মঙ্গলবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই তীব্র জলজট ও দুঃসহ যানজটে নগরীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলো । বুধবার সকাল থেকেও দেখা যায় একই চিত্র।বৃষ্টির কারণে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, নিচু এলাকা পানিয়ে তলিয়ে গেছে। পানিতে একাকার হয়ে প্রতিটি অলিগলি থৈথৈ করছে। এর ফলে রাস্তায় প্রচন্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন পয়েন্টে গাড়ির সারি সারি দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। অফিসগামীদের পাশাপাশি চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় হাসপাতালগামী রোগীদেরও। ভাঙাচোরা ও খালাখন্দে ভরা রাস্তার কারণেই ভোগান্তিটা আরো বেশি বলে জানান পথচারীরা। রাগ আর বিরক্তি নিয়ে তাদের প্রশ্ন ‘এই ভোগান্তির শেষ কোথায়’?
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার সকাল থেকে ১১ টা পর্যন্ত ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আরো ৬-৭ দিন বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানায় তারা।
টানা বৃষ্টিতে রাজধানী জুড়ে সৃষ্ট ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে সব ধরনের যানবাহন। শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষসহ শিক্ষার্থীদের নাকানি-চুবানি খেতে হয়। বৃষ্টি আর পানির তোরে ভেঙে পড়ে পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থা। নগরীর অনেক এলাকা গভীর রাত পর্যন্ত পানির নিচে ডুবে ছিলো। সকালের আবারও বৃষ্টি শুরু হলে তার পরিমাণ আরো বাড়তে থাকে।
ঘর থেকে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বের হয়েই মাঝ রাস্তায় পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, ২-৩ ঘণ্টার বৃষ্টিতে যেভাবে পুরো ঢাকা ডুবে গেছে, তাতে এ শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তীব্র যানজটের কারণে ১ ঘণ্টা দূরত্বের রাস্তা পার হতে সময় লেগেছে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টারও বেশি। সকালে অফিসের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হয়ে দুপুরের আগে অধিকাংশ মানুষ অফিসে পৌঁছতে পারেননি। আবার ঘরে ফেরার পথেও পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে।
প্রবল বর্ষণের কারণে সকালে স্কুলগামী শিক্ষার্থী আর অফিসগামীদের পড়তে হয় মারাত্মক বিড়ম্বনায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে তাদের যানবাহন ধরতে হয়েছে। মাঝে মাঝে দেখা গেছে মর্মস্পর্শী দৃশ্য। দীর্ঘসময় যানবাহন না পেয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙে পড়ে। ভারি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাধ্য হয়ে ওই সব শিশুদের কোমর পানি ভেঙে দীর্ঘ রাস্তা পাড়ি দিতে হয়েছে। অনেক ছাত্রছাত্রীকে খোলা ম্যানহলে পড়ে আহত হয়েছে।
শান্তিনগরের অবস্থা বর্ণনা করে কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, স্কুলে যাওয়া আসা করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। রাস্তায় তো ভোগান্তি আছেই, আবার স্কুলও পানিতে ভরে গেছে।
কোমরপানিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও বাস-মিনিবাসের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বন্ধ হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে। এতে রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়ে পুরো ঢাকা শহর স্থবির হয়ে পড়ছে। শান্তিনগর, ধানমণ্ডি, মধুবাজার, কারওয়ান বাজার, কলাবাগান, সংসদ ভবন এলাকা, পুরো মিরপুর, শ্যামলী, আসাদগেট, হাজারীবাগ, ঝিগাতলা, নিউমার্কেট, শাহবাগ, মিরপুর রোড, কাঁটাবন, রামপুরা, মেরুল, বাড্ডা, অভিজাত গুলশান-বনানী এলাকার অনেক রাস্তাও হাঁটুপানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এদিন নগরের মানুষের ভোগান্তি নিজ চোখে দেখতে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেন,‘দুর্ভোগের সব সময় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি, সাথে থাকবো। জলজট সমস্যা একটি বড় সমস্যা এটা সমাধানের চেষ্টা করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘গত শনিবার বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসেছিলাম কিভাবে এর সমাধান করা যায়। আমরা সমস্যা চিহ্নিত করেছি। এখন সমস্যা সমাধানে আমরা স্বল্প মেয়াদী, মধ্য মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী এই তিন ধরনের পরিকল্পনা করেছি।’
প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক আরাফাত সিদ্দিক তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘হিসেব করে দেখলাম, রিক্সায় প্রতি মিনিটে ভাড়া পড়লো সাড়ে চার টাকা। বৃষ্টিতে ভাঙ্গা রাস্তায় কোমর সোজা করে বসে থাকা রিক্সা চালানোর চেয়ে কঠিন। আর্জেন্টিনার পতাকা সদৃশ্য পলিথিনটি দুহাত দিয়ে ধরে রাখা চাট্টিখানি কথা না।‘
তিনি আরো বলেন, ‘পর্দানশীন হয়ে অফিসের কাছে নেমে নিজেকে ফিটফাটই দেখাচ্ছিলো। ভাড়া মেটাতেই পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়া একটা এক্স-কোরোলা কাদাপানি সমেত সব মজা লুটে নিলো.. গুড মনিং নগর জীবন।’
আরেকটি টেলিভিশনের সাংবাদিক প্রভাষ আমিন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যে শহরের মানুষ দুঃসহ যানজটকে নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছে। সেই মানুষের কি কোনো ভবিষ্যৎ আছে ?’