চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগীকে লুট করা হয়

১.
‘ভুল চিকিৎসা’ নিয়ে সাংবাদিকদের রিপোর্টে ডাক্তারদের ক্ষ্যাপা স্বাভাবিক। চিকিৎসাটা যে ভুল হইছে, এটা কেবল অন্য কোনো ডাক্তারই শনাক্ত করতে পারেন। কোনো সাংবাদিক নয়। মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল ভাংচুরের ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা বড়জোর লিখতে পারেন, ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে। ‘ভুল চিকিৎসা’য় রোগীর মৃত্যু, এটাও ভুল সাংবাদিকতা। 

২.
ডাক্তার নয়, কসাই অন্য কেউ।

উনাদের আপনি দেখবেন না। উনারা বেশিরভাগই ডাক্তার নন। চিকিৎসা ব্যবসায়ী।

ওয়ার্ডে ডাক্তার না থাকাটা ডাক্তার সাহেবের দোষ না, ম্যানেজমেন্টের দোষ। যে সব ডাক্তার ম্যানেজমেন্টের অংশ হয়ে যান, তারা আসলে আর ডাক্তার থাকেন না। তাদের চেহারা রোগীরা সচরাচর দেখে না।

ডাক্তার আসলে কসাইখানার সেলসম্যান।

৩.
যে কোনো ডেলিভারির পর (নরমাল বা সিজার) পর নবজাতককে এনআইসিইউতে ঢুকানোর একটা রেওয়াজ চালু হয়েছে। এটা প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ বা ক্লিনিকের একটা ব্যবসায়িক উদ্যোগ। কারণে-অকারণে নানা অজুহাত দেখিয়ে শিশুদের এনআইসিইউতে নেয়া হয়। অনেক হাসপাতালেই ভূমিষ্ঠ শতভাগ শিশুকেই এনআইসিইউ ঘুরে আসতে হয়েছে। অনেক হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ড না থাকলেও এনআইসিইউ আছে। ধরুন, একটা শিশুর এনআইসিইউতে থাকার দরকার নাই, কিন্তু স্যালাইন-অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শেষ করার জন্য হাসপাতালে থাকা দরকার। তখন শিশুটিকে কোথায় রাখা হবে? 

একাধিক ক্লিনিক ও হাসপাতালের নার্সদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এনআইসিইউতে শিশু ভর্তি না করাতে পারলে পোস্ট-অপারেটিভ ওয়ার্ডের নার্স-স্টাফদের জবাবদিহিতা করতে হয়। জন্মের পর সামান্য হাঁচি, দুয়েকবার বমি হইলেই হাতে ক্যানোলা দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন শুরু করে দেয়া হয়। ৫ দিনের অ্যান্টিবায়োটিক ডোজ, মানে আপনি অশিক্ষিত বা সচেতন না হইলে ৫ দিন বাচ্চাটাকে এনআইসিইউতে রাখবেন। বিল আসবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। 

৪. 
রাজধানীর এনআইসিইউসমৃদ্ধ হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো চিকিৎসাখাতের সনাতন দালালিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিটিভদের ‘মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ’ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এনআইসিইউ নাই, এমন হাসপাতাল থেকে নবজাতক সংগ্রহ করাও এই মার্কেটিং এক্সিকিউটিভদের দায়িত্ব। একটা হাসপাতালে যদি ১৪টা এনআইসিইউ বেড থাকে, প্রতি রাতে তার আয় কমপক্ষে ৭০ হাজার টাকা। মাসিক ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতনের এক জন জুনিয়র ডাক্তার ও দুই জন নার্স এই ওয়ার্ড সামলান। বুঝতেই পারছেন লাভের পরিমাণ কতো হতে পারে। 

৫.
বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের এই বাটপারি নিয়ে মূলধারার মিডিয়ায় অনুসন্ধানী রিপোর্ট নেই। নিন্দুকরা বলে থাকেন, অনেক সাংবাদিকই লাভজনক এই হাসপাতাল ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)