চলমান রাশিয়া ইউক্রেন হামলার কারণে অস্থিরতা বিরাজ করছে পুরো বিশ্বে। প্রতি মুহূর্তে যুদ্ধের আপডেট জানতে সংবাদ মাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সক্রিয় থাকছে বিশ্বের সকল নাগরিক। এবার তরুণদের কাছে জনপ্রিয় অ্যাপ টিকটকের মাধ্যমে যুদ্ধের প্রত্যক্ষ দৃশ্য তুলে ধরছে ইউক্রেনবাসী।
হামলার শিকার এলাকায় বেঁচে থাকা মানুষের কথোপকথন, জানালাবিহীন আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের কান্না, নগরে বোমা বিস্ফোরণ, পুরো ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের ভিডিও প্রকাশ করে তরুণদের এ যুদ্ধের সরাসরি অভিজ্ঞতার সুযোগ করে দিচ্ছে দেশটির টিকটকাররা।
ইউক্রেনের সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে কম্বলে মোড়ানো দৃশ্য এবং আবাসিক রাস্তায় নেমে আসা সৈন্যদের ট্যাঙ্কের ছবির সাথে ফুটন্ত ফুল এবং অতীতে রেস্তোরাঁয় বসে বন্ধুদের হাস্যোজ্জল চেহারার ছবি পাশাপাশি প্রকাশ করেছে। যা তাদের মাতৃভূমির আগের শান্তিপুর্ণ দিন আর বর্তমানে সংশয়পূর্ণ অবস্থাকে তুলে ধরেছে।
টিকটকে বার্তা প্রদানের মাধ্যমে তারা তাদের ফলোয়ারদের ইউক্রেনের পাশে থাকার এবং ইউক্রেন মিলিটারির জন্য সাহায্যের আবেদন জানায়। এছাড়া রাশিয়ার ফলোয়ারদের যুদ্ধবিরোধী অবস্থান গ্রহণে আহ্বান জানায়।
রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে টিকটকে যুদ্ধের ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে প্রত্যেকটা মুহূর্তে নতুন তথ্য এবং ঘটনাগুলো ভালোভাবে জানতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। টিকটকের অলগারিদম সিস্টেমের কারণে ফলোয়ার না হলেও যেকোনো ভিডিও এর ১০০ কোটি ব্যবহারকারীর মধ্যে দ্রুত ভাইরাল হয়ে যেতে পারে।
অ্যাপটির গুরুত্বের কারণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি টিকটকাররা একটি দল হয়ে এই যুদ্ধ থামাতে পারেন বলে মন্তব্য করেন।
টিকটকের ইউক্রেনীয় ট্রাভেল ব্লগার আলিনা ভোলিক তার ভ্রমণের ভিডিও আপলোড করা বাদ রেখে এখন ইউক্রেনের হামলার পরিস্থিতির ভিডিও আপলোড করা শুরু করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে পাঠানো এক ইমেইল বার্তায় ভোলিক বলে, রাশিয়া যেটাকে ‘বিশেষ অভিযান’ বলছে তা ইউক্রেনকে কষ্ট দিচ্ছে। ভোলিক ইউক্রেনের ‘সত্যি দৃশ্য দেখতে’ তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ফলো করার আহ্বান জানায়
রাশিয়ার টিকটকাররাও ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে টিকটকে। নিকি প্রোশিন নামের রাশিয়ান টিকটকার তার অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় বলে, রাশিয়ার ‘সাধারণ মানুষ’ এই যুদ্ধকে সমর্থন করছে না।
নিকি জানায়, সে তার যতো বন্ধু এবং ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করেছে তারা কেউ এ যুদ্ধকে সমর্থন করে না।
গত সোমবার রাশিয়ার যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক রস্কোমান্দজোর টিকটকে মিলিটারি সম্পর্কিত সকল কন্টেন্ট আপলোড বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়, তিনি বলেন এসব ভিডিও বার্তার সবই রাশিয়ার বিরোধী। যদিও টিকটক এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
অনলাইন মিসইনফর্মেশান গবেষকরা এই সংঘাত নিয়ে টিকটক, ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউবে যথেষ্ট ভুল তথ্য ছড়িয়ে গেছে বলে সতর্ক করেছেন।
তবে টিকটকের মুখপাত্র বলেন, যুদ্ধকে উস্কে দিবে এমন যেকোনো তথ্য, মিথ্যা তথ্য এবং সংঘর্ষের সংবেদনশীল ভিডিও বার্তা আপলোডের ক্ষেত্রে আমরা সরাসরি সব কন্টেন্টগুলো পর্যবেক্ষণ করছি এবং এরকম কোনো কন্টেন্ট ছড়িয়ে গেলে তা দ্রুত মুছেও ফেলা হচ্ছে।
কিছু ইউক্রেনীয় টিকটকাররা পশ্চিমাদের কাছে যুদ্ধের তথ্য এবং সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে বদ্ধ পরিকর।
টিকটকে ছড়িয়ে পড়া ‘কিয়েভ ভোররাত ৪.২৩’ লেখা একটি ভিডিও তে দেখা যায়, কিয়েভের আকাশে মিসাইল বিস্ফোরণ চলছে। তাতে একজন টিকটক ব্যবহারকারী জানায়, টিকটকে যুদ্ধের আপডেট পাবো তা আমি কখনো ভাবিনি।