ডলফিন হত্যাকারীকে চিহ্নিত করা ও আইনের আওতায় আনতে সহায়তাকারী বন বিভাগের কর্মীদের পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
আন্তর্জাতিক মিঠা পানির ডলফিন দিবস উপলক্ষে আগারগাঁওয়ের বন অধিদপ্তরে আয়োজিত আলোচনায় পাঠ্যসূচীতে বিপন্ন প্রাণি ও পরিবেশ শিক্ষা যুক্ত করতে প্রস্তাব তৈরীর নির্দেশন দেন শাহাব উদ্দিন। মিঠা পানির ডলফিন রক্ষায় নতুন করে গবেষণা প্রকল্প নেওয়ার নির্দেশ দেন পরিবেশমন্ত্রী।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার, বলেন, ডলফিন নদীর প্রতিবেশ ব্যবস্থাকে উন্নত করে। মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির জন্য ডলফিন সুরক্ষার নির্দেশ দেন উপ-মন্ত্রী। ডলফিনের পাশাপাশি অন্য বিপন্ন প্রাণি সুরক্ষায় উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশ দেন বেগম হাবিবুন নাহার।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পরিবেশবিদ মুকিত মজুমদার বাবু ডলফিনসহ বিপন্ন প্রাণি রক্ষায় ব্যপক ভিত্তিক জনসচেতনতা তৈরীতে পাঠ্যসূচীতে বন্যপ্রাণি রক্ষার গুরুত্বের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব করেন।
বিদ্যমান আইন সংস্কার করে বন্যপ্রাণি হত্যা ও পাচারে দণ্ড বাড়ানোর পরামর্শ দেন পরিবেশবিদ মুকিত মজুমদার বাবু। জেলেদের মধ্যে ব্যপক সচেতনতা তৈরীর মাধ্যমে ডলফিনের মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মত দেন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ-আইইউসিএন বাংলাদেশ এর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ রাকিবুল আমীন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র হুমকিতে থাকায় আগামী এক দশকে বাংলাদেশের সংরক্ষিত ৩০ শতাংশ এলাকার বাইরের ৭০ শতাংশ এলাকার পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কৌশল নির্ধারণে তার সংস্থা সহায়তা করবে।
পরিবেশবিদ মুকিত মজুমদার বাবুর বক্তব্য সমর্থন করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আগামী প্রজন্মকে শিক্ষা দিতে হবে। তাই বিপন্ন যত প্রাণি আছে তা পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করতে হবে।
প্রধান বন সংরক্ষক ও আয়োজরেন সভাপতি মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী মিঠা পানির ডলফিনকে জাতীয় জলজ স্তন্যপায়ি প্রাণি হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব পুনঃব্যক্ত করেন। ৭০ শতাংশ ডলফিন জেলেদের জালে আটকে মারা যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান বন সংরক্ষক বলেন বিষয়টি নিয়ে জেলেদের মাঝে ব্যপক গণসচেতনতায় কাজ করছে বন অধিদপ্তর।
স্বাগত বক্তব্যে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল, ঢাকা এর বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল করিম বলেন, সুন্দরবনের তিনটি অভয়ারণ্যে ডলফিনের সংখ্যা ৫৫ শতাংশ বেড়েছে, যা দেশের ডলফিন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে।এ ধারা অব্যহত রাখতে বন বিভাগের সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
আয়োজনে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণি বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান ও বন বিভাগের টেকসই বন ও জীবিকা বা সুফল প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মদিনুল আহসান। অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা সংরক্ষণে বিশেষ অবদান রাখছে। ব্যবস্থাপনায় দূর্বলতা তুলে ধরে ডলফিন সংরক্ষণে রক্ষিত অঞ্চল বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
মদিনুল আহসান বলেন, দেশে ১০ সংরক্ষিত অঞ্চল রয়েছে মিঠা পানির ডলফিন ও নোনা পানির ডলফিন রক্ষায় রক্ষিত এলাকা বাড়ানোর কথা জানান। দেশে বর্তমানে এক লক্ষ ৭৩ হাজার ৮শ’ হেক্টর এলাকা ডলফিনের জন্য সংরক্ষিত বলে জানান মদিনুল আহসান।