দরিদ্র কৃষক ওয়াং ইংলিনের জমিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জ্য ফেলতো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এক রাসায়নিক পণ্য কোম্পানি। এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন বর্তমানে ষাটোর্ধ্ব এই কৃষক। কিন্তু যার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনই মাত্র তিন বছরের সে কিভাবে এতো বিশাল এক কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনী লড়াই চালাবেন? তবে বিস্ময়কর দৃঢ়তায়, অটল মনোভাবের অধিকারী ওয়াং দমে যাননি। টানা ১৬ বছর আইন বিষয়ে দীক্ষা লাভ করে লিগাল পিটিশন দায়ের করে প্রাথমিকভাবে জয় পান তিনি।
আনজাংজি জেলা আদালত কিনঘুয়া গ্রুপকে ৮ লাখ ২০ হাজার ইয়েন (৯৬ হাজার পাউন্ড) ক্ষতিপূরণ ওয়াং ও তার প্রতিবেশীদের দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
উত্তর-পূর্ব চীনের কিকিহার শহরের কাছেই এক গ্রামের বাসিন্দা ওয়াং। থাকেন মাসিক ৫.৮০ পাউন্ড ভাড়ার এক বাসায়। অপরদিকে চীনজুড়ে খনি ও চুল্লির মালিকানা থাকা প্রভাবশালী কিনঘুয়া গ্রুপের বার্ষিক আয়ই ২৩৫ মিলিয়ন পাউন্ড। খনিজ পদার্থের প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতকরণে নিয়োজিত কোম্পানিটির কর্মীর সংখ্যাই ৫ হাজার। তাই প্রতিদ্বন্দ্বি পক্ষদের সামর্থ্যের আকাশ-পাতাল তফাত হলেও দূষণের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে ঠিকই জয়ী হলেন ওয়াং। যদিও জেলা আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করছে কোম্পানিটি। তবুও প্রাথমিক জয়টাতো এই কৃষকেরই।
লড়াইয়ের দীর্ঘ প্রস্তুতিও অনুকরণীয়। আইন বিষয়ে জানতে একটি বইয়ের দোকান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য হাতেই লিপিবদ্ধ করে নিতেন ওয়াং। তিনি বলেন, “আমি জানি আমি সঠিক, কিন্তু অপরপক্ষ কোন আইনটি ভঙ্গ করছে তা আমি জানতাম না।” বিষয়গুলো জানতেই তার গভীর অধ্যবসায়। তবে এর বিনিময়ে দোকান মালিককে ভুট্টার বস্তা দিতেন তিনি। ২০০৭ সাল থেকে আবার বিনামূল্যে আইনী পরামর্শ গ্রহণও শুরু করেন। পরবর্তীতে একটি লিগাল পিটিশন দায়ের করেন কোম্পানির বিরুদ্ধে।
২০০১ সালে ওয়াংয়ের জমিতে প্রথম ক্ষতিকর বর্জ্য পানি ফেলে কিংঘুয়া। এতে করে জমিটি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ে। সেইসময় থেকে ওয়াংয়ের গ্রামের বাড়ির কাছে পলিভিনাইল ক্লোরাইড প্ল্যান্ড থেকে বছরে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টন রাসায়নিক বর্জ্য ফেলা হয়েছে।
এর আগে কোম্পানিটিকে বিচারের সম্মুখিন করতে বেশ কয়েকবারই চেষ্টা করেন ওয়েং। কিন্তু স্থানীয় আদালত এবং পর্যবেক্ষক সংস্থা তাকে ফিরিয়ে দেয়। বরং সেই সংস্থা দ্বারা পাল্টা অভিযোগের মুখেও পড়তে হয় তাকে।