ডেঙ্গু জ্বর এতদিন রাজধানীতে বেশি দেখা গেলেও এখন তা ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে। জেলা পর্যায়ের সব হাসপাতালে কম বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এর ফলে দেশব্যাপী চলছে ডেঙ্গু আতঙ্ক।
এমন প্রেক্ষাপটে এডিস মশার কামড় থেকে বাঁচতে মানুষ কয়েল, অ্যারোসল, ইলেকট্রিক ম্যাট এবং ধুপ ব্যবহার করছেন। তবে এসব উপাদানে মানুষের শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যা হওয়ার কারণে বিকল্প এবং সবচেয়ে বেশি নিরাপদ হিসেবে সবাই মশারি ব্যবহারে স্বস্তি বোধ করেন। এ কারণে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় মশারি বিক্রি বেড়ে গেছে ৩ থেকে ৪ গুণ।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
হঠাৎ কেন মশারি কেনার ভিড়
সংসদ ভবন এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বকুল হোসেন মশারি কিনেছেন কারওয়ান বাজার থেকে। স্বাভাবিক প্রয়োজনে কিনছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন: মোটেও না। ডেঙ্গু আতঙ্কে খুব ভয়ে দিন পার করছি। কয়েল বা অন্য কিছু ব্যবহারে অভ্যস্ত নই। তাই বাধ্য হয়ে মশারি কিনছি।
পান্থপথ থেকে কারওয়ান বাজার এসে মশারি কিনেছেন শাহিন খান। মশারি কেনার বিষয়টি জানতে চাওয়ার আগেই তিনি বলেন: ভাই, মশারি টানানো একটা বিরক্তিকর কাজ। কিন্তু এখন ঠেকায় পড়ে কিনছি। এছাড়া উপায় নাই। যে হারে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে আর মরছে, এখন নিজেকে নিরাপদে রাখাই চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়ছে।
কয়েলের চেয়ে মশারি ভালো
কয়েলের চেয়ে মশারি ভালো বলে মনে করেন অনেকে। রাজধানীর পরিবাগের বাসিন্দা সেলিম ভূঁইয়া বলেন: কয়েলে কেমিক্যাল পুড়ে ধোঁয়া বের হয়। যাদের এলার্জি আছে, ধোঁয়ার কারণে তাদের হাঁচি-কাশি হয়। শ্বাসকষ্ট হয়। দীর্ঘদিন এগুলো ব্যবহার করলে অ্যাজমাও হতে পারে। কিন্তু মশারি ব্যবহার করলে এসব কিছু হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। তাই আমি মনেকরি কয়েলের চেয়ে মশারি নিরাপদ।
বাজারে মশারির বিক্রি কেমন
সবচেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন খুচরা বাজারের মশারি বিক্রেতারা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কথা হয় খুচরা বিক্রেতা শাহীন হাওলাদারের সাথে।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: প্রতি বছর আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে নাকি মশা মারা যায়। তাই এই সময়ে আমাদের বিক্রিও হয় খুব কম। কিন্তু এ বছর গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ বেচাবিক্রি বেড়েছে। সবাই সিঙ্গেল (একজনের ব্যবহারের উপযোগী) ম্যাজিক মশারি কিনছে। পাইকাররাও এখন চাহিদা মত আমাদের মশারি দিতে পারছে না।
তার কথার সূত্র ধরে সরেজমিনে কথা হয় রাজধানীর মশারির পাইকারি বাজার ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট ও সিদ্দিক বাজারের রোজ মেরিনার্স মার্কেটের পাইকারদের সাথে।
ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেটের সোনারগাঁও এন্টারপ্রাইজের বিক্রয়কর্মী শহিদুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ডেঙ্গু আতঙ্কে অন্য সময়ের তুলনায় মশারি বিক্রি বেড়েছে ৩ থেকে ৪ গুণ।
মশারিকে সবাই নিরাপদ মনে করে উল্লেখ করে তিনি বলেন: কয়েলের গন্ধ মারাত্মক ক্ষতিকর। এটার কারণে অনেকের শ্বাসকষ্ট হয়। এর ধোঁয়াও অনেকে সহ্য করতে পারে না। কিন্তু মশারি ব্যবহারে কোনো ক্ষতি নেই। তাই নিরাপদ মনে করে সবাই মশারি কিনছে। এ কারণে এই ঢাল সিজনেও (সাধারণত কম বেচাকেনা হওয়ার সময়) বিক্রি বেড়েছে।
এই মার্কেটের বোনাফাইড কম্পোজিট টেক্সটাইলের বিক্রেতা শহীদ গাজী বলেন: পাইকারি পর্যায়ে এই মৌসুমে মশারির তেমন চাহিদা থাকে না। কিন্তু ডেঙ্গু জ্বরের কারণে মানুষ ভয়ে রয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের ভাল উদ্যোগ না থাকায় সবাই নিজেকে নিরাপদে রাখতে মশারি কিনছে। তাই অন্য সময়ের তুলনায় ২ থেকে ৩ গুণ বেশি বিক্রি হচ্ছে।
তবে কম দামের অর্থাৎ সিঙ্গেল (এক জনের উপযোগী) মশারি বেশি চলছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলছে ম্যাজিক মশারি।
সিদ্দিক বাজারের রোজ মেরিনার্স মার্কেট রাজধানীর অন্যতম বড় মশারি মার্কেট। এখানে মশারি তৈরি করা হয়। এই মার্কেটের মেহেদী এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার হারুনুর রশিদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: যেদিন থেকে ডেঙ্গু জ্বরের খবর বেরিয়েছে ওই দিন থেকেই মশারি বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে। এখন তৈরি করা হচ্ছে আগের তুলনায় বেশি।
তবে বিক্রি বাড়লেও ভ্যাট সংক্রান্ত ঝামেলায় রয়েছেন বলে জানান তিনি। এই বিক্রেতা বলেন: বিক্রি অনুযায়ী দেখা যায় ভ্যাট দেয়ার কথা ১ শতাংশ সেখানে ভ্যাট কর্তৃপক্ষ আদায় করে ৫ শতাংশ। বিক্রি কম হলেও ভ্যাট আদায়কারী কর্মকর্তারা বিক্রি বেশি হয়েছে বলে ঝামেলা করে।
দাম কত
বাজারে প্রায় ৮ থেকে ১০ ধরনের মশারি রয়েছে। তুলনামূলক দাম কম আর নির্বিঘ্নে বাতাস চলাচলে করতে পারায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ম্যাজিক মশারির।
পাইকারি বাজারে প্রতিটি সিঙ্গেল মশারির দাম ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকার মধ্যে হলেও খুচরা পর্যায়ে বিক্রেতারা দাম নিচ্ছেন ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। আর ডাবল মশারির (২ জন থাকার উপযোগী) দাম নিচ্ছেন ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা।