রঙিন পোশাকে দেশের সেরা বোলার মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা টি-টুয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন এক বছরেরও বেশি সময় আগে। এ ডানহাতি পেসারকে সংক্ষিপ্ত সংস্করণে না পাওয়া নিয়ে আক্ষেপ, আফসোস যেন ক্রমেই ডালপালা মেলতে শুরু করেছে।
বল হাতে ধারাবাহিকভাবে ওয়ানডে অধিনায়কের পারফরম্যান্স যোগান দিচ্ছে আফসোসের পালে হাওয়া। ইশ, মাশরাফী যদি টি-টুয়েন্টি খেলতো! বিকেএসপির সাবেক কোচ, বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির ম্যানেজার নাজমুল আবেদিন ফাহিমের কন্ঠেও শোনা গেল এমন আপ্তবাক্য।
‘আমার মাঝে মাঝে মনে হয় টি-টুয়েন্টিতে যদি মাশরাফী থাকতো চারটা ওভারের চমৎকার বোলিং পেয়ে যেতাম। দুর্ভাগ্য ও নেই। মাশরাফী যখন বল করে আমি নিশ্চিন্ত মনে থাকি। তার মানে এই না যে চার বা ছয় তাকে হজম করতে হয় না। কিন্তু ব্যাটসম্যান চাপের মধ্যে থাকবে এটা মাশরাফী খুব ভাল বোঝে।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার মাশরাফী। ৫টি করে উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে মোস্তাফিজুর রহমান ও রুবেল হোসেন। রান দেয়ার দিক থেকেও এই দুই বোলারের চেয়ে কৃপন ছিলেন মাশরাফী। ইকোনমি ৪.৯৬। মোস্তাফিজের ৫.৩৫ আর রুবেলের ৬.১২।
নড়াইল এক্সপ্রেসের বলে আগের মতো গতি নেই। ১২০-১২৫ কিলোমিটার বেগে বল করেও ক্যারিবীয় পেসার হোল্ডার, জোসেফদের চেয়ে কীভাবে এগিয়ে যান সেটি হয়তো অনেকের কাছে রহস্য। মাশরাফীর উঠে আসা দেখা নাজমুল আবেদিনের মতে, বোলিং সেন্স ও ব্যাটসম্যানের গতিবিধি বুঝে ফেলতে পারার দূরদর্শিতাই মাশরাফীকে নিয়ে এসেছে ঈর্ষনীয় স্থানে।
‘মাশরাফী নিঃসন্দেহে আমাদের সেরা বোলার। ওর সেন্স, ওর বোলিং বোধ এটা খুব কম মানুষের মধ্যে আছে। কারণ অন্যদের যে পেস সেটা কিন্তু মাশরাফীর নেই। ওর বোঝাপড়া এত ভালো, এত চমৎকার…। অ্যাঙ্গেল বোঝে, এত চমৎকার পরিস্থিতি বোঝে! ব্যাটসম্যান কী করতে চাইছে সে অনুযায়ী বল করে। ও বল করে দেখে না ব্যাটসম্যান কী করল। ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই ওর হিসেবটা মিলে যায়। মারাত্মক আত্মবিশ্বাসী। ও পারে বলেই আত্মবিশ্বাস আসে।’
ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে তিন ম্যাচেই এভিন লুইসের উইকেট নিয়েছেন মাশরাফী। শুরুতেই উইকেট তুলে নিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে রেখেছেন দারুণ ভূমিকা।
গায়ানায় প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে একাই পার্থক্য গড়েন মাশরাফী। পরের ম্যাচে দুটি ও সেন্ট কিটসে শেষ ম্যাচে নেন একটি উইকেট। ৬ নম্বরে নেমে ২৫ বলে ৩৬ রানের ইনিংসও হয়েছে প্রশংসনীয়। এসবের বাইরে দূরদর্শী নেতৃত্বের ব্যাপার তো থাকছেই।
স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে অনিশ্চিত ছিল মাশরাফীর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। সেভাবে নিতে পারেননি প্রস্তুতি। অনুশীলনের ঘাটতির কথা মুখ ফুটেই বলেছিলেন অধিনায়ক। তারপরও যুদ্ধের ময়দানে জয়ী বীর মাশরাফী। টেস্ট সিরিজের দুর্দশা কাটিয়ে দারুণ এক মোমেন্টাম এনে দিয়েছেন পুরো দলকে। বল-ব্যাটের পারফরম্যান্স আর নেতৃত্বগুনে।
এমন একজন ‘পারফেক্ট’ ক্রিকেটারকে টি-টুয়েন্টিতে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কায় যেভাবে তাকে অবসর নিতে কীভাবে বাধ্য করা হয়েছিল সেটি কারও অজানা নেই। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা মন থেকে মুছে ফেলতে পারেননি অধিনায়ক। কত বড় ভুল হয়ে গেছে সেটি বুঝতে পেরে টি-টুয়েন্টিতে ফিরতে অনুরোধও করা হয়েছিল বিসিবির পক্ষ থেকে। সম্মানের দিকে তাকিয়ে ‘না’ তেই অটল থেকেছেন মাশরাফী।
দলের অন্য সদস্যরা যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি সিরিজের প্রস্তুতি নেবেন মাশরাফী তখন ধরবেন দেশের পথ। দারুণ ফর্মে থেকেও বাংলাদেশের হয়ে টি-টুয়েন্টি খেলতে না পারার ব্যাপারটা হয়তো আক্ষেপ যোগাবে মনে। এ মুহুর্তে মাশরাফীর সাত্ত্বনা হতে পারে ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি। যেটির দিকে তাকালে নিশ্চয়ই গর্বে ভরে উঠবে বুক।