চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ঢাকা আসলেই কি নারীদের জন্য ভয়ের নগরী?

যৌন নির্যাতন, পাবলিক পরিবহনে হয়রানির শিকার, চুরি, ডাকাতিসহ রাজধানী ঢাকা দিন দিন নারীদের জন্য ভয়ের নগরীতে পরিণত হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজধানীতে বসবাসরত নারী এবং বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ঢাকা শহরকে নারীদের নিরাপদ বাসযোগ্য করতে হলে সমাজে বড় ধরণের পরিবর্তন দরকার। সেই পরিবর্তন শুরু হতে হবে রাস্তা থেকে ঘর পর্যন্ত।

সম্প্রতি থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের এক জরিপে ঢাকাকে নারীদের জন্য পৃথিবীর সপ্তম বিপজ্জনক শহর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এবং যৌন সহিংসতায় বাংলাদেশ রয়েছে চতুর্থ স্থানে। এই তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে মিশরের কায়রো শহর। কঙ্গোর কিনশাসার সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি। এই তিন শহরের পরে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লী।

দীর্ঘদিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তানজিনা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ঢাকা শহর আসলে কোনদিন মেয়েদের বাসযোগ্য ছিল বলে আমার মনে হয় না। নারীদের বাসযোগ্য করার জন্য ঢাকা নগরীতে পরিকল্পিত কোনো কাজই হয়নি। তাই প্রতিনিয়ত একপ্রকার যুদ্ধ করেই ঢাকায় টিকে থাকতে হচ্ছে।

‘নানা সময়ে হয়রানির শিকার হয় বেশির ভাগ কর্মজীবী নারীরা। নিরাপদভাবে নগরীতে থাকতে না পারায় অনেকে আবার কর্মজীবন ছেড়েও দেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিমি বলেন: বিশ্বের অনেক দেশে নারীরা অাজ এগিয়ে গেছে। সেই তুলনায় ঢাকায় থাকা নারীরা এগোতে পারিনি। রাস্তা থেকে শুরু করে শিক্ষাক্ষেত্র কিংবা কর্মক্ষেত্রে কোথাও নারীরা সমাজের তেমন কোন সহযোগিতা পায় না। তার চলার পথে যৌন হয়রানিসহ আরও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এসব কারণে এই শহরের অধিকাংশ নারী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সবসময় এসব বিষয়ে তাদের মধ্যে একটা অজানা ভয় কাজ করে।

খুশী কবীর

আসলেই কি ঢাকা নগরী নারীদের জন্য ভয়ের নগরী হচ্ছে? হলে কেন এমনটা হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকার কর্মী ও নারী নেত্রী খুশী কবীর চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: দেশের প্রেক্ষাপটে ঢাকা নগরী নারীদের জন্য বাসযোগ্য নয়। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতি হলেও সামাজিকভাবে, মানসিক চিন্তা ও মনোজগতের ক্ষেত্রেই নারীর জন্য এখনও ঢাকা শহরকে নিরাপদ শহর করা যায়নি। কিছু নারী পরিবর্তন আনলেও তাও পরিমাণে খুব কম।

‘শহরবাসী এখনও পুরোপুরি নারীদের জন্য নিরাপদ শহর উপহার দিতে পারেনি। তার অন্যতম কারণ ঢাকায় নারীদের জন্য পাবলিক পরিবহন করা যায়নি।’

খুশী কবীর বলেন: আমি  নারীদের জন্য আলাদা কোনো পরিবহন চাচ্ছি না। কিন্তু নারীর পাশে বসা পুরুষটি যদি নারীকে সম্মান করতে পারে তাহলে মনে হয় কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। পাবলিক পরিবহনে যদি কোনো নারী হয়রানির শিকার হন এবং পুলিশকে অভিযোগ করার পর ওই পরিবহনের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনতে পারলে শহর অনেকটা নিরাপদে চলে আসবে।

‘সমাজে নারীদের পোশাকের মাধ্যমে আটকে রাখা হয়। কর্মজীবী নারীদের ক্ষেত্রে সেটি আরও বেশি হয়। মানসিকভাবে চিন্তা ধারার পরিবর্তন হয় না বলে নারীরা দিনের পর দিন নির্যাতনের শিকার হন। ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে ঢাকাকে নারীদের জন্য বাসযোগ্য করতে হলে তাদের সব ধরণের চাহিদাগুলো মেটাতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার বলেন: নারীদের জন্য ঢাকা ভয়ের নগরী এই সূচক অমাদের জন্য খুব চিন্তার বিষয়। যেখানে বাংলাদেশে বিশাল সংখ্যক নারীরা পড়াশুনা করছেন, ঘরের বাইরে কাজ করেছেন অথবা ব্যবসা করছেন। আরও একটি বড় অংশ তাদের শিশুদের স্কুল- কলেজে নিয়ে যাচ্ছেন। কাজের প্রয়োজনে তাদের সবাইকে রাত পর্যন্ত বাইরে থাকতে হয়।

‘কিন্তু পাবলিক পরিবহনগুলো নারীদের জন্য উপযুক্ত নয়, এমনকি উবার কিংবা পাঠাও সার্ভিসও নারীদের জন্য নিরাপদ নয়। আর বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেটার মাত্রা আরও দ্বিগুণ হয়। তাছাড়া কোনো জরুরি অবস্থায় নারীদের জন্য কোনো টয়লেট ব্যবস্থা নেই। যেগুলো রয়েছে সেগুলো ব্যবহারযোগ্য নয়।’

ঢাকা নগরীকে নারীদের জন্য নিরাপদ করতে হলে ইনফরমেশন নেটওর্য়াক থাকাটা প্রয়োজন বলে মনে করেন অধ্যাপক সালমা আক্তার। তিনি বলেন: নারীরা যাতায়াত করার সময় কোনো বিপদে পড়লে কোনো হটলাইন নম্বর বা কোনো থানা-পুলিশের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করতে পারে না। এক্ষেত্রে আইসিটি বিভাগ নারীদের জন্য কাজ করতে পারে। এছাড়া মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য পাবলিক পরিবহনগুলোকে উপযুক্ত করতে হবে।

তিনি জানান: ঢাকা ক্রমেই ভয়ের নগরী হয়ে উঠায় অনেক নারী তাদের কর্মজীবন ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। বিভিন্ন হয়রানি থেকে বাঁচতে তারা এমনটা করে থাকেন। আবার অনেকে সহ্য করে ভীতিকর অবস্থায় কাজ করেন। কিন্তু সেই কাজগুলোর সাফল্য থেকে তিনি পিছিয়ে পড়েন। এভাবে একটা শহর কোনোভাবেই চলতে পারে না।