চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ছে

টাকার বিপরীতে দাম বেড়েছে ডলারের। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৩ টাকা ৯৫ পয়সা। আর চলতি ফেব্রুয়ারিতে দাম ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সায় পৌঁছেছে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে এক টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা বিনিময় হারের তথ্যে ডলারের দামের এই চিত্র দেখা গেছে।

তবে ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা দেখা গেলেও খোলা বাজারে এর দাম আরো আড়াই থেকে ৩ টাকা বেশি দেখা গেছে। খোলা বাজারে কেউ ডলার কিনতে গেলে তাকে প্রতি ডলারের বিনিময়ে গুণতে হবে ৮৭ থেকে ৮৮ টকা। চলতি বছরের শুরুতে খোলা বাজারে ডলারের দাম ছিল ৮৫ থেকে ৮৬ টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডলারের দাম বাড়লে রপ্তানিকারক এবং রেমিট্যান্স প্রেরণকারীরা লাভবান হন। অন্যদিকে আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কারণ পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে স্থানীয় বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়। এ কারণে মূলস্ফীতি দেখা দেয়। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়।

তাই ডলারের দাম বাড়লে রপ্তানিকারকরা যদি তা কাজে লাগাতে না পারে তাহলে এতে ভালো না হয়ে ক্ষতি হয় বেশি।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ডলারের দাম খুব বেশি বাড়েনি, এক টাকা বেড়েছে। খোলা বাজারে হয়তো বেশি হতে পারে।

তিনি বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো বিশেষ করে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও ভারত অনেকেদিন আগেই ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার দাম কমিয়েছে। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি কমিয়েছে তারা। বরং বাংলাদেশে তা দেরিতে হয়েছে।

টাকার দাম কমলে রপ্তানিকারকদের জন্য সুবিধা বেশি উল্লেখ করে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, যারা পণ্য রপ্তানি করে থাকে, তারা সব সময়ই চান যেন ডলারের দাম বাড়তি থাকে। এতে তাদের রপ্তানি আয় বেশি হয়। রপ্তানির আগ্রহও বেড়ে যায়।

“ডলারের দাম কমানো হয় রপ্তানি আয় বাড়ানোর উদ্দেশে। কিন্তু বাংলাদেশের বায়াররা (বিদেশি ক্রেতা) পণ্যের দাম কমাতে অনবরত চাপ দিয়ে যাচ্ছে। ডলারের দাম বাড়লে তারা আরো বেশি চাপ দিবে। তাই ডলারের দামও বাড়লেও বায়াররা যদি রপ্তানি মূল্য কম দেয় তাহলে ডলারের দাম বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই।”

কিন্ত ডলারের দাম বাড়লে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশ শুধু রপ্তানি করে না। অনেক পণ্য আমদানিও করে। যেমন- তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে অধিকাংশ বোতাম, সুতা ইত্যাদি। তাছাড়া মূলধনী যন্ত্রপাতি তো পুরোটাই আমদানি করতে হয়। সেক্ষেত্রে ডলারের দাম বাড়লে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। এতে জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। মূল্যস্ফীতি দেখা দিবে।

‘তাই আমি মনে করি, ডলারের দামে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ থাকা উচিত নয়। বরং এটা মুক্তবাজারের উপর ছেড়ে দেয়াই ভালো’, বলেন এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৯ সালের শুরুতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দর ছিল ৮৩ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থাৎ পণ্য আমদানিতে প্রতি ডলারে ব্যয় করতে হতো ৮৩ টাকা ৯০ পয়সা। এরপর দফায় দফায় দাম বেড়ে ডলার এখন ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।

তবে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বাড়লেও ইউরোর মূল্য খানিকটা কমছে। ২০১৯ সালের শুরুতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ইউরোর মূল্য ছিল ৯৬ টাকা ১৯ পয়সা। বছর শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৪ টাকা ৯০ পয়সা। এই হিসাবে এক বছরে টাকার বিপরীতে ইউরোর মান কমেছে ১ টাকা ২৯ পয়সা।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ১৩ ফেব্রুয়ারিতে ইউরোর দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৯২ টাকা ৩৮ পয়সায়।