কুমিল্লায় হত্যার শিকার সোহাগী জাহান তনুর ভাই আনোয়ার হোসেনের বন্ধু মিজানুর রহমান সোহাগ (২০) নিখোঁজের ১৬ দিন পর বাড়ি ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
ভোর ৬টায় তাকে বাড়ির পাশের নাজিরাবাজারের সিএনজি স্টেশনের কাছে পাওয়া যায়।
মিজানের বোন খালেদা আক্তার জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে হাঁটতে বেরিয়ে কুমিল্লা সেনানিবাস সংলগ্ন নাজিরাবাজারের রাস্তার পাশে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন চাচা সেলিম মিয়া। তিনি মিজানকে বাড়ি নিয়ে আসেন।
তিনি জানান, মিজান কোথায় ছিলেন, কারা তাকে দিয়ে গেছে, তিনি কিছুই জানেন না। বাসায় নেয়ার পর কিছু জিজ্ঞেস করতেও মানা করছিলেন মিজান।
এরপর অবশ্য চ্যানেল আইয়ের সঙ্গে মিজান কথা বলেন। তবে এবারও একই কথা জানান তিনি। মিজান বলেন, গত ২৭ মার্চ রাতে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে তিনি ঘরে অনেক মানুষজন দেখতে পান। অন্যদের সঙ্গে নিজের বাবা ও বোনকেও দেখেন তিনি।
শুধু লুঙ্গি পরে শুয়ে ছিলেন মিজান। এতো মানুষ দেখে তিনি উঠে বসেন। ঘরে আসা অপরিচিত এক ব্যক্তি তাকে বলে, ‘চল, গেঞ্জি পর।’ লুঙ্গিটা ঠিক করে গেঞ্জি পরে মিজান তাদের সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন।
‘গেঞ্জি পরার পর আমাকে বাইরে নিয়ে এসে চোখ, হাত-পা বেঁধে ফেলে তারা। এমনভাবে বেঁধেছিলো, আমি মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম,’ চ্যানেল আইকে বলেন মিজান, ‘অনেক দিন পর সম্ভবত আমার জ্ঞান ফেরে। ততদিন চোখ আর হাত-পা বাঁধাই ছিলো। এখনো মনে হয় দাগ আছে,’ চোখের কাছে কপালের পাশটায় দেখান তিনি।
মিজানের পরিবার জানায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে কিছু লোক গত ২৭ মার্চ রাতে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার নারায়ণসার গ্রামের বাড়ি থেকে মিজানকে তুলে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি। তখন থেকেই অজানা আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছিল পরিবারের সদস্যরা।
মিজানের মা সাহিদা আক্তার ও তার বড় বোন খালেদা আক্তার কুমিল্লা প্রেস ক্লাবে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে ৩০ মার্চ এ ঘটনায় বুড়িচং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
জিডিতে বলা হয়, ২৭ মার্চ রাত একটায় সাদাপোশাকধারী লোক তিনটি মাইক্রোবাস নিয়ে এসে মিজানুর রহমানের (সোহাগ) বাড়িতে তল্লাশি চালায়। এ সময় মিজানুর রহমানকে নিয়ে চলে যায়। পরদিন পরিবারের সদস্যরা র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে তাঁর অবস্থান জানা যায়নি।
গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় তনুর মরদেহ পাওয়া যায়। তারপর ২৭ মার্চ থেকে নিখোঁজ ছিলেন আনোয়ারের বন্ধু মিজান।
মিজানের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, তনু হত্যার খবর টিভিতে দেখে তনুর ভাই আনোয়ার হোসেনকে ফোন দিয়েছিলেন মিজান। এরপর এলাকায় তনু হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ আন্দোলন করেন মিজান। এসব অভিযোগেই তার ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো বলে ধারণা নুরুল ইসলামের।