কেউ না জেতার এই চট্টগ্রাম টেস্ট কাকে মনে রাখবে? টিভির পর্দায় ক্ষণে ক্ষণে ভেসে ওঠা হাথুরুসিংহের মুচকি হাসি? সীমানা দড়ির কাছে ছোটখাটো এক যুবকের বুনো উল্লাস? যিনি ‘কঠিন’ পরিস্থিতিতে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করে পঞ্চমদিন নাগাদ ম্যাচ বাঁচিয়েছেন। নাকি ‘ক্ষণিকের অতিথি’ আব্দুর রাজ্জাককে?
টেস্টের ওই চুম্বক অংশ নির্বাচন করতে করতে ওয়ানডে সিরিজের সঙ্গে প্রথম টেস্টের একটি পার্থক্য বের করা ক্রিকেট-পাঠকের জন্য কঠিন হওয়ার কথা নয়। ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ হেরেছিল ক্রিকেটজ্ঞানের কাছে। সেখানে সামর্থ্যের প্রশ্ন এসেছে অনেক পরে। কিন্তু দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটির চতুর্থদিন নাগাদ যে চাপ সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিছক সামর্থ্যের প্রশ্ন। যে পিচে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৫১৩ করতে দশ উইকেট বিসর্জন দেয়, সেখানে অতিথিরা ৯ উইকেটে ৭১৩ করে ঘোষণাপর্ব সারে! পরের ইনিংসে বাংলাদেশ যেই না ব্যাট ধরেছে মাটি আবার বোলারদের পক্ষে চলে গেছে! চতুর্থদিন দেখতে দেখতে তিন উইকেট ছিল না। দুই ইনিংসে ত্রাণকর্তার নাম মুমিনুল। টস জিতে ব্যাটে নেমে তামিম-ইমরুল ফিরে যাওয়ার পর মুমিনুল এবং মুশফিক তৃতীয় উইকেটে ২৩৬ রান যোগ করেন। এই উইকেটে বাংলাদেশের এটি সর্বোচ্চ রান। যে কোনো উইকেটে চতুর্থ সর্বোচ্চ। মুমিনুল শেষ পর্যন্ত ১৭৬ করে সাজঘরে ফেরেন।
জবাব দিতে নেমে তিন লঙ্কান সেঞ্চুরি হাঁকান। কুশল মেন্ডিস ১৯৬, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ১৭৩ এবং রোশেন সিলভা ১০৯ রান করেন। তাতে ২০০ রানের লিড পায় দলটি। শনিবার দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬.৫ ওভার ব্যাট করতে বাংলাদেশের মুশফিক, ইমরুল এবং তামিম ফিরে যান। আবার মুমিনুল শো। সঙ্গে লিটন কুমার দাস।
শেষদিন হেরাথের বল সকাল থেকেই ঘুরতে শুরু করে। আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে ঘিরে ধরে শ্রীলঙ্কা। মুমিনুল-লিটন কাউন্টার অ্যাটাক করে চাপ সরান। চতুর্থ উইকেটে দুজনে ১৮০ রান যোগ করেন। এই উইকেটে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান।
এই জুটির ওপরই মূলত ম্যাচের ভাগ্য গড়ে যায়। ড্রয়ের পথে হাঁটতে হাঁটতে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন মুমিনুল। বিশ্বক্রিকেটে এই নজির ৬৭তম খেলোয়াড়ের, ৮৩তম বার। রোববার ১৭৪ বলে ১০৫ করে ফেরেন মুমিনুল। এর মধ্যে পাঁচটি চার, দুটি ছয়ের মার ছিল।
মুমিনুল ফেরার পর ছয় হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক শতক ছুঁতে গিয়ে ধরা পড়ে যান লিটন কুমার দাস। ১৮২ বলে ৯৪ রানে শেষ হয় তার ইনিংস। চার হাঁকান ১১টি। কোনো ছয়ের মার নেই।
এই জুটি ভাঙার পর দিনের খেলা ত্রিশ ওভারের কিছু বেশি বাকি ছিল। তাতে অবশ্য কোনো বিপদ হয়নি। প্রথম ইনিংসে ৮৩ রানে অপরাজিত থাকা রিয়াদ নিরাপদে ম্যাচ শেষ করে আসেন। সঙ্গে ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। দিনের খেলা কমপক্ষে ১৬ ওভার বাকি থাকতে দুই অধিনায়ক ‘ড্র’ মেনে নেন। বাংলাদেশের সাজঘর থেকে সবার আগে মাঠে নেমে আসেন ছোটখাটো গড়নের সেই ছেলেটি। চট্টলা যাকে ম্যাচসেরার খামের ভেতর উপহার দিয়ে গেছে আরেক জীবন!
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৫১৩
(মুমিনুল ১৭৬, মুশফিক ৯২, মাহমুদউল্লাহ ৮৩* তামিম ৫২, ইমরুল ৪০, সাঞ্জামুল ২৪; লাকমাল ৩/৬৮, হেরাথ ৩/১৫০, সান্দাকান ২/৯২, দিলরুয়ান ১/১১২।)।
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৭১৩/৯ডি.
(সিলভা ১৭৩ , মেন্ডিস ১৯৬, রোশেন ১০৯, চান্দিমাল ৮৭; মোস্তাফিজ ১/১১৩, সাঞ্জামুল ০/১৫৩, মিরাজ ৩/১৭৩, তাইজুল ৪/২১৯)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৩০৭/৫
(তামিম ৪১, ইমরুল ১৯, মুমিনুল ১০৫, লিটন ৯৪, রিয়াদ ২৮*, মোসাদ্দেক ৮*।)
ম্যাচসেরা: মুমিনুল হক।