২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর পুরান ঢাকায় দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের যে ৮ জন নেতাকর্মীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন তার মধ্যে ৬ জনকে হাইকোের্ট রেহাই দিয়ে ৪ জনকে যাবজ্জীবন ও ২ জনকে খালাস দিয়েছেন । ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর ওই হত্যা মামলায় ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক। এরপর হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। সেই সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করে আসামিরা। আপিলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৮ জনের মধ্যে ২ জনের দণ্ড বহাল আছে, ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পেয়েছে ২ জন। আর ১৩ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ১১ জনের দণ্ড বহাল থাকলেও ২ জন খালাস পেয়েছে। আপিলের রায় আগে দণ্ডপ্রাপ্ত অনেকে খালাস ও দণ্ড কমে যাওয়াতে বিষ্ময় প্রকাশ করেছে বিশ্বজিৎ দাসের পরিবার। নিম্ন-আদালতের রায় বহাল না থাকায় শোকে দু:খে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে তাদের হতাশা প্রকাশ করেছেন। ২০১৩ সালের ৫ মার্চ পুলিশ ছাত্রলীগের ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল, তারপরে দীর্ঘসময় ধরে চলে তদন্ত। তদন্ত চলার সময় ও নিম্ন আদালতে রায়ের আগে পরে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের অনেকে পুলিশ দীর্ঘ সময় খুঁজে না পেলেও তাদেরকে প্রকাশ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় থাকার খবর প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। আজ রায় দেয়ার সময় এই আলোচিত হত্যা মামলার তদন্ত বিষয়ে গাফিলতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন মহামান্য আদালত। রায়ের পর গণমাধ্যমের সামনে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নজিবুর রহমান প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন। এছাড়া আসামীদের বয়স, তাদের ছাত্র পরিচয় ও সাক্ষ্য প্রমাণ বিবেচনায় এনে এ পরিবর্তিত রায় হয়েছে বলেও জানান তিনি। ঘটনা প্রবাহ, তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালাত তার নিজ ধারায় রায় দেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঘটনার তদন্তে যে গাফিলতির কথা আলোচিত হচ্ছে, তাতে আমরা উদ্বেগ জানাচ্ছি। এতে পুলিশ তথা তদন্তকারী সংস্থার উপরে জনগণের নেতিবাচক ধারণা হবে বলে আমাদের আশঙ্কা। ভবিষ্যতে এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যত্নবান, দায়িত্বশীল ও যথাযথ ভুমিকা পালন করবে বলে আমাদের আশাবাদ।