করোনার এই সময়টাতে নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। যারা দিন আনে দিন খায়, রিকশা চালিয়ে, ভ্যান চালিয়ে বা তরিতরকারি বিক্রি করে।
পুরো দেশ লকডাউন। মানুষের চলাচল বন্ধ। ঘরে বসে থেকে করোনাকে মোকাবেলা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে গণমাধ্যমে।
কিন্তু একজন রিকশাচালক ঘরে বসে থাকলে তার খাওয়াটা আসবে কোত্থেকে? একজন ভ্যানচালক ঘরে বসে থাকলে তার খাওয়াটা আসবে কোত্থেকে? অবশ্যই ঘরে থাকার পরামর্শ বৃহত্তর স্বার্থেই। কিন্তু ওইসব খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কথা কি ভাবা দরকার না?
এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কিছু কিছু সাহায্য দেয়া শুরু করেছে। কিন্তু সেই সাহায্য কজন খেটে খাওয়া মানুষের কাছে যাচ্ছে? সেটাও বিবেচ্য বিষয়।
তবে যারা এক টাকা সাহায্য দিয়ে দশ টাকা প্রচারের ধান্দায় থাকে তারাও সক্রিয় হয়ে উঠছে। ফেসবুকের কল্যাণে অনেকের চেহারাও দেখার সুযোগ হয়েছে। পত্রপত্রিকা আর টেলিভিশনের কিছু প্রতিবেদককে হাত করে ঢাকা শহরের অনেক নেতা-উপনেতা-পাতিনেতা নিজেদের চেহারা দেখানোর সুযোগ পেয়ে গেছে।
এর পাশাপাশি অনেক সামাজিক সংগঠনের মতো ভুঁইফোর সংগঠন ত্রাণ বিতরণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, তারা এই করেছে সেই করেছে- এ জাতীয় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের মানসিকতা কতটা নিচু পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে সবখানেই সুযোগ করে নিতে হবে। করোনার এই ক্রান্তিকালে সুবিধাবাদি শ্রেণি জেগে উঠেছে। কেউ দান করার আগে প্রচারকর্মীদের খবর দিচ্ছে- আমি বা আমরা আজ ওমুক জায়গায় দান করবো, ভাই সাংবাদিক পাঠান, ক্যামেরা পাঠান, আপনাদের পাওনাটা পেয়ে যাবেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত সাংবাদিক-ক্যামেরাম্যান না পৌঁছায় ততক্ষণ পর্যন্ত অসহায় মানুষগুলোকে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখে ওইসব ধান্দাবাজ নেতা আর সমাজকর্মীরা। আর তাদের এই সুযোগটা করে দিচ্ছে আবার কিছু কথিত গণমাধ্যমকর্মী।
আমাদের এই করোনাকালে যার যতটুকু সামর্থ আছে, তাই নিয়ে ওইসব সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ালে কিছুটা সমস্যা দূর হতে পারে। কোন নেতা কী দিলো, কোন মেয়র কী দিলো বা দেবে সেটা না ভেবে আসুন অল্প অল্প করে সাহায্যে এগিয়ে আসি। আপনি একজন রিকশাচালকের দায়িত্ব নেন। আরেকজন অন্য একজনের দায়িত্ব নেবে, তা হলেই দেখা যাবে একটা বড় অংশ এই করোনাকালে কোনোমতে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারবে। নইলে সমাজে হাহাকার তৈরি হতে পারে। সেই পরিস্থিতি তৈরির আগে আপনার পাশের কোনো অসহায় মানুষকে বাড়িয়ে দিন সাহায্যের হাত।
আর যাদের জীবনের লক্ষ্যই হচ্ছে-ধান্দাবাজি করে সাহায্য দেবার নাম করে নিজের প্রচার চালানো আর তাদেরকে সমাজে দানবীর হিসেবে দেখানোর দায়িত্ব নিয়ে টু-পাইস কামানো গণমাধ্যমকর্মীদের মনে মনে জানাই ধিক্।
করোনার এই ক্রান্তিকালে মানবিক মানুষ বড় প্রয়োজন। বিশ্বাস করি, দেশে অনেক মানবিক মানুষ আছে। তাদের কাছে অসহায় মানুষদের কথা বললে তারা এগিয়ে আসবেই।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)