চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল, বিপদসীমার ওপর নদ-নদীর পানি

বন্যায় পানিবন্দী কয়েক লাখ মানুষ

টানা বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদ-নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে দেশের নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দী হয়ে আছে কয়েক লাখ মানুষ।

সপ্তাহ জুড়ে ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, বোয়ালখালী ও হাটহাজারীসহ বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে কয়েক লাখ অধিবাসী মানবেতর জীবনযাপন করছে।

হালদা ও সাঙ্গু নদীর তীব্র ভাঙনে স্রোতে ভেসে গেছে কয়েকশ’ ঘরবাড়ি। সাতকানিয়ার ধর্মপুর এবং ফটিকছড়িতে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে বান্দরবান-চট্টগ্রাম-কেরানিহাট সড়ক ৩ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গত ৪ দিনের বেশি সময় ধরে সারা দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

এসব এলাকায় নগদ টাকা এবং ২৬৬ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসন। বন্যাদুর্গতদের জন্য ২৮৪টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম শহরের বায়েজিদ থানাধীন আরফিন নগর এবং গরীবউল্লাহ শাহ এলাকায় পাহাড় ধসে মা-মেয়েসহ ৩ জন আহত হয়েছে। বিভিন্ন পাহাড়ে দেখা দিয়েছে ফাঁটল। ঝুঁকিপূর্ণ এসব এলাকা থেকে বসবাসকারীদের সরে যেতে আবারও নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল, বিপদসীমার ওপর নদ-নদীর পানি

বান্দরবানের সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আর্মিপাড়া, ইসলামপুর, বালাঘাটা আমবাগান, বাসস্টেশন ছাড়াও লামা, আলীকদম, রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেছে। বন্যায় দুর্গতদের জন্য জেলায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৩৩টি। আশ্রয় কেন্দ্রলোতে জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ের রাইখালী ইউনিয়নের কারিগরপাড়ায় রাস্তায় পাহাড় ধসে ২ জন পথচারী নিহত হয়েছে।

উজানের ঢলে রংপুরের গংগাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছার ১১ ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে বন্যা। ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদী তীরবর্তী জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলেছে প্রশাসন।টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল, বিপদসীমার ওপর নদ-নদীর পানি

এসব এলাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। অনেক গ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সবকটি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাটের অর্ধশতাধিক গ্রাম। সিলেট-গোয়াইনঘাট সড়কে পানি উঠে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। নগদ টাকা ও শুকনো খাবার বিতরণ করছে প্রশাসন।

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। সদর, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, রাজারহাট ও নাগেশ্বরী উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ওই এলাকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ।টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল, বিপদসীমার ওপর নদ-নদীর পানি

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে ১৮টি ইউনিয়নের তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার ১৬৫টি ছোট-বড় চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানির প্রবল স্রোতে নদী তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

জামালপুরে যমুনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনার পানি বেড়েছে ১০৬ সেন্টিমিটার।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর, বারহাট্টা ও কলমাকান্দার প্রায় ১৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে তিন উপজেলায় অন্তত ২শ’রও বেশি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেড়শ’টি পুকুর ও মৎস্য খামারে পানি প্রবেশ করে গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল

সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্ধ রয়েছে জেলার শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৫০টির বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় ১২৬৩ হেক্টর আউশ ধান ও ১২৫ হেক্টর রোপা আমন বীজতলা পানিতে ডুবে আছে।

খাগড়াছড়িতে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হলেও দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের কয়েকটি পাড়া ও মেরুং বাজারে এখনো পানিবন্দী মানুষ। মেরুং এর ৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে শতাধিক পরিবার। বন্যা কবলিতদের ত্রাণ বিতরণ করছে সরকারি-বেসরকরি সংস্থা।টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল

বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে দুর্গতদের শুকনো খাবার ও নগদ টাকা দিয়ে সহায়তা দিচ্ছে প্রশাসন।