চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

টিভির ফাঁদে শিশু!

সারাক্ষণই টিভির সামনে বসে থাকে সন্তান। টিভি না ছাড়লে খেতেও চায় না। এমনকি খেলাধুলাও করার আগ্রহ কম। সারাক্ষণ শুধু টেলিভিশনের পর্দায় তাকিয়ে থাকার নেশা। বর্তমান যুগের বেশিরভাগ শিশুর মতো আপনার সন্তানও যদি এরকম হয়ে থাকে, তাহলে এখনই আপনাকে সতর্ক হতে হবে। কারণ অতিরিক্ত টিভি–আসক্তির আছে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব।

টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং বিজ্ঞাপন, শিশুদের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। বিনোদনের এই মাধ্যমটি শিশুদের জীবন থেকে তাদের সুন্দর শৈশব কেড়ে নিতে পারে। যে বয়স সবুজ ঘাসে দৌড়ে বেড়ানোর, সেই বয়সটাই টিভির রঙিন পর্দায় আঁটকে গেছে।  বাস্তব আর ফ্যান্টাসির পার্থক্য বোঝে না শিশুরা। তাই টিভির পর্দায় যা দেখে, সেটাকেই বাস্তব মনে করে তারা।

শিক্ষামূলক কিছু অনুষ্ঠান অনেক চ্যানেলেই দেখানো হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশুরা সিনেমা, গান, সিরিয়ালের গ্ল্যামারে আকৃষ্ট হয়ে সেগুলোর প্রতি আসক্ত হয়ে যায়। তাদের প্রিয় চরিত্ররা যখন ধুমপান বা মদ্যপান, ফাস্ট ফুডের বিজ্ঞাপন, ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যে অভিনয় কিংবা আপত্তিকর দৃশ্যে অভিনয় করে, তখন সেগুলো শিশুদেরকে প্রভাবিত করে।

টেলিভিশনের পর্দায় সহিংসতা :

অনেকেই অভিযোগ করেন যে, তাদের সন্তানরা সুপার হিরো কিংবা নায়কদের স্টান্ট অনুকরণ করতে গিয়ে উঁচু স্থান থেকে লাফিয়ে পরে কিংবা রেসলিং এর অনুকরণ করে হিংস্র ভাবে মারামারি করে। এভাবে অনেক সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলে তারা। টেলিভিশনের পর্দার সহিংসতা দেখানোর মূল তিনটি বিরূপ প্রভাব হল—

  • অন্যের ব্যথা এবং সমস্যায় অনুভূতিহীন থাকবে।
  • চারপাশের সব কিছুকেই ভীতিকর মনে হবে।
  • চারপাশের সবার সাথে আক্রমণাত্মক আচরণ করবে।

অভিভাবকদের করণীয় :

শিশুদের টিভি দেখা একদম বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব না। তাই সন্তানের টিভি দেখার ব্যাপারে অভিভাবকদেরকে সচেতন হতে হবে। জেনে নিন একজন অভিভাবক হিসেবে করণীয় সম্পর্কে।

  • সন্তানের সাথে একসাথে টিভি দেখুন। কোনও সংহিসতা দেখানো হলে সেটার ব্যাপারে সন্তানের সাথে আলোচনা করুন। তাকে বুঝিয়ে বলুন যে, এধরনের মারমুখো আচরণ কী কারণে করা হচ্ছে এবং সেটা কতটা বেদনাদায়ক।
  • সন্তানকে বুঝিয়ে দিন যে, মারপিটের দৃশ্যগুলো আসল নয় বরং ক্যামেরার ধোঁকা। ফ্যান্টাসি দৃশ্য, স্টান্ট, অ্যানিমেশন ইত্যাদির ব্যাপারে তাকে ধারণা দিন। প্রয়োজনে ইউটিউবে এসব মারপিট দৃশ্যের শুটিং দেখিয়ে সন্তানকে বোঝান।
  • সন্তানকে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান এবং সামাজিকতা শেখায় এমন অনুষ্ঠান দেখানোর ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলুন।
  • গল্পের বই পড়া, খেলাধুলা, ছবি আঁকা কিংবা বেড়াতে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করুন। পারিবারিক অনুষ্ঠান কিংবা আড্ডায় সন্তানকে সাথে রাখুন।
  • সন্তানের টিভি দেখার সময় নির্ধারণ করে দিন। সারাদিনে দুই ঘন্টার বেশি টিভি দেখতে দেবেন না।
  • সন্তানের বয়স দুই বছরের কম হলে তাকে টিভিতে কিংবা ইউটিউবে আসক্ত না করে নিজেই ছড়া শুনিয়ে, গান গেয়ে কিংবা খেলে তাকে ব্যস্ত রাখুন।
  • আপনার সন্তান কোন চ্যানেলে কী অনুষ্ঠান দেখছে সেটার খোঁজ রাখুন। প্রয়োজনে ক্যাবল অপারেটরকে বলে আপত্তিকর চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দিন।
  • শোবার ঘরে এবং খাবার ঘরে টিভি রাখবেন না। খাওয়ার সময়ে টিভি দেখতে দেবেন না সন্তানকে। সন্তানকে বলুন, পরিবারের সাথে খাবার টেবিলে বসে খেতে।
  • কোনও বিজ্ঞাপন দেখে যদি আপনার সন্তান জেদ ধরে কিনে দেয়ার জন্য, তাহলে আপনার সন্তানকে বকা না দিয়ে তাকে বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য বুঝিয়ে বলুন। চটকদার বিজ্ঞাপন মানেই যে ভালো মান নয়, সেটা জানিয়ে দিন আপনার আদরের সন্তানকে।

মনে রাখবেন, আপনি যা করছেন আপনার সন্তান সর্বক্ষণ আপনাকে অনুকরণ করছে। সন্তানকে এই ভয়ানক নেশা থেকে মুক্ত করতে হলে আপনাকেও অতিরিক্ত টিভি দেখার অভ্যাস ছাড়তে হবে। কারণ, আপনার সন্তান হল আপনারই প্রতিচ্ছবি।

এনডি টিভি।