এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে ফেভারিট মানলেও দলগত পারফরম্যান্সের ওপর ভরসা
রাখছেন মাশরাফি। বাড়তি চাপ না নিয়ে বিগত দুই ম্যাচের মতো শুরুটা ভালো করে
শেষ অবধি ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান তিনি।
মিরপুরে ম্যাচের আগের দিন প্রেস কনফারেন্সে টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা জানান,
নিজেদের মাঠ, দর্শকের অকুণ্ঠ সমর্থন তাদের সঙ্গে আছে। ভারত শক্তিশালী দল
হলেও দলীয়ভাবে খেলতে পারলে বাংলাদেশের জন্য ভালো সুযোগ আছে ম্যাচ জেতার।
ফাইনালের আগে সাবলীলভাবে মাশরাফি বললেন, ‘ক্লিয়ারলি ইন্ডিয়া ফেভারিট এইটা সবাই জানে। এখানে আলাদা করে চিন্তা করার তো কিছু নাই। আমরা যেটা করতে পারি সেটা হলো টিম হিসেবে খেলা। বাংলাদেশের টি-টুয়েন্টি বাস্তবতায় দু-একজন একাই ম্যাচ জেতাবে এমন অবস্থা এখনো দলের হয়নি। তবে আমাদের ভালো সুযোগ আছে। মাঠ আমাদের, দর্শকরাও আমাদের সঙ্গে আছে।’
‘কিন্তু ক্রিকেটে কোনো কিছুকে শেষ কথা বলে ধরে নেয়ার কিছু নাই। সব কিছু আপনার পক্ষে থাকলে যে দিনটি আপনারই হবে সেরকম কিছু না। আমি বরং আগের দু’টো ম্যাচের মতোই খেলতে চাই। আমরা যদি শুরুটা গত ম্যাচগুলোর মতো ভালো ভাবে শুরু করে শেষ পর্যন্ত নিতে পারি তাহলে অবশ্যই ভালো সুযোগ আছে আমাদের’।
ওয়ানডেটে টাইগার সফলতা দেখেছে বিশ্ব। তবে টিটুয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ এখনো পূর্ণসক্ষমতার উজ্জ্বল কোনো দৃষ্টান্ত রাখতে না পারলেও ধীরে ধীরে সেখানেও নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে জোরেশোরে। সাম্প্রতিক সফলতা নিয়ে আশাবাদী দলের কাণ্ডারি শোনালেন সম্ভাবনার কথা।
মাশরাফি বলেন,’ আমি মনে করি গত দুই-তিন মাস আগের তুলনায় এখন আমরা আরও ভালো খেলছি। তবে এখনো যেতে হবে বহুদূর। অনেক কিছুতেই উন্নতি করতে হবে, বিশেষ করে টিটুয়েন্টিতে’।
ক্যারিয়ারের বড় ম্যাচ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,’ সেক্ষেত্রে অবশ্যই তা ২০১৫ সালে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটির কথা বলবো। তবে অবশ্যই আগামীকালের ম্যাচটি হবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। যদি তুলনা করি তাহলে ওই ম্যাচটিই বড় ম্যাচ ছিলো। কারণ ৫০ ওভারের ক্রিকেট তার ওপর সেটি ছিলো বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের ম্যাচ’।
নানা গুঞ্জন আর প্রতিহিংসামূলক উস্কানির ধোঁয়াকে উড়িয়ে দিয়ে মাশরাফি বললেন,’ এগুলো আসলে আমাদের চিন্তা করার বিষয় না। পেশাদার খেলোয়ার হিসেবে আমাদের উচিৎ এখন থেকেই ম্যাচ নিয়ে পরিকল্পনা করা এবং আমরা সেটাই চাচ্ছি, করছি। ছেলেরা যতোদূর সম্ভব নর্মাল থাকার চেষ্টা করছে। টুর্নামেন্টের শুরুতেই আমি বলেছিলাম আমরা এখানে অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে ছিলাম না। আমরা শুধু এই টুর্নামেন্টে আগের তুলনায় উন্নতি করার চেষ্টা করেছি’।
ভারতের ব্যাটিং শক্তি আর নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধিনায়কের জবাব,’ভারতের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই। তাদের টপ অর্ডারে ৬ জন বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান আছে এবং তারা সব ফরম্যাটেই পারদর্শী। তাদেরকে বিশেষভাবে আটকানোর সুযোগ নেই। তাই ২০ ওভারই ভালো বোলিং করতে হবে, রান সীমিত রাখারও চেষ্টা করতে হবে’।
ভারতকে ফেভারিট মানলেও দর্শকের আবেগ-সমর্থন এবং নিজেদের সক্ষমতার প্রতি আস্থা রাখেন বাস্তবতা নির্ভর ক্যাপ্টেন মাশরাফি। টাইগার সমর্থকদের সম্পর্কে মাশরাফি বলেন,’ দেখুন আমাদের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো আমাদের দর্শক-সমর্থক। তারা না থাকলে আমরা এতোটা অনুপ্রেরণা পেতাম না। আমাদের ক্রিকেট এই পর্যায়ে আসার পেছনে বাংলাদেশের মানুষের অনেক অবদান-আত্মত্যাগ আছে। এজন্য কালকের ম্যাচে এই দর্শক-সমর্থন হবে বিশাল পাওয়া। এই ম্যাচ ঘিরে আবেগ থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ এরকম উপলক্ষ্য সবসময় আসেও না’।
ইনজুরিতে মুস্তাফিজের খেলতে না পারার আফসোস মাশরাফির কণ্ঠে,’ এই মুহুর্তে আমরা আমাদের সেরা বোলারকে ছাড়া খেলছি। কিন্তু তার অনুপস্থিতি তাসকিন, আল-আমিন ভালো বোলিং করেছে। উঠতি দলের জন্য তরুণ খেলোয়ারদের এই নৈপুণ্য ভালো লক্ষণ যে তারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে ‘।
ফাইনালে দলের দৃঢ় মনোভাব প্রকাশ পেলো অধিনায়কের কথায়,’ আমরা বিশ্বাস করি ফাইনাল ম্যাচ তারাই জেতে যারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এখানে সিদ্ধান্ত মানে হচ্ছে জরুরি কোনো সিদ্ধান্তে দ্বিধা করে না’।