টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে জয়ের বিকল্প নেই। লক্ষ্যটাও ধরাছোঁয়ার মধ্যেই, দুইশর নিচে। তবে ভয় ছিল দুদলের সবশেষ আধাডজন লড়াইয়ের ফলের চিত্রটা। যাতে জিম্বাবুয়ের জয়জয়কার। রোববারও ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছিল তারা। কিন্তু অভিজ্ঞ শ্রীলঙ্কার মাটিকামড়ানো লড়াইয়ের কাছে পেরে ওঠেনি। হাথুরুসিংহের দল ৫ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে ফাইনালের আশা জিইয়ে রাখল।
ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম দেখায় সুবিধা করতে পারেনি লঙ্কানরা। হেরেছে ১২ রানে। পরের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেনি হাথুরুর দল। টাইগাররা ৩২০ রানের সংগ্রহ গড়ে ১৬৩ রানে নিজেদের রেকর্ড জয় তুলে নেয়।
লঙ্কানরা টানা দুই হারের পর জয়ের দেখা পেল। তাতে ঝুলিতে পয়েন্ট জমা হল ৪টি! জিম্বাবুয়ে তাদের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে জিতে ৪ পয়েন্টই জমাতে পেরেছে। দুদলেরই পয়েন্ট সমান। ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের বিপক্ষে ফাইনাল খেলার জন্য অবশ্য তাদের অনেক হিসাব-নিকাশ পেরোতে হবে। দুদলেরই বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি করে ম্যাচ বাকি।
তবে স্বাগতিকদের হিসাবটা সোজা। মাশরাফীর দল ইতোমধ্যেই ফাইনালের টিকিট কেটে ফেলেছে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই। প্রথম দুই জয়ে বোনাসসহ লাল-সবুজদের সংগ্রহ ১০ পয়েন্ট।
রোববার শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুরুতে ব্যাট করে ৪৪ ওভারে গুটিয়ে যাওয়ার সময় ১৯৮ রানে থামে জিম্বাবুয়ে। জবাব দিতে নেমে ৩১ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখেই জয়ে নোঙর ফেলে শ্রীলঙ্কা।
রান তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনীতে ৩৩ তুলে শুরুটা আত্মবিশ্বাসেই করেছিল লঙ্কানরা। থারাঙ্গা (১৭) ফিরলেও মেন্ডিসকে নিয়ে দলকে লাইনে রাখেন কুশল পেরেরা। দুজনে যখন ৭০ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হলেন, ততক্ষণে সহজ জয়ই মনে হচ্ছিল। পেরেরা তখন ফেরেন ৪৯ রানে, ৪ চার ও এক ছক্কায় ৫৭ বলের ইনিংস খেলে।
তার সাত রান পরই মেন্ডিস (৩৬), ডিকেভেল্লা (৭) ও গুনারত্নে ৯ রানে ফিরে গেলে পথ হারাতে বসেছিল লঙ্কানরা। সেটি হতে দেননি চান্দিমাল ও থিসারা পেরেরা। দুজনে অবিচ্ছিন্ন ৫৭ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন।
অধিনায়ক চান্দিমাল ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন। পেরেরার আক্রমণাত্মক ইনিংসটি ৩৯ রানের, এক চার ও ৩ ছক্কায় ২৬ বলে সাজানো।
ব্লেসিং মুজারাবানি ১০ ওভারে ৫২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে চেষ্টা করেছিলেন। বাকিরা সেভাবে সঙ্গ দিতে পারেননি। সংগ্রহটাও ছিল ছোট।
এর আগে সিরিজের প্রথম সাক্ষাতের মত অদম্য শুরু করেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও সলোমন মায়ার। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে সাবধানী শুরুর পর প্রথম দশ ওভার ব্যাট করেন দুজনে। দারুণ শুরুটা অবশ্য ধরে রাখতে পারেননি। দ্রুত ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে জিম্বাবুয়েও।
থিসারা পেরেরার করা ইনিংসের দশম ওভারের শেষ বলে মাসাকাদজার (২০) আউটে শুরু। থারাঙ্গার হাতে ক্যাচ দেন এ ওপেনার। পাঁচ রান পর ক্রেইগ আরভিন (২) ফিরে যান। এবারও শিকারি সেই পেরেরা, ক্যাচ নেন থারাঙ্গাই। সাজঘরে ফিরতে দেরি হয়নি মায়ারেরও। ২১ রান করে ফিরেছেন পেরেরা বলে ডিকেভেল্লার গ্লাভসে ধরা পড়ে।
ওই তিন উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়েকে চেপে ধরেন পেরেরা। সেটা হাঁসফাঁস অবস্থায় টেনে নেন সান্দাকান। ইনফর্ম সিকান্দার রাজাকে (৯) মেন্ডিসের ক্যাচ বানিয়ে। জিম্বাবুয়ে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ব্রেন্ডন টেলর ও ম্যালকম ওয়ালারের ব্যাটে। দুজনে ৬৬ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন। ওয়ালারের (২৪) বিদায়ে ভাঙে জুটি। পরে পিটার মুরও (০) সাজঘরে হাঁটা দেন দ্রুত।
টেলর সেখান থেকে লড়াইয়ের সঙ্গী পান অধিনায়ক গ্রায়েম ক্রেমারকে। নিজে ফিরেছেন ৫৮ রানে, দলকে দুইশর কোটা দেখিয়ে। ৬ চারে ৮০ বলের ইনিংস টেলরের। আসা-যাওয়ার মিছিলে পরে অবশ্য দুইশ ছুঁতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। ক্রেমারের ৩৪ রান যা একটু লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছে। সেটি ম্যাচ জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
থিসারা পেরেরা ৩৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ইনিংসের সেরা বোলার। লেজ মুড়ে দেয়া ফার্নান্দো ২৮ রানে ৩ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন। সান্দাকানের দখলে গেছে ২ উইকেট। বোলারদের গড়ে দেয়া এই ভিতেই ফাইনালের স্বপ্ন জিইয়ে রাখল শ্রীলঙ্কা।