লড়াইয়ের নামে শেষ ইনিংসে পরাজয়ের সময়টা একটু পিছিয়ে নেয়া। মাঝখানে মাথায় মুশফিকের আঘাত। এরপর দেখতে দেখতে অলআউট। ২৫৪ রান এবং ইনিংস ব্যবধানের হার!
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ থেকেই বাংলাদেশের যাচ্ছেতাই অবস্থা। আগের ম্যাচে হারতে হয়েছিল ৩৩৩ রানে।
ব্লুমফন্টেইনে তৃতীয় দিনের সকালে দ্বিতীয় ইনিংসে দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে হারের পথে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। দলীয় ১৩ রানের মাথায় এই ইনিংসেও দ্রুত ফিরে যান সৌম্য (৩)। রাউন্ড দ্য উইকেটে স্টাম্পের অনেক দূর থেকে বল করেছিলেন রাবাদা। অফ স্টাম্পের বাইরের সেই বল ছেড়ে না দিয়ে ডিফেন্স করতে যেয়ে প্রথম স্লিপের সামনে প্লেসিসের হাতে ক্যাচ দেন।
এরপর ওই রাবাদাই ফেরান মুমিনুলকে (১১)। একে একে ফিরে যান মুশফিক (২৬), লিটন (১৮), রিয়াদ (৪৩)।
লিটন প্রথম ইনিংসে দারুণ খেলেছিলেন। ৭০ রান করার পাশাপাশি দারুণ সব শট খেলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই তিনিও যারপরনাই ব্যর্থ।
প্রথম সারির ব্যাটসম্যানরা ফিরে যাওয়ার পর শেষ দিকে সাব্বিরদের পক্ষে করার কিছু ছিল না। করতে পারেনওনি।
এক রাবাদাই বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও পাঁচ উইকেট দখল করেন।
রাবাদা এদিন হিউ টেফিল্ড ও অ্যালান ডোনাল্ডের (২২ টেস্টে ১০০ উইকেট) কীর্তিকে ছুঁয়ে ফেলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সবচেয়ে কম ম্যাচ (১৯ ম্যাচ) খেলে ১০০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড ভারনন ফিল্যান্ডারের।
এর আগের গল্পটা বাংলাদেশের জন্য শুধুই হতাশার। দেড়দিনে প্রতিপক্ষের থালায় ৫৭৩ রানের উপহার। এরপর ব্যাট করতে নেমে ৬৫ রানে ছিল না ৫ উইকেট। সেখান থেকে ১৪৭’এ প্রথম ইনিংস শেষ। ফলো অন! আবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ রান নিয়ে কোনোমতে দিন পার। মাত্র দুই দিনেই পরাজয়ের শঙ্কা!
শনিবার ৯০ মিনিট যদি বৃষ্টির পেটে না যেত, তাহলে বাংলাদেশকে আরও আগে হিমঘরে খুঁজতে হতো।
বাংলাদেশের প্রধান চার বোলার ১১০’র বেশি করে রান খরচ করেন। সবচেয়ে বেশি তাইজুল ইসলাম, ২৭ ওভারে ১৪৫। উইকেট নেই। শুভাশিস রায় ৩ উইকেট নিলেও রান দিয়েছেন ১১৮। মোস্তাফিজ আর রুবেল ১১৩ করে। মোস্তাফিজ উইকেটহীন। রুবেলের শিকার একটি।
বোলারদের এমন দশা দেখে ভাবতে পারেন উইকেট বুঝি পাটা। তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। স্বাগতিকরা তো রীতিমতো আগুন ঝরিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে মুশফিক বাদে শুরুর তিন ব্যাটসম্যান-সৌম্য (৯), ইমরুল (২৬) আর মুমিনুল (৪) বাউন্সারে হাঁসফাঁস করতে করতে মরেছেন। মাঝখানে রিয়াদ (৪) চালাকি স্লোয়ারের বলি। এরপর সবাই ক্ষণিকের অতিথি। এসেছেন আর বিদায় নিয়েছেন।
ক্লান্তিকর এক প্রথম দিন শেষে দ্বিতীয় দিন সকালে ‘কিছুটা গোছানো’ ছিল বাংলাদেশি বোলাররা। রুবেল, মোস্তাফিজ এদিন যতটা পেরেছেন লাইনে বল করেছেন। কিন্তু তাতে কী? আমলা আর প্লেসিস শতক তুলে রানপাহাড়ে উঠেই থামেন। সেই পথে হাঁটতে হাঁটতে পথ ভুলে ডুবেই গেল বাংলাদেশ!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
সাউথ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস: ৫৭৩/৪ ডি. (এলগার ১১৩, মার্করাম ১৪৩, আমলা ১৩২, বাভুবা ৭, ডু প্লেসিস ১৩৫অপ. ডি কক ২৮অপ./ শুভাশিষ ১১৮/৩ ও রুবেল ১১৩/১)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৪৭ (ইমরুল কায়েস ২৬, সৌম্য সরকার ৯, মুমিনুল হক ৪, মুশফিকুর রহিম ৭, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪, লিটন দাস ৭০, সাব্বির রহমান ০, তাইজুল ইসলাম ১২, রুবেল হোসেন ২২, মোস্তাফিজুর রহমান ০ ও শুভাশিস রায়; কাসিগো রাবাদা ৩৩/৫, ডুয়ানে অলিভিয়ের ৪০/৩, পারনেল ৩৬/১ ও কেশব মহারাজ ৭/১)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৭২ (ইমরুল ৩২, সৌম্য ৩, মুমিনুল ১১, মুশফিক ২৬, মাহমুদউল্লাহ ৪৩, লিটন ১৮, সাব্বির ৪, তাইজুল ২, রুবেল ৭, শুভাশিষ ১২অপ. ও মোস্তাফিজ ৭; রাবাদা ৩০/৫, ফেলুকোও ৩৬/৩ অলিভিয়ের ৩৯/১ ও পার্নেল ৩১/১) ।