ফিলিপিন্সের রিজাল কর্মাশিয়াল ব্যাংকের সন্দেহজনক ৫ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার পাচারের ঘটনায় সন্দেহের তীর এখন ব্যাংকটির আঞ্চলিক প্রধান মাইয়া সান্তোস দেগিতোর দিকে।
দেশ ছাড়তে গিয়ে এয়ারপোর্টে আটকে দেয়া দেগিতোর বিরুদ্ধে লেনদেন সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ এবং এ নিয়ে তার বক্তব্য খতিয়ে দেখছে ফিলিপিন্সের মানি লন্ডারিং বিরোধী কর্তৃপক্ষ।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে একজন ‘সামান্য’ কর্মকর্তা দাবি করা দেগিতো বলেছেন, দায়ভার শুধু তার একার নয়। রিজাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী লরেঞ্জো তান-কেও দায়ভার নিতে হবে। কারণ এতোবড় লেনদেনের বিষয়টি তাদের চোখ এড়ানোর কথা নয়।
এই অবস্থায় বাংলাদেশের টাকা পাচারের ঘটনায় রিজালের মাকাতি সিটির শাখা প্রধান দেগিতো জড়িত নাকি তাকে ফাঁসানো হয়েছে তা খতিয়ে দেখছে ফিলিপিন্সের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল।
ইতোমধ্যে ফিলিপিন্সের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে রিজাল কর্মাসিয়াল ব্যাংক। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ৫ টি অ্যাকাউন্টে টাকা তুলে নেয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য আর লেনদেনে মাকাতি শাখার রহস্যময় অস্বচ্ছতার চিত্র।
ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে স্থগিতাদেশ পাশ কাটিয়ে তাড়াহুড়ো করে লেনদেন সম্পন্ন করাসহ কয়েকটি সরাসরি অভিযোগ আনা হয়েছে দেগিতোর বিরুদ্ধে। রিজাল ব্যাংকের মানব সম্পদ বিভাগের তদন্তে এই সব অনিয়ম-অস্বচ্ছতা বেরিয়ে আসে।
তদন্তে দেখা যায়, যে ৫ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের টাকা লোপাট হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ভূয়া অ্যাকাউন্ট ছিলো। রিজাল ব্যাংকের মাকাতি শাখার প্রধান দেগিতো তা ভালোমতোই জানতেন। যে ব্যবসায়ীর নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিলো তিনি সংবাদসম্মেলনে সরাসরি দেগিতোকেই দায়ী করেছেন।
রিজালের তদন্তে দেখা যায় লেনদেনে মারাত্মক ধরণের অস্বচ্ছপন্থা অবলম্বন করা হয়েছিলো। সন্দেহজনক ৫ অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারে কাস্টোমার সম্পর্কে নিশ্চিত হতে কোনো সতর্কতামূলক স্তর অনুসরণ করা হয়নি। তেমন কার্যকর না থাকা অ্যাকাউন্টগুলোতে হঠাৎ বাংলাদেশ থেকে বিপুল টাকা আসার পরও শাখাটি ‘মর্যাদাপূর্ণ গ্রাহকের’ লেনদেন বলে তাতে তেমন গুরুত্বই দেয়নি।
এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে লেনদেন বন্ধের বার্তা পাঠানো হলেও তা আমলে নেয়া হয়নি। বরং ১১ টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত চলতে থাকে টাকা তোলার আনুষ্ঠানিকতা!
এরপর টাকা পাচারে ফিলিপিনো ব্যবসায়ী উইলিয়াম গো’র নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মার্কিন ফেডারেল ব্যাংক থেকে আসা ডলার ফিলিপিনো মুদ্রা পেসোতে রূপান্তর করা হয় তারপর ‘ফিলরেম’ নামের একটি লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তা অন্যত্র পাঠানো হয়।
এইসব অভিযোগের বিপরীতে নিজের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে উল্টো রিজালের উচ্চপদস্থদের প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন দেগিতো। তার দাবি তিনি যা করেছেন তা ব্যাংকের নিয়ম এবং উচ্চপদস্থদের পরামর্শ মেনেই করেছেন। আর ভূয়া অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ব্যবসায়ী উইলিয়াম গো অভিযোগ করেছেন সেটা মিথ্যা। কারণ বিষয়টি তো তার অজানা ছিলো না।
২০১৫ সালের মার্চের ১৩ তারিখে ওই অ্যাকাউন্টধারীদের সঙ্গে একটি রিসোর্টে তার প্রথম দেখা হয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান দেগিতো। সেখানেই তাদের সঙ্গে অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারে কথা হয় তার। অ্যাকাউন্ট খোলা হলেও এবছর ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অ্যাকাউন্টগুলো অকেজোই ছিলো বলে জানান তিনি।
তবে ওইসব অ্যাকাউন্টধারীদেরকে সন্দেহ করার মতো কিছুই ছিলো না। কারণ তাদেরকে রিজাল কর্মাশিয়াল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী লরেঞ্জো তান ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন।