বয়স তখন এগারো কি বারো! কলকাতার এইচএমভি স্টুডিওতে ভাই আর মামার সঙ্গে গিয়েছিলেন গানের অডিশন দিতে। রিহার্সেল ঘরে দেখা হল ঘিয়ে রঙের পাজামা-পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা পড়া এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি মন দিয়ে তার গান শুনলেন। সে দিন সেই বালিকার নিবেদনে ছিল ‘যদি পরাণে না জাগে আকুল পিয়াসা’, পরে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘কালো পাখিটা মোরে কেন করে জ্বালাতন’।
সেই ব্যক্তি গান শুনে তারিফ করে বলেন ‘তোমরা দেখো এই মেয়ে একদিন খুব ভালো গাইয়ে হবে’। সেই ছোট্ট মেয়েটি ছিলেন ফিরোজা বেগম। আর তার মামা পরে মেয়েটিকে জানালেন যিনি এতক্ষণ তার গান শুনলেন তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। বাকিটা ইতিহাস!
সত্যিই, গানের জগতে ফিরোজা বেগমতো ইতিহাস ই! বিশেষত তার গাওয়া নজরুল সংগীত।
বুধবার (২৮ জুলাই) ছিলো কিংবদন্তী এই শিল্পীর জন্মদিন। আর এদিনই ডিজিটাল আর্কাইভে স্থান পেলো তার বিপুল সৃষ্টি! অসাধারণ ও সময়োপযোগী এই উদ্যোগের নেপথ্যে শিল্পীর ভাইঝি সংগীশিল্পী সুস্মিতা আনিস এবং তার পরিবার।
কী, কী রয়েছে এই ডিজিটাল আর্কাইভে?শুরুতেই জীবনী, পুরস্কারের তালিকা, থাকছে গানের ভাণ্ডার। নজরুলের গান, রবীন্দ্রসংগীত, আধুনিক বাংলা গান, কাব্যগীতি, গীত ও গজল। রয়েছে গানের যাবতীয় তথ্য, রিলিজের সন, সুরকার-গীতিকারের নামের পাশাপাশি, প্রকাশক কোম্পানির নামও।
রয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দুর্লভ সংগ্রহ। টেলিভিশন থেকে রেডিও, মঞ্চের অনুষ্ঠান থেকে সাক্ষাৎকার আগ্রহিরা পেয়ে যাবেন এক ক্লিকে। থাকছে বিভিন্ন বাংলা, ইংরেজি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকার, অনুষ্ঠান সমালোচনা, প্রতিবেদন। ফটো গ্যালারিতে রয়েছে তার একার ছবি থেকে পারিবারিক জীবন, সংগীত জীবন, বিভিন্ন দিকপালদের সঙ্গে ছবি। থাকছে তাকে ঘিরে বিভিন্ন প্রজন্মের নানা শিল্পীর কথা।
এর পাশাপাশি রয়েছে হাতে লেখা নোটবুকের কপি, চিঠিপত্র, আরও অনেক কিছু। আছে তার স্বামী প্রখ্যাত সুরকার কমল দাশগুপ্তের জীবনী, গানের খাতার প্রতিলিপি, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন, গান এবং ছবি। কমল দাশগুপ্তের সুরে ফিরোজা বেগমের বহুল প্রচলিত গান গুলোর মধ্যে ‘আমি বনফুল গো’, ‘এমনই বর্ষা ছিল সেদিন’, ‘মোর জীবনের দুটি রাতি’, ‘মাটির এ খেলাঘরে’ অন্যতম।