টাকার সঙ্গে ভারতীয় রুপির বিনিময় হার প্রায় সমান পর্যায়ে নেমে এসেছে। অর্থাৎ রুপির তুলনায় ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে টাকা।
বর্তমানে ১ রুপির বিনিময় হার দাঁড়িয়েছে এক টাকা ১৪ পয়সা। যা চলতি বছরের জানুয়ারিতেও ছিল এক টাকা ৩০ পয়সা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতো টাকার বিপরীতে রুপির দর এত কম দেখা যায়নি। ২০১৬ সালে ভারতে মোদি সরকারের নোট বাতিলের সময়ও রুপির দর ছিল এক টাকা ১৫ পয়সা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাকা শক্তিশালী হলে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে তেমন প্রভাব না পড়লেও আমদানিকারকরা সামান্য লাভবান হবেন। এছাড়া ভ্রমণ ও চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যাবেন তারাও লাভবান হবেন। কারণ রুপির বিপরীতে ডলারের পাশাপাশি এখন বাংলাদেশি টাকাও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এর ফলে ভারত থেকে যারা পণ্য আমদানি কর থাকে, তাদের কিছুটা সুবিধা হবে। তবে রপ্তানিকারকদের লোকসান হতে পারে।
গত অর্থবছর ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৮শ কোটি ডলারের বেশি পণ্য। বিপরীতে রপ্তানি করা হয়েছে ৩৭ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের পণ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে এক রুপির দর ছিল এক টাকা ২৮ পয়সা। এরপর থেকে দর সামান্য বাড়া-কমার মধ্যেই ছিল। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটু বেড়ে এক রুপির দর দাঁড়ায় এক টাকা ৩০ পয়সায়। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে দর কমে গত রোববার এক রুপির দর দাঁড়ায় এক টাকা ১৪ পয়সায়।
তবে গত বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) ভারতীয় রুপির মান বাংলাদেশি মুদ্রায় রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছিল। ওই দিন বাংলাদেশি ১১৩ টাকার বিপরীতে পাওয়া গেছে ভারতীয় ১০০ রুপি। অর্থাৎ, ১০০ টাকায় মিলেছে ৮৯ রুপি। এক রুপির দর নেমে এসেছিল এক টাকা ১৩ পয়সায়। বাংলাদেশি টাকার বিপরীতে রুপির এটি সর্বনিম্ন অবস্থান।
ইন্টারনেট মানি এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, ডলারের বিপরীতে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের মুদ্রা বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
রোববার বাংলাদেশি টাকার বিনিময় হার ছিলো— ১ মার্কিন ডলার ৮৩ টাকা ৮৫ পয়সা, এক ব্রিটিশ পাউন্ড ১১২ টাকা ৭০ পয়সা, এক ইউরো ৯৯ টাকা ২৪ পয়সা ও এক সৌদি রিয়াল ২২ টাকা ৩৬ পয়সা। এ সময় এক ডলারে পাওয়া গেছে প্রায় ৭৪ রুপি।
তবে রুপির দর কমে যাওয়ায় ডলারের বিপরীতে টাকার মান কিছুটা কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবার ৫ পয়সা বেড়েছে প্রতি ডলারের দাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতে রুপির মান কমছে, এতে বাংলাদেশ ডলারের আয় হারাতে পারে। তাই রপ্তানি ও প্রবাসী আয় ধরে রাখতে টাকার মানে কিছুটা ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (মুখপাত্র) সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ৫ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বাড়ানোর সুবিধার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আমদানি-রপ্তানিকারকদের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতে পণ্য বেশিরভাগ কেনাবেচা হয় ডলারে। ফলে টাকা শক্তিশালী হলে বা রুপির মান কমলে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে খুব একটা প্রভাব পড়ে না।
তবে যারা ভারত ভ্রমণ করবেন কিংবা টাকা ভাঙাবেন তারা লাভবান হবেন।
এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ‘আমাদের দেশ থেকে প্রচুর পর্যটক ভারত ভ্রমণে যায়, অনেকে চিকিৎসা সেবা নিতে যায়। এক্ষেত্রে তারা লাভবান হবেন।’
ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে মোট ২০ লাখ বাংলাদেশি ভারত সফর করেছে।
এছাড়াও দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয় বলছে, বিদেশি রোগীদের মধ্যে ভারতে সবচেয়ে বেশি রোগী যায় বাংলাদেশ থেকে। গত বছর শুধু বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ ২১ হাজার ৭৫১ জন মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলো।