রাইসা জান্নাত: ঘড়িতে রাত ১০টা ২৯ মিনিট অধীর আগ্রহে টিভির সামনে বসে আছে দীপ্ত। আর মাত্র এক মিনিট বাকি। তারপরেই শুরু হবে তার পছন্দের সিরিয়াল ‘রাখি বন্ধন’। আট বছরের শিশু দীপ্ত সবে ক্লাস ওয়ানে উঠেছে। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে সে এই সিরিয়ালটি দেখে, না দেখা পর্যন্ত তার স্বস্তি নেই। কোনো দিন মিস হয়ে গেলে পরের দিন ঠিকই পুনঃপ্রচার দেখে।
ভারতীয় টিভি চ্যানেল ‘স্টার জলসা’য়’ এই সিরিয়াল অনেক শিশুর কাছেই বেশ জনপ্রিয়। এই সিরিয়ালের মূল গল্প দুটো ছোট ছেলেমেয়েকে নিয়ে। রাখি আর বন্ধন। ছোটবেলায় বাবা-মা দু’জনকেই হারিয়ে ফেলে। ছোট্ট রাখিকে আগলে রাখে তার দাদা বন্ধন। বোনের ইচ্ছাই যেন তার কাছে সব। তাই শত বিপত্তির মাঝেও বোনের ইচ্ছা পূরণে দাদা অটল। স্বপ্ন দেখে বোন একদিন অনেক বড় হবে। সে নিজে পড়ালেখা করতে না পারলেও বোনকে ভালোভাবে পড়াশোনা শেখাতে চায়। এ রকম কাহিনী নিয়ে নির্মিত সিরিয়ালটি।
ভাই বোনের ভালোবাসা আর ছোট্ট রাখির চটপটে অভিনয় ভালো লাগে বলে দীপ্ত’র মত আরও অনেক শিশুর কাছে এটি অত্যন্ত প্রিয়। সম্প্রতি ভারতীয় চ্যানেলের পাশাপাশি দেশি অনেক চ্যানেলে বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সিরিয়াল বাংলা ভাষায় ডাবিং করে সম্প্রচার করা হচ্ছে। যেমন- হাতিম, সিন্ডারেলার বোন ইত্যাদি। এসব সিরিয়ালের বিভিন্ন চরিত্রের ওপর শিশুরা আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। এই চরিত্রগুলোকে তারা ‘বাস্তব’ বলে ধরে নিচ্ছে। ফলে টেলিভিশনের বাস্তব এবং বিদ্যমান বাস্তব এর মধ্যে পার্থক্য শিশুরা বুঝতে পারছে না।
এর ফলে রাখি কিংবা বন্ধন এই চরিত্রগুলো কোমলমতি শিশুদের জগত জুড়ে বিরাজ করছে। তাই তারা যা করে শিশুরা বাস্তবে সেগুলো অনুকরণের চেষ্টা করে। শুধু তাই নয়, এসব সিরিয়ালে যে ধরনের পোশাক, খেলনা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় শিশুরাও সেই ধরনের জিনিসপত্র পেতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এসব সিরিয়াল নিঃসন্দেহে শিশুদের শৈশব কেড়ে নিচ্ছে। নষ্ট করে দিচ্ছে শিশুদের সৃজনশীলতা।
বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে ছবি আকাঁ, গান শেখা, খেলাধুলা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের সাথে। শিশুরা ছোটবেলা থেকে নানাবিধ প্রভাবক দ্বারা চালিত হয়। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিষ্ঠান। আর ব্যস্ততম এই সময়ে অন্যতম একটি প্রভাবক হল টিভি। যা শিশুদের মনোভাব জোরদারে সাহায্য করে থাকে।
তাই টেলিভিশনে এসব সিরিয়ালের পরিবর্তে উপভোগ্য, শিক্ষণীয় অনুষ্ঠান প্রচার করার ক্ষেত্রে কর্পোরেট মিডিয়াগুলোর নজর দেয়া অত্যন্ত জরুরি।