হল না! খেলোয়াড়-সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল পিএসজির বিপক্ষে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগে ৬-১ গোলের জয়ের মত আরেকটি রূপকথা লিখে ঘুরে দাঁড়াবে বার্সেলোনা। কিন্তু মেসি, নেইমার, সুয়ারেজরা এবার আর পারলেন না। দারুণ আক্রমণাত্মক এক ম্যাচ উপহার দিয়েও গোলশূন্য ড্র নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার থেকেই বিদায় ঘণ্টাবাজল লুইস এনরিকের দলের।
ন্যু ক্যাম্পে বুধবার রাতে ফিরতি লেগে গোলশূন্য ড্রয়ের আগে প্রথম লেগে জুভেন্টাসের মাঠ থেকে ৩-০ গোলে হেরে এসেছিল বার্সা। সেটিই ফল নির্ধারক হয়ে থাকল জুভেন্টাসের সেমিফাইনালের যাত্রায়।
স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের বিদায় করে একটা প্রতিশোধের হিসেবও মিটিয়ে ফেলল মাস্সিমিলিয়ানো অ্যাল্লেগ্রির ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। ২০১৪-১৫ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে বার্সেলোনার কাছে ৩-১ গোলে হেরেই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল জুভেন্টাসের। সেই জ্বালার কিছুটা হয়তো কমবে বুফ্ফন-কিয়েল্লিনিদের।
ঘরের মাঠে কমপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে জিততে হতো। এমন সমীকরণে ম্যাচে শুরু থেকেই জুভদের রক্ষণে হামলে পড়েন এমএসএন ত্রয়ী। ম্যাচে প্রতিপক্ষের গোলমুখ বরাবর ১৯টি শট নিয়েছে বার্সা। সেখানে দিবালা-কুয়াদ্রাদোরা নিয়েছেন ১২টি। কিন্তু দুপক্ষই যেন লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে মেতে ছিল।
ম্যাচের ১৩ মিনিটে বক্সে ঢুকে নেওয়া হিগুয়েনের শট লক্ষ্য খুঁজে পায়নি। ১৭ মিনিটে সুযোগ হারিয়েছে বার্সা। মেসির উঁচু করে বাড়ানো বলে বক্সের বাইরে থেকে আলতো চিপ করতে যেয়ে ঠিকভাবে পায়ে বল লাগাতে পারেননি জর্ডি আলবা।
মেসি নিজেও একই দোষে দোষী! ম্যাচের ১৯ মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া মেসির শট ডান পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে সীমানা পেরিয়ে যায়। তার ২ মিনিট পর আলবার ক্রসে বল পেয়ে লক্ষ্যে শট নিতে পারেননি নেইমার।
ম্যাচের ৩০ মিনিটে মেসির শটে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান জিয়ানলুইজি বুফ্ফন। ৩৮ মিনিটে হিগুয়েনের ভলিতে একই রকম প্রতিরোধ গড়েন মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেনও।
সময় এগিয়েছে। হতাশা বেড়েছে। এরপরও মরিয়া আক্রমণ শানিয়ে গেছে স্বাগতিকরা। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। বার্সার খেলোয়াড়রা বারবার বারের ওপর দিয়ে বল পাঠিয়েছেন।
মধ্যবিরতির খানিক আগে নেইমারের ক্রসে বল পেয়ে সুয়ারেজ বাইসাইকেল কিক করার চেষ্টা করে হালে পানি পাননি।
অন্যদিকে জুভেন্টাসের ডিফেন্ডাররা সত্যিকার অর্থেই মানব দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তাতে গোলশূন্য প্রথমার্ধ।
বিরতি থেকে ফিরেই আক্রমণের তোড় সামলাতে হয়েছে দুদলের ডিফেন্ডারদের। এসময় কুয়াদ্রাদোর কোনাকুনি শট পোস্টের বাইরে দিয়ে যাওয়ার পর বক্সে ঢুকে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন নেইমার। পরে বোনুচ্চি-আলভেজদের নিয়ে গড়া রক্ষণকে বোকা বানিয়ে বারকয়েক ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন মেসি। কিন্তু সাফল্য আসেনি।
ম্যাচের ৫৪ মিনিটে নেইমারের সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া মেসির শট ক্রসবারের উপর দিয়ে যায়। ৫৮ মিনিটে বিপজ্জনক জায়গায় পাওয়া ফ্রি-কিকটিও ক্রসবারের উপর দিয়ে মারেন আর্জেন্টাইন তারকা।
পরে ৬৬ মিনিটে কর্নার থেকে আসা বল বিপদমুক্ত করতে যেয়ে গোল সীমানা ছেড়ে অনেকটা সরে গিয়েছিলেন বুফ্ফন। ততক্ষণে মেসির পায়ে বল। ইতালিয়ান গোলরক্ষক অনেকটা দূরে। কিন্তু মেসির ভলি আবারো ক্রসবার উঁচিয়ে সীমানার বাইরে।
শেষদিকে সময় যত গড়িয়েছে ততই বিদায়টা স্পষ্ট হয়েছে স্বাগতিকদের শরীরী ভাষাতেও। রেফারি ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজানো মাত্রই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নেইমার। তাকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এসেছেন সাবেক বার্সা রাইটব্যাক ও নেইমারের জাতীয় দল সতীর্থ দানি আলভেজ।
রাতের অন্য ম্যাচে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে শেষ চারের টিকিট পেয়েছে মোনাকো। বুধবার রাতে দ্বিতীয় লেগে ঘরের মাঠে ৩-১ গোলে জিতেছে মোনাকো। প্রথম লেগে ডর্টমুন্ডের মাঠ থেকে ৩-২ গোলে জিতে এসেছিল ফরাসি ক্লাবটি।