নোবেল পুরস্কারে ভূষিত ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট
নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট মনোনয়নপ্রত্যাশী হিলারি ক্লিনটনকে জড়িয়ে একটি কথিত
খবরকে জামায়াত-শিবির পরিচালিত বাঁশের কেল্লার মতো অপপ্রচার বলেছেন
সাংবাদিকতার শিক্ষক এবং লেখক মাসকাওয়াথ আহসান।
এসব তথাকথিত খবরের বেশ কিছু দিক পরিস্কার করে তিনি লিখেছেন: দ্য ডেইলি কলার নিউজ ফাউন্ডেশন নামে যে সংবাদ উৎসকে উদ্ধৃত করে ‘হিলারি ক্লিনটন বে-আইনীভাবে অধ্যাপক ইউনূসকে অনুদান পাইয়ে দিয়েছেন’ সংবাদ প্রকাশ করে ইউনূস ইস্যুকে জাগ্রত করার চেষ্টা করা হচ্ছে; সেটি রিপাবলিকান দলের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত একটি নয়া দিগন্ত বা বাঁশের কেল্লা। রিপাবলিকান দলের নেতা যুদ্ধবাজ ডিকচেনি এই সংবাদ মাধ্যমের প্রতিষ্ঠাতা। উনার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিল প্যাটেলকে দিয়ে তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
নির্বাচনের আগে আগে প্রতিবারই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এসব গুজব প্রচার করা হয় বলে উল্লেখ করে মাসকাওয়াথ আহসান লিখেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নির্বাচনের আগে এই সংবাদ মাধ্যমটি ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে গুজব প্রচারের কাজটি করে থাকে। ডেমোক্র্যাট এক সিনেটর প্রার্থীর বিরুদ্ধে এরা কয়েকজন নারীর বয়ানে যৌন কেলেংকারীর খবর প্রকাশ করেছিলো ২০১২ সালে। পরে ওই নারীরা স্বীকারোক্তি দেয়, তাদেরকে এই বানোয়াট অভিযোগ উত্থাপনের জন্য টাকা দেয়া হয়েছিলো এই দ্য কলারের পক্ষ থেকে; যা অস্বীকার করে আসছে সংবাদ মাধ্যমটি। একই খবর নিশ্চিত না হবার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিবল ও পেশাদার মাধ্যম প্রকাশ করেনি। সুতরাং দ্য কলার নিউজ ফাউন্ডেশনের সাংবাদিকতা নৈতিকতা শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ।
‘একটি সংবাদের তথ্যসূত্র যদি হয় নয়া দিগন্ত আর তা যদি হয় একজন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে তা যেমন কুৎসামূলক হতে বাধ্য; যুক্তরাষ্ট্রে কট্টর রিপাবলিকানদের নয়া দিগন্ত দ্য কলার ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ করলে তা নয়া দিগন্তের মতোই একটি প্রতিক্রিয়াশীল সংবাদ সূত্রের প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড,’ বলে মন্তব্য করেন মাসকাওয়াথ আহসান।
তিনি বলেন: রাজনীতির অনেক বড় ময়দান যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে নির্বাচনের আগে এইসব প্রতিক্রিয়াশীল ডেইলি কলারেরা অনেক ময়লা ছুঁড়বে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এটাই স্বাভাবিক। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার বিন্যাস এমন দাঁড়িয়েছে; যেখানে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের হারানো রিপাবলিকানদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। আর পরপর দুই টার্ম ক্ষমতার বাইরে থেকে রিপাবলিকানরা মরিয়া হয়ে উঠবেই।
ইংবেজিতে প্রকাশিত বলেই কোনো খবরে ঝাপিয়ে পড়া ঠিক হবে না, উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন: সেইখানে ইংলিশ নামের একটি মিডিয়া বলেই তাকেই খুব বিশ্বাসযোগ্য ভেবে মৃগয়ায় ঝাপিয়ে পড়া ঠিক হবে না। আমরা গ্রামে বাস করি; কিন্তু সুবিধা হচ্ছে এটি বিশ্বগ্রাম। তথ্য রয়েছে ক্লিক দূরত্বে। ‘ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ’ নেবার ধনুক ভাঙ্গা পণে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নয়া দিগন্ত যখন সংবাদসূত্র হয়; তখন বুঝতে পারা যায় লিবারেলিজমের যে ফানুসগুলো আমরা লোক দেখাতে ওড়াই আসলে ভেতরে ভেতরে তা বাঁশের কেল্লার কূপি বাতি প্রজ্জ্বলিত।
‘আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই হয়তো একজন ডোনাল্ড ট্রাম্প বসবাস করে; অনুকুল পরিবেশে তা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। নইলে রিপাবলিকান অর্থায়িত পত্রিকায় প্রকাশিত ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ রিপাবলিকানদের নিয়ে আসা কেবল ‘অভিযোগ’-কে তথ্যসূত্র ধরে আমরা মিডিয়া ট্রায়ালে নেমে পড়বো কেনো!’