বাংলাদেশের প্রথম নারী কবি বলা হয় চন্দ্রাবতীকে। মলুয়া, দস্যু কেনারামের পালা এবং রামায়ণ তার অন্যতম সৃষ্টি। তবে তার সৃষ্টির চেয়ে ঢের বেশি নাটকীয় এবং একইসঙ্গে বিয়োগান্তক তার নিজের জীবন।
ষোড়শ শতকের অসম্ভব প্রতিভাবান ও সংগ্রামী এই নারীকে নিয়ে আসছে অক্টোবরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘চন্দ্রাবতী কথা’। সিনেমাটির মুক্তি সামনে রেখে সোমবার সন্ধ্যায় এলো ট্রেলার।
২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ট্রেলার প্রকাশের পর এন. রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতী কথা’ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বহু দর্শক। আগ্রহী হয়ে উঠেছেন সাধারণ চলচ্চিত্রপ্রেমীরাও। ট্রেলারে চন্দ্রাবতীর জীবনের বিচ্ছিন্ন কিছু দিক উঠে এসেছে। চ্যানেল আই অনলাইনকে নির্মাতা এন রাশেদ চৌধুরী জানান, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর মর্মন্তুদ ক্ষণগুলো পেরিয়ে – স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা বজায় রেখে- ‘বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেড’ এর নিবেদনে এবং ‘জাজ মাল্টিমিডিয়ার’ পরিবেশনায়- আগামী ১৫ অক্টোবর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে ‘চন্দ্রাবতী কথা’ মুক্তি পেতে যাচ্ছে।
সিনেমাটি চন্দ্রাবতীর সারাজীবনের একটি গল্প, তাই এর পরিধিও বড়। চন্দ্রাবতীর জীবন দেখানোর সাথে সাথে সিনেমায় ওই সময়ের সামাজিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপট, ঘটনা এবং পারফর্মেন্স স্টাইলও উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন নির্মাতা এন রাশেদ চৌধুরী।
এ বিষয়ে তিনি আগেই চ্যানেল আইয়ে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ছবিটা চন্দ্রাবতীর জীবনী নির্ভর হলেও সমসাময়িক সহজিয়া সমাজ জীবন ও ঐতিহাসিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের মিথস্ক্রিয়া এছবির অন্যতম অনুষঙ্গ। ছবিতে পূর্ববঙ্গের হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী অভিনয় রীতি সমূহের নানা ফর্মকেও ট্রিবিউট করার প্রচেষ্টা রয়েছে।
চন্দ্রাবতীর জন্মস্থান কিশোরগঞ্জে রিয়েল লোকেশনেই ছবির পুরো শুট করা হয়েছে। ছবিতে গ্রামের সাধারণ মানুষেরাও অভিনয় করেছেন বলে জানান রাশেদ চৌধুরী। বিশেষ করে পালাকার বা বয়াতি-এরকম চরিত্রগুলোতে সেখানকার গ্রামের মানুষই অভিনয় করেছেন।
সেন্সর বোর্ডে প্রায় এক বছর সিনেমাটি আটকে থাকার পর চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ছাড়পত্র পায় এন রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতী কথা’। এরআগে ২০১৯ এর নভেম্বরে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগে প্রদর্শনের মাধ্যমে ‘চন্দ্রাবতী কথা’র ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পৃথিবীর বেশ কিছু চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শীত হয় সিনেমাটি।
সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ম্যানগ্রোভ পিকচারস ও বেঙ্গল ক্রিয়েসন্স-এর প্রযোজনায় ‘চন্দ্রাবতী কথা’র কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মডেল ও অভিনেত্রী দোয়েল ম্যাশ এবং চন্দ্রাবতীর প্রেমিক জয়ানন্দের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এছাড়া আরো অভিনয় করেছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মিতা রহমান, গাজী রাকায়েত, আরমান পারভেজ মুরাদ, নওশাবা আহমেদ, জয়িতা মহলানবিশ প্রমুখ।
ছবির সম্পাদনা ও শব্দ সংযোজনে ছিলেন যথাক্রমে পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত সম্পাদক শঙ্খ ও শব্দগ্রাহক সুকান্ত মজুমদার। এর কালার কারেকশন ও পোস্ট এর অন্যান্য কাজ হয়েছে কলকাতার চেরীপিক্স এ। ছবির সংগীতায়জনে ছিলেন কলকাতার খ্যাতনামা লোকংগীত শিল্পী সাত্যকি ব্যানার্জী। ‘চন্দ্রাবতী কথা’ সিনেমায় অনন্য এক বিচ্ছেদী ভাটিয়ালি গান গেয়েছেন স্থানীয় রামায়ণ-পালা শিল্পী শংকর।