রাজধানীর পথবাসী সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনমান উন্নয়ন এবং পুনর্বাসনের বিষয়টি যেন উপেক্ষিত না হয় এমন এক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মানবন্ধন করেছে শিশুদের একটি দল।
ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ২৯ জানুয়ারি এ মানববন্ধন করা হয়।
পথশিশুদের কল্যাণে নিবেদিত অলাভজনক ও স্বেচ্ছাসেবা ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা স্ট্রিট চিলড্রেন লিডোর পিস হোমে অবস্থানরত, পথের জীবন থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত শিশুদের এই দলটি বিগত স্ট্রিট চাইল্ড ক্রিকেট বিশ্বকাপ-২০১৯ এ ইংল্যান্ডের লর্ডসে সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে। তাছাড়া, অভিভাবকহীন ও ভাগ্যাহত পথবাসী শিশুদের আইনগত পরিচয় নিয়ে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণী মহলের সাথে আলোচনায় অংশ নিয়েছে এই প্রতিনিধি দল।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিশুদের মধ্যে রয়েছে স্বপ্না আক্তার সুমি, ঝর্ণা আক্তার, জান্নাত, নিজাম হোসেন, মুহাম্মদ রুবেল, মুহাম্মদ কাশেম, আবিদা, সানিয়া মির্জা ও রাহুলসহ আরও অনেকে।
মানবন্ধন থেকে শিশুরা যে দাবি জানিয়েছে তা হলো: কোন শিশু যেন নগরীর সড়কে না থাকে। তাদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য সকল বিনোদনকেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে বিনামূল্যে শিশুরা বিনোদনের সুযোগ পায়। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে অর্থাভাবে কোন শিশুর চিকিৎসা ও ওষুধ বন্ধ না থাকে। সকল সুবিধাবঞ্চিত শিশুর জন্ম নিবন্ধনের প্রতি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে শিশুর নাগরিক পরিচয় ও রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের সংকট তৈরি না হয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে যাতে শিশুদের বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে কোনরূপ মানসিক বাঁধার শিকার না হতে হয়। সকল শিশুর সমান অধিকার নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সাম্যের একটি নগর উপহার দিতে হবে।
শিশুদের সুরক্ষায় প্রতিটি থানায় শিশুবান্ধব ‘পুলিশ ভাই’ থাকতে হবে যার কাছে শিশুরা আশ্রয় পাবে যাতে সকল সমস্যার সমাধানে নির্ভয়ে তার সাহায্য নিতে পারে।বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের নিরাপদ আশ্রয়ের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ও উৎস বন্ধে নাগরিক সুবিধার আওতায় আনা এবং রেলওয়ে ও নদীবন্দরে বিশেষ সেল করতে হবে যাতে হারিয়ে যাওয়া শিশু ও অভিভাবকহীন শিশু শনাক্তকরণ ও উদ্ধারে সহায়তা পাওয়া যায়।
নগরবাসীর আশা আকাঙ্ক্ষার পূরণ আর নানা সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি সম্বলিত স্লোগানে মুখরিত শহরের আকাশ বাতাস। কেউ কেউ বৈষম্যমুক্ত নগর গড়ার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। এমন প্রেক্ষাপটে শিশুরা এ মানববন্ধন করলো।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর গত ২০১৯ সালের জুন-জুলাই মাসে ঢাকা শহরের ১২ হাজার ৪৬৮ জন মানুষের ওপর পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী এই শহরের ধনী এবং দরিদ্রদের আয়ের বিরাট বৈষম্য রয়েছে।
শহরের সাড়ে ৩ শতাংশ মানুষ এখনও তিনবেলা খেতে পায় না। আর বস্তি এলাকায় তিনবেলা খাবার পায় না প্রায় ১৮ শতাংশ মানুষ। এদের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফুটপাত, রাস্তা, বাস, ট্রেন কিংবা লঞ্চ টার্মিনালে বহু বাস্তুহারা, অসহায় এবং পথশিশুর বাস। তারাও নিশ্চয়ই এই শহরের বাইরের নয়।
নগরে আশ্রিত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনযাত্রাকে নিরাপদ করা ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিভাবকহীন শিশুদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত মেয়রদের প্রতি শিশুদের এই উৎসুক প্রশ্নের আশানুরূপ জবাব মেয়ররা দেবেন বলে বিশ্বাস করে শিশুদের এই দলটি।