বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেয়া সাদমান ইসলাম আউট হওয়ার আগে-পরে হুটহাট পড়ে গেল আরও দুই উইকেট। দুইশ পার করার আগেই সাজঘরে পাঁচ ব্যাটসম্যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে দারুণ শুরুর স্বস্তি তখন মিলিয়ে যেতে বসেছিল। সেখান থেকেই হাল ধরলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে ৬৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে টিকিয়ে রেখেছে বাংলাদেশের বড় সংগ্রহের আশা।
প্রথম ম্যাচ জিতে সিরিজে লিড নেয়া(১-০) বাংলাদেশ শুক্রবার ৫ উইকেট হারিয়ে ২৫৯ রান তুলে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে। সাকিব ৫৫ ও মাহমুদউল্লাহ ৩১ রানে অপরাজিত আছেন।
শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সাদমান যেভাবে ব্যাট করছিলেন তাতে অভিষেক টেস্টে তার সেঞ্চুরি দেখে ফেলেছিলেন অনেকেই। ক্যারিবীয় পেস-স্পিন সামলে দারুণ সব স্কোরিং শট, সলিড ডিফেন্স আর ধৈর্য দেখিয়ে মুগ্ধ করেছেন ছুটির দিনে স্টেডিয়ামে আসা দর্শকদের। ১৯৯ বল খেলা এ বাঁহাতি ওপেনারের সম্ভাবনা জাগানো ইনিংস থামে ৭৬ রানে।
সাকিব ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন সাদমানের ব্যাটিং টেস্টের সঙ্গে মানানসই। সেটির প্রদর্শনী এ বাঁহাতি দেখালেন প্রথম সুযোগেই। তার তিন অঙ্ক ছুঁতে না পারা হয়ত কিছুটা আক্ষেপ জন্মদেবে। তবে বৃহৎ ক্যানভাসে টেস্ট আদলের একজন ওপেনার পাওয়াও যে অনেক বড় প্রাপ্তির, সেঞ্চুরির আক্ষেপ সেটির কাছে নগণ্য!
বেশ কিছুদিন ধরেই হতশ্রী বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। সাদমানের টেস্ট অভিষেকে সেই দুর্দশা কিছুটা কাটল। উদ্বোধনী জুটি থেকে আসে ৪২ রান। সৌম্য সরকার ১৯ রান করে রোস্টন চেজকে উইকেট বিলিয়ে আসেন দিনের প্রথম ঘণ্টা পার করে।
লাঞ্চ বিরতির যখন দুই বল বাকি, কেমার রোচের অফস্টাম্পের বাইরের বাউন্সার অযথাই লেগসাইডে হুক করতে যেয়ে মিড অনে ক্যাচ দেন মুমিনুল। ২৯ করে ফিরে যান এ বাঁহাতি। মোহাম্মদ মিঠুনও করেন ২৯। লেগস্পিনার দেবেন্দ্র বিশুর বলে বোল্ড হন এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
সাদমান আউট হন একই বোলারের ডেলিভারিতে। ৬টি চারে ইনিংস সাজিয়ে অভিষিক্ত এ তরুণ হন এলবিডব্লিউ।
দিনের শেষ উইকেট হিসেবে সাজঘরে যান মুশফিকুর রহিম। চা-বিরতির পর ব্যাটিংয়ে নেমে টেস্টে ৪ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করে বোল্ড হন গ্যাব্রিয়েলের জায়গা মিরপুর টেস্ট খেলতে নামা লুইসের বলে। ফেরার আগে করেন ১৪ রান। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৪ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁতে ৮ রান দূরে ছিলেন মি. ডিপেন্ডেবল।
সকালটা অবশ্য ছিল বিস্ময় জাগানিয়া। বাংলাদেশের একাদশে নেই কোনো স্বীকৃত পেসার! বিস্ময়ের মেঘ কেটে যায় বল মাঠে গড়াতেই। উইন্ডিজ অধিনায়ক যখন ম্যাচের চতুর্থ ওভারেই আক্রমণে নিয়ে আসেন স্পিনার। চট্টগ্রামের পর মিরপুর টেস্টেও বাংলাদেশ চার স্পিনার ধরে রাখায় মোস্তাফিজকে ছেঁটে ফেলে ব্যাটসম্যান বাড়ানো সিদ্ধান্ত শেষঅবধি অমূলক নয়।
চট্টগ্রাম টেস্টে ক্যারিবীয়দের ২০ উইকেটের পতন ঘটান সাকিব, তাইজুল, মিরাজ, নাঈম মিলে। একমাত্র পেসার হিসেবে খেলা মোস্তাফিজ দুই ইনিংসে করেন মাত্র ৪ ওভার। স্পিনদুর্গ পেলে পেসার না হলেও যে চলে সেটি প্রতিষ্ঠিত হয় আগের ম্যাচেই। মিরপুরের উইকেট চট্টগ্রাম থেকে খুব আলাদা নয়। প্রথম দিনের সকাল থেকেই স্পিনাররা পেয়েছেন যথেষ্ট বাঁক।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে নামা লিটন দাস ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে দলের আট নম্বর ব্যাটসম্যান। নয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ। ১০ ও ১১ নম্বরে তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান। চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্টে যাদের প্রতিরোধে তিনশ ছুঁতে পেরেছিল বাংলাদেশ।
একাদশে এমন কেউ নেই ব্যাটিং করতে জানেন না। মিরপুরের উইকেট আর ক্যারিবীয়দের বোলিং তোপ সামলাতে বাংলাদেশের লম্বা ব্যাটিং লাইনআপ। বড় সংগ্রহের আশা তো করতেই পারে স্বাগতিকরা।