শিশুদের জ্বর হলেই ডেঙ্গু আতঙ্কে হাসপাতালমুখী হচ্ছেন অভিভাবকরা। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডেঙ্গুতে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশই শিশু।
অভিভাবক ও চিকিৎসকরা বলছেন স্কুলগুলো এডিস মশার অন্যতম উৎস। বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ছুটির দিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মশা নিধন করার পরামর্শ তাদের।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে বর্তমানে ৯১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে শিশু ২১ জন, যাদের বয়স আর ৩ থেকে ১০ বছর। জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পরবর্তী ২৪-৪৮ ঘন্টা অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মোস্তফা কামাল রউফ। কেননা শিশুসহ যে কোনো বয়সের রোগীর জন্য এ সময়টাতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
উৎকণ্ঠিত অভিভাবকেরা জ্বর আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে ছুটে আসছেন হাসপাতালে। অনেক অভিভাবকের অভিযোগ স্কুল থেকে বাচ্চারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে স্কুল গুলোতে এডিস মশা নিধনের আহ্বান তাদের।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মঙ্গলবার সকালেও রোগীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। তাদের বেশিরভাগই ডেঙ্গুর নানা রকম উপসর্গ নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যাদের ডেঙ্গু ধরা পড়ছে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করে নেয়া হচ্ছে।
এবার বেশিরভাগ রোগীই টাইপ থ্রি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, এই ডেঙ্গুর জটিলতা ও উপসর্গ একটু ভিন্ন রকমের। তাই রোগী ও স্বজনদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে বলছেন তারা।
রাজধানীতে গত ২৪ ঘন্টায় ২৯৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৫৭০ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের হিসেবে জুলাই মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন মোট ৪ হাজার ৪৫৯ জন। মঙ্গলবার সকালেও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল সূত্র।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন জানান, এ পর্যন্ত হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগের ১১টি ইউনিট মিলিয়ে ৩৪৯ জন রোগী ভর্তি আছেন। ১ জানুয়ারি থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত মোট ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৯৬৫ জন। এদের মধ্যে ৬১৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মারা গেছেন ৩ জন।
ঢামেক পরিচালক বলেন, হাসপাতালের প্রতিটি ভর্তির দিনেই ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে। তবে তিনি মনে করেন ডেঙ্গু নিয়ে মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। জ্বর হলে কেউ আর অবহেলা না করে পরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছেন।
রোববার রাতে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন মো. শাহাদৎ হোসেন হাজরা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন এবং মারা যান। মনে করা হচ্ছে তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন।