আসিফ-মালিহা দম্পতি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। সাড়ে চার বছর দেশে এসেছেন তারা। প্রায় ১০ ঘন্টার যাত্রা পথে তাদের সঙ্গী দেড় বছরের শিশু সন্তান আয়মানও। প্রথমবার দাদু ও নানুবাড়ি সিলেটে যাচ্ছে সে।
শাহজালাল বিমান বন্দর থেকে তাদের রিসিভ করে সরাসরি উত্তরার দিকে রওনা হলেন সিলেট থেকে আসা আত্মীয় স্বজন। কিছুটা অবাক হয়ে আসিফ জানতে চাইলেন, কোথায় যাচ্ছি আমরা? উত্তরে এক আত্মীয় জানালেন, এখন এদিক দিয়েই সিলেটে যাওয়া যায়। আরও অবাক হয়ে আসিফ দম্পতির প্রশ্ন, কিভাবে সম্ভব এটা?
এক সময় ঢাকা থেকে সিলেটে যাওয়া মানেই যাত্রীদের যেতে হতো সায়দাবাদ অথবা কমলাপুরে। গত চার সাড়ে চার বছর থেকে তাতে পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তনটা নিয়ে আসে এনা বাস সার্ভিস কোম্পানি। নতুন রুটে রাজধানীর মহাখালি বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে উত্তরা-টঙ্গী-গাজীপুর হয়ে ভৈরবের রাস্তা ছুঁয়ে বেশ দ্রুতই পৌঁছে যাওয়া যায় সিলেটে।
শুধু রাজধানীর উত্তরা নয় মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী এমনকি রামপুরা এলাকায় থাকা সিলেটের মানুষজনের কাছে এনার এই সার্ভিসটি আসলেই আর্শিবাদ হয়ে আসে। মহানগরীর চিরচেনা ‘মহাজ্যাম’ ঠেলে সায়দাবাদ অথবা কমলাপুরে পৌঁছানোর চেয়ে অনেক সহজেই মহাখালি অথবা উত্তরা থেকে ধরা যায় সিলেটের বাস।
শুরু থেকে এই রুটে একাই আধিপত্য দেখাচ্ছে এনা। কিন্তু একা একা দাপট দেখাতে গিয়ে এখন যাত্রীদের উপড় ‘জুলুম’ করা শুরু করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ‘এসি-সার্ভিস’ নামে নতুন যে সেবা তা নিয়ে যাত্রীদের আছে অভিযোগ। টিকিট, সিট, বাসের সময় এসব নিয়ে অভিযোগতো আছেই, তার সাথে যোগ হয় যাত্রীদের সঙ্গে কাউন্টারম্যান, ড্রাইভার এবং সুপারভাইজারদের প্রচণ্ড খারাপ ব্যবহার। তড়িঘড়ি করে রাস্তার উপড়ে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী ও তাদের লাগেজ নামানোর মতো ঘটনাও আছে।
ওই প্রবাসী দম্পতি অভিযোগ করে বলেন, সকাল সাড়ে ১১টায় এয়ারপোর্ট থেকে নেমে আমরা দুপুর আড়াইটার এসি সার্ভিসের টিকিট কিনি। ছোট্ট অপেক্ষাগারের প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বসিয়ে রাখা হয় আমাদের। তাতেও দুঃখ নেই- বেলা পৌনে ২টার দিকে হঠাৎ করে আমাদের জানানো হয়, বাসটি সিলেটে যাবে না। পরবর্তি এসি গাড়ির সময় বিকাল ৪টা। এখন বলেন, ১০ ঘন্টা বিমানে জার্নি করে বাচ্চা নিয়ে এতোক্ষণ কিভাবে বসে থাকবো। অন্য কোন বাসের লাইনও নেই এদিকে।
পাশের আরেক যাত্রী অভিযোগ করেন, এসি বাসগুলোতে পর্যাপ্ত যাত্রী না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ ‘সিট না ভরলে’ কর্তৃপক্ষ বাস ছাড়ে না।
এসি বাসের নামে তারা আসলে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে,’ বলে অভিযোগ করেন সিলেটের ব্যবসায়ী হারুন রশীদ। ‘আমরা আমাদের প্রয়োজনেই এসি বাসের টিকিট কাটি। কিন্তু তাদের কাছে আমরা আসলে ‘জিম্মি’ হয়ে পড়েছি।’
তিনি বলেন, শোনা যায়, এনা বাস সার্ভিসের মালিকপক্ষ অত্যন্ত প্রভাবশালী। আর তাই এই লাইনে অন্য কোনো বাস সার্ভিস ঢুকতে পারছে না। শ্যামলী, গ্রীনলাইন, ইউনিক ইত্যাদি পরিবহন অনেক চেষ্টা করেও মহাখালি থেকে সিলেটের লাইনে দিতে পারছে না তাদের সার্ভিস।
একমাত্র এনাই এই লাইনে বাস চালাচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে আধা ঘণ্টা পর পর রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যায় এনার বাস। বছরখানেক থেকে তাদের সার্ভিসে যুক্ত হয় ‘এসি-সার্ভিস’। কিন্তু এই সেবার নামে হয়রানি দিন দিন বেড়েই চলেছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ।
তবে এনা কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেউ কেউ রঙ চড়িয়ে প্রচার করছে। তারা সব রুটেই ‘কোয়ালিটি সার্ভিস’ নিশ্চিত করছে। যাত্রীরাও তাদের সেবায় সন্তুষ্ট।