চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

তাওয়া গরম, সুতরাং সাবধান!

দুই শিক্ষার্থীর করুণ মৃত্যুতে সহপাঠীদের আন্দোলনের সঙ্গে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা রাজপথে নেমেছে। কোমলমতি কিশোর-কিশোরীদের এই আন্দোলনে অভিভাবকসহ দেশের সচেতন মানুষ একাত্ম প্রকাশ করেছে। কোথায় নেই আন্দোলন?

ঘটনা রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে বা হোটেল র‌্যাডিসনের উল্টো দিকে। কিন্তু আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো রাজধানীসহ দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে। তার মানে, আন্দোলনের দাবি দাওয়া যৌক্তিক। তাতে একটুও অন্যায্য কিছু নেই।

শুধু দাবি দাওয়ার কথা বলেই ক্ষান্ত হয়নি কিশোর-কিশোরীরা। সেই সাথে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সমাজের কোথায় কোথায় ক্ষত আর পচন ধরেছে। দেখিয়ে দিয়েছে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের গাড়ির চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সেও ঝামেলা রয়েছে। পুলিশ যেখানে গাড়ির লাইসেন্স নিয়ে রাস্তাঘাটে ঝামেলার মাধ্যমে টু-পাইস কামানোর ধান্দা-ফিকির করে, সেই পুলিশের নিজের মোটর সাইকেলের কাগজপত্রেও ত্রুটি দৃশ্যমান হয়েছে।

কিশোরদের এই যে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া, এটাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কিন্তু তাদের এই আন্দোলনকে হাতিয়ার হিসেবে কেউ ব্যবহার করবে না বা করছে না-তা কী জোর দিয়ে বলা যায়? অশুভ শক্তি এটাকে পুঁজি করে সরকারকে একটু বেকায়দায় ফেলে দেবার চেষ্টা করবেই।

এই ধরনের চিন্তার উদয় ঘটার বেশ কিছু কারণও রয়েছে। ছাত্রদের আন্দোলন শুরু হয়েছে র‌্যাডিসন হোটেল সংলগ্ন এলাকা থেকে উত্তর দিকে বিশ্বরোড পর্যন্ত। দিন যেতে থাকলে সেটা আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে উত্তরা, মিরপুর, সায়েন্স ল্যবরেটরি, শাহবাগ, শনির আখড়া, মতিঝিলসহ দেশের বেশকিছু এলাকায়।

কিছু কিছু চেহারা দেখে মনে হয়েছে এরা কি আসলে ছাত্র? এরা কি সত্যি সহপাঠীর মৃত্যুতে শোকাহত? এদের ভেতরে যে জোশ দেখা গেছে তাতে মনে হয়েছে বিশেষ কোনো মহলের নির্দেশে ছাত্রদের উসকানি দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করা হচ্ছে। নৌ-মন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা আন্দোলন নাকি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার আন্দোলন, এটা বোঝা মুশকিল।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম, স্কুল-কলেজের ছাত্ররা তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে এতটা সোচ্চার হয়েছে। দেশের মানুষের চেতনায় বড় ধরণের ধাক্কা দিতে পেরেছে তারা। এটা গর্বের বিষয়। কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু যখন অভিযোগ শোনা যায়, অমুক জায়গায় আন্দোলনরত ছাত্রদের জন্য পানি এসেছে, তমুক জায়গায় বিরিয়ানির প্যাকেট এসেছে, তখন মনে হয়েছে বিষয়টা রাজনৈতিকীকরণ হয়ে গেল না তো!

একটা কথা চালু রয়েছে তাওয়া গরম থাকতে থাকতে রুটি ভেজে নিতে হয়। অর্থাৎ ছাত্ররা যখন ন্যায্য দাবি নিয়ে রাজপথ গরম করে রাষ্ট্রযন্ত্রের কয়েকটি স্থানের ক্ষত দেখিয়ে দিচ্ছে তখন সেই সুযোগে অশুভ মহল তাদের বানিয়ে রাখা রুটি গরম করে নিচ্ছে না তো!

সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে নিশ্চয়ই এর চেয়ে বেশি তথ্য অলরেডি চলে গেছে। কারণ মিডিয়ায় নানা বয়সের আন্দোলনরতদের চেহারা দেখা গেছে। তাদের মারমুখি আচরণ বলে দেয় তারা আর যাই হোক ওই কোমলমতি শিশু কিশোরদের সহপাঠী নয়। যে কিাশোররা হাসপাতালের রোগীর গাড়ি বা হজে যাওয়া ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের গাড়ি যাতে নির্বিঘ্নে যেতে পারে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। তারা কোনো গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়ার মানসিকতা নিয়ে রাজপথে নামেনি। সুন্দর অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে সড়ক অবরোধ করে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে। তারা পুলিশের গাড়ি দেখে ভদ্রভাবেই আংকেল সম্বোধন করে লাইসেন্স দেখতে চেয়েছে। গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চেয়েছে।

সব সময় অশুভ শক্তি চোখ-কান খোলা রাখে। কখন সুযোগ আসবে, ঠিক সময়মত পথে নেমে দেশকে অস্থির করে তোলা যাবে, সেই মোহে আবিষ্ট হয়ে থাকে।

সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তাই অনুরোধ, আন্দোলনরতদের সঙ্গে কারা কারা যোগ হয়ে যাচ্ছে, তাদের পরিচয় জেনে নেয়া, তাদের আসলে উদ্দেশ্যই বা কী? সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি দিলেই অনেক চেহারা বেরিয়ে আসবে। যারা চায় দেশটাকে অস্থির করে তুলতে। বিদেশিদের কাছে আমাদের মান মর্যাদা নষ্ট করে দিতে।

তাই রুটি ভাজার সুযোগ না দিয়ে তাদেরকে আইনের হাতে সোপর্দ করার উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ তা না হলে এই অশুভ মহল কখন কিশোরদের আন্দোলনের সময় ট্রাক উঠিয়ে দিয়ে বলবে সরকারের মদদে এটা করা হয়েছে। বা বোমা ফাটিয়ে সরকারের ওপর দোষ চাপিয়ে দেবে তারা। এর চেয়ে ভয়াবহ অবস্থারও সৃষ্টি করতে পারে এরা।

কোমলমতি এই কিশোরদের দাবি মেনে নিয়ে অশুভ শক্তির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে এই ক্রান্তিকালকে অতিক্রম করতে হবে। এরচেয়ে ভালো উপায় আর নেই।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)