বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের প্রথম নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীয় নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণপ্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ৪টায় যশোর ঈদগাঁ মাঠে জানাজা শেষে তাকে স্থানীয় কারবালা কবরস্থানে দাফন করা হবে।
জানাজার আগে দেয়া বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তরিকুল ইসলাম আমাদের মাঝ থেকে চলে গিয়ে আমাদেরকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছেন। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ও দলের কঠিন সময়ে তিনি চলে গেছেন। তার এই চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি।
তরিকুলের প্রতি স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তরিকুল ইসলাম দল ও দেশের কাজ করেছেন। খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য সংগ্রাম করেছেন। অন্যায়ের সাথে কখনো তিনি আপোস করেননি। ফলে দল হারালো উচ্চ মানের প্রজ্ঞাবান একজন নেতাকে। আর জাতি হারালো একজন জাতীয় নেতাকে।
এর আগে সকাল ৯ টা ৪০ মিনিটে লাশবাহী গাড়ীতে তরিকুল ইসলামের মরদেহ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আনা হয়। জানাজা শেষে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনগুলো শেষ শ্রদ্ধা জানান।
জানাজায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমদ আযম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নামাজে জানাজা পরিচালনা করেন ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হক।
রোববার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তরিকুল ইসলাম। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন।
রোববার সন্ধ্যায় তরিকুল ইসলামের মরদেহ তার ঢাকার শান্তিনগরের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্বজনরা দেখার পর রাতে বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয় মরদেহ।
তরিকুলের মৃত্যুতে সোমবার শোক পালন করছে বিএনপি। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী বিএনপির অফিসে দলীয় ও কালো পতাকা তোলা হয়েছে এবং নেতা-কর্মীদেরকে বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করতে দেখা গেছে।
যাশোর থেকে চার বার নির্বাচনে জিতে সংসদে যাওয়া তরিকুল চারদলীয় জোট সরকারের তথ্যমন্ত্রী এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে তিনি প্রথমে সমাজকল্যাণ এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে আসার আগে তিনি সহ-সভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।
১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর যশোরে জন্মগ্রহণ করেন তরিকুল। তার বাবা আব্দুল আজিজ একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তরিকুল ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পরও সক্রিয় ছিলেন বাম আন্দোলনে।
স্বাধীনতার পর মওলানা ভাসানীর দলে থাকা অবস্থায় ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের ডাকে বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন তরিকুল।
তরিকুল যশোর থেকে প্রকাশিত লোকসমাজ সংবাদপত্রের প্রকাশক ছিলেন। যশোর পৌরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি।