ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরি থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াত পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল মানববন্ধন করেছে।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে কটূক্তির অভিযোগে চাকরিচ্যুত ওই শিক্ষকের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ও টিএসসিতে সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৮ সালের ২৬ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ নামে একটি নিবন্ধ লিখেন অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান। লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তোলেন সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এই ঘটনায় চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বরে এক সিন্ডিকেট সভায় তাকে চাকরিচ্যুত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরি থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সাদা দলের নেতা এবং সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক হাসানুজ্জামান বলেন: একটা ছোট্ট লেখার কারণে একজন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পরিপন্থী। অধ্যাদেশ আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার অনুমতি দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান তার লেখা পত্রিকায় ছাপিয়ে ছিলেন। কিন্তু তাকে চাকরিচ্যুত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুসরণ করা হয়নি।
সাদা দলের যুগ্ম আহবায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন: মোর্শেদ হাসানের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে সেটা শুধু একক ব্যক্তির সঙ্গে নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অন্যায়, গোটা শিক্ষক সমাজের প্রতি অন্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্বের প্রতি কুঠারাঘাত। আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয় এই অন্যায় সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।
উক্ত ঘটনা ভিন্নমত দমন নিপীড়নের জন্য বর্তমান সরকারের একটি কৌশল উল্লেখ করে সাদা দলের আহবায়ক ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম এক লিখিত বক্তব্যে বলেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীন ও মতপ্রকাশের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সেই ঐতিহ্য বর্তমান আওয়ামী প্রশাসনের কারণে নস্যাৎ হতে চলেছে। বাংলাদেশে এখন ভিন্নমতের মানুষের উপর নিপীড়ন চলছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরাও সেটা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।
অন্যদিকে সংবিধান লঙ্ঘন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগে চাকরিচ্যুত শিক্ষক মোর্শেদ হাসান খানকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন: মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সবসময় মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে আপোষহীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলঙ্ক ড. মোর্শেদ হাসান খান স্বাধীনতা বিরোধীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্যই মুক্তিযুদ্ধের ভুল ইতিহাস উপস্থাপন করেছিল যা ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত ভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কটূক্তি করার অপরাধে এই বহিষ্কৃত শিক্ষক কখনোই মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারেন না।
আল মামুন আরও বলেন: বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে কেউ বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন না। মোর্শেদ হাসান বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত করেছেন। আমরা অবিলম্বে তার গ্রেপ্তার দাবি করছি।