামত? বিএনপির এই ভাইয়া কানেকশন ও ভাইয়া কর্তৃক নানা অপতৎপরতা সরকার দলের এসব দমন পীড়ন কে কি জায়েজ করে দিচ্ছে না? তখন কি তারা মানুষকে বলবে না এই দেখো বিএনপির কাণ্ড দেখো!দেশকে রক্ষা করতে হলে এদেরকে নির্বাচনে পরাভূত করার বিকল্প নেই৷ তখন কি গণতন্ত্রের চরিত্র বলে কোনোকিছু থাকে? বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কি সেই চরিত্রহীনতাই হাতছানি দিয়ে ডাকছে না?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)