চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘ট্রাম্পের রাজনীতির শেষ, নাকি শুরু’

ট্রাম্পের চেয়ে আমেরিকায় ‘ট্রাম্পোইজম’ অধিক শক্তিশালী, আমেরিকার রাজনীতি নিয়ে আলোচনায় ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কেন্দ্রবিন্দুতে রাখলে মূল পরিস্থিতি আড়ালেই থেকে যাবে। আমেরিকায় ব্যক্তি ট্রাম্পের চেয়েও ট্রাম্পোইজম বা ট্রাম্পের রাজনীতি অনেক বেশি শক্তিশালী। ট্রাম্পের রাজনীতির উপাদানগুলোর দিকে মনোযোগ না দিলে ঘুরে ফিরে ট্রাম্পের রাজনীতিই আমেরিকায় প্রধান হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেছেন উত্তর আমেরিকার রাজনীতি বিজ্ঞানী ও বিশ্লেষকরা।

বুধবার স্থানীয় সময় রাতে টরন্টো থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভ’ অনুষ্ঠানে ‘ট্রাম্পের রাজনীতির শেষ নাকি শুরু’ শীর্ষক আলোচনায় তারা এ অভিমত প্রকাশ করেছেন।

তারা বলেন, আমেরিকার শাসন ব্যবস্থা শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা কিংবা ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনা আমেরিকার গণতন্ত্রকে কোনো সংকটে ফেলবে না। কিন্তু সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে বৈষম্য আছে সেগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর এর সঞ্চালনায় এতে আলোচনায় অংশ নেন কানাডার ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আহমেদ শফিকুল হক, টেক্সাসের এ অ্যান্ড এম ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিজ্ঞানের সহযোগি অধ্যাপক ড.মেহনাজ মোমেন এবং কানাডা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন সম্পাদক, গণমাধ্যম বিশ্লেষক ও সাংবাদিক সৈকত রুশদী।

অধ্যাপক ড. মেহনাজ মোমেন আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, আমেরিকার সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং রাজনীতি নিয়ে আলোচনায় মিডিয়া থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবীরা খালি চোখে যা দেখা যায় তা নিয়েই কথা বলছেন। কিন্তু এর বাইরে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে যা আমেরিকা বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়েও তার রাজনীতি (ট্রাম্পোইজম) অনেক বেশি শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিকটাকে আলোচনায় আনতে হবে।

ড. মেহনাজ মোমেন আরও বলেন, গত ১৫/ ১৬ বছরে আমেরিকায় ডান এবং বামপন্থী- দুটি জনপ্রিয় গণজাগরণ তৈরি হয়েছে। বার্নি স্যান্ডার্সে নেতৃত্বে তৈরি হ্ওয়া বাম জাগরণে সমাজের এলিট সম্প্রদায়ের সমর্থন এবং সম্পৃক্ততা ছিলো। কিন্তু ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন ডানপন্থী জাগরণে এলিট শ্রেণীর সাথে সাধারণ নাগরিকরাও যোগ দিয়েছে। তার ফলশ্রুতিই আজকের আমেরিকা এবং ট্রাম্পের রাজনীতি।

অধ্যাপক ড. আহমেদ শফিকুল হক বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ের মধ্য দিয়ে আমেরিকার রাজনীতিতে ভদ্রতা এবং সৌজন্যতা তৈরি হবে। রাজনৈতিক দলগুলো ও তাদের প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারে আরো যত্নশীল হবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিজ্ঞতা রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতিতে আরো যত্নবান হতে সহায়তা করবে।

তিনি প্রশ্ন করেন, আমেরিকা সারা দুনিয়ায় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে, কোথায় কি হচ্ছে সেই তথ্য তারা সবার আগে জেনে যায়, অথচ নিজ দেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রে এমন একটি সহিংস ঘটনার খবর তারা আগেভাগে জানতে পারলেন না কিভাবে?

ড. আহমেদ শফিকুল হক আরও বলেন, যে কোনো সমাজেই অনেক রকম বৈষম্য থাকে। কিছু কিছু গোষ্ঠী বৈষম্যগুলো ব্যবহার করে জনগণকে উসকে দেয়। এই বৈষম্যগুলো এবং মৌলিক সমস্যাগুলো নিয়ে অবশ্যই আমেরিকার নতুন সরকারকে আরো মনোযোগি হতে হবে।

গণমাধ্যম বিশ্লেষক ও সাংবাদিক সৈকত রুশদী তার বক্তৃতায় বলেন, কানাডা নিউজিল্যান্ডসহ হাতে গোনা কয়েকটি দেশ বাদ দিলেই বিশ্বব্যাপী এখন ডানপন্থী রক্ষণশীলদের উত্থান পর্ব চলছে। ট্রাম্পের বিদায়ের মধ্য দিয়ে আমেরিকার রাজনীতি থেকে ডানপন্থীদের প্রভাব কমে যাবে-তেমনটা ভাবার সুযোগ কম। লিবারেলরা অল্পতেই সন্তষ্ট হয়ে হাতগুটিয়ে বসে থাকে। কিন্তু রক্ষণশীলরা কোনো সহজে কিছুতেই সন্তষ্ট হয় না, তাদের পরিপূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তারা সক্রিয় থাকে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেসবুক এবং টুইটার একাউন্ট বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সৈকত রুশদী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের টুইটার, ফেসবুকে একাউন্ট বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা একটি কর্পারেশনের হাতে ছেড়ে দেয়া ভালো কথা না। তিনি এই বিষয়ে অান্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আলোচনা-বিতর্কের প্রস্তাব করেন।

নতুনদেশ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যকে কাজে লাগিয়ে অভিবাসীপ্রধান দেশগুলোয় রক্ষণশীল রাজনীতির বিকাশ ঘটানো হচ্ছে। উদারপন্থী রাজনৈতিক দল এবং সরকারগুলো এই বৈষ্যম দূরীকরণের উদ্যোগ না নিলে ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোতে চরমপন্থার বিকাশের মাধ্যমে অভিবাসী বিরোধী মনোভাব প্রকট হয়ে উঠবে।