ঢাবিতে দ্বিতীয়বারের মত অনুষ্ঠিত হলো বসন্ত উৎসব৷ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের উদ্যোগে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) শুরু হয় এ উৎসব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ দেশ বিদেশের সবার জন্য এ উৎসব উন্মুক্ত রাখা হয়। টিএসসিতে সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, গ্রাম্য মেলা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও বিকালে কনসার্টের মাধ্যমে বসন্ত উৎসব পালন করা হয়।
সম্পূর্ণ উৎসবকে ভাগ করা হয় দুই পর্বে। প্রথম পর্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও বসন্ত উৎসব এর বিশেষ র্যালি এবং দ্বিতীয় পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিশেষ পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আয়োজন। যার মধ্যে থাকে পুঁথিপাঠ,গম্ভীরা,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে বিশেষ গীতিনাট্য পরিবেশনা, কাজী নজরুল ইসলামের বিশেষ সৃষ্টিকর্ম নিয়ে বিশেষ নৃত্যনাট্য পরিবেশনা, নানা শ্রেণীর পেশার মানুষের জীবন নিয়ে পরিবেশনা ‘নানা রঙের বাংলাদেশ’, পাহাড়ি নৃত্য, লাঠিনৃত্য,পুতুল নাচ ও নাট্যদল ‘বঙ্গলোক’ এর পরিবেশনা।
উৎসবের শেষভাগে থাকে জনপ্রিয় ব্যান্ড দল ‘জলের গান’ ও ‘গানকবি’র বিশেষ সঙ্গীত পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি বসন্ত উসবে আগত দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য উৎসব প্রাঙ্গণে গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়।
এতে থাকে নাগরদোলা, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ, বানর নাচ, মোরগ লড়াই, বেলুন শুটসহ নানা ধরনের বাঙালি খাবার ও লোকজ হস্ত এবং মৃৎশিল্পের পসরা বসে এ মেলায়।
এর আগে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড.নাসরীন আহমাদ বেলুন উড়িয়ে এ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, ‘বাঙালিদের ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। সারাবছর আমরা নানা উৎসবে মেতে থাকি। আমাদের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু উৎসবের পরিবর্তন হয়নি। দিন দিন উৎসবের ধরণ আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের ঋতুর উপর প্রভাব ফেলেছে। যদিও বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ, কিন্তু বর্তমানে ছয়টি ঋতু এখন বোঝা যায় না। এখন বসন্তের স্থায়িত্ব কম। তারপরেও শীতের শেষে বসন্তের আগমন মনে দোলা দেয়।’
উপ-উপাচার্য আরও বলেন, বসন্ত হলো জীবনের প্রতীক। বসন্ত আসলে মানুষের মধ্যে তারুণ্যের আমেজ থাকে। মনে বসন্ত, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস আমাদের সকলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক।
বিকেল তিনটায় সাংস্কৃতিক পর্বের উদ্বোধন করেন তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরাই ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। আমরা এখন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্যে আছি। বাংলাদেশ স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল সোনার বাংলা গড়তে সুকুমারবৃত্তি চর্চা করতে হবে। বাঙালি সংস্কৃতিকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। আর সে লক্ষ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করছে। আমরা এখন অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করছি এর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক মুক্তিও পাবো। যা প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণে ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও উৎসবে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় নাট্য ব্যক্তিত্ব অনন্ত হীরা, নূনা আফরোজ ও রাহুল আনন্দকে।