টাইটানিক ডুবে যাওয়ার ঠিক ১০৩ বছর ৪ দিন পর কাছাকাছি সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে অভিবাসী নৌকাটি ডুবে গিয়েছিল তাকে উদ্ধার করতে আসা জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষে।
ভূমধ্যসাগরে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর কারণ হওয়া নৌকাডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ২৮ জনের একজন বাংলাদেশী হাসান খান। সাতশ মানুষের মৃত্যুর কারণ হওয়া ওই ঘটনায় সিসিলির বন্দর শহর কাতানিয়াতে এখন যে বিচার চলছে তার একজন সাক্ষী বাংলাদেশী হাসান।
মোটামুটি হিসাবে ১৫শ ১৪ জনের মৃত্যু ঘটানো টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের মতো ৮শ’র বেশি মানুষ নিয়ে ডুবে যাওয়া নামহীন নৌকাটি উদ্ধারের চেষ্টাও চলছে। নজীরবিহীন এক চেষ্টার অংশ হিসেবে নৌকাটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারে ইটালির নৌবাহিনীর উদ্ধারকারীদের হয়তো খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।
১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যাওয়া টাইটানিক যেখানে লম্বায় ছিল ৮৮৩ ফুট সেখানে লিবিয়ার গারাবুলি থেকে ইটালিতে অভিবাসন আকাঙ্খীদের নিয়ে যাত্রা করে ২০১৫ সালের ১৮ এপ্রিল ডুবে যাওয়া নৌকাটির দৈর্ঘ্য মাত্র ৯০ ফুট।
নৌকাটি ডুবে যাওয়ার পর যে ২৮ জনকে পর্তুগিজ জাহাজ ‘কিং জ্যাকব’ উদ্ধার করতে পেরেছিল তাদের একজন তিউনিসিয়ান মোহাম্মেদ আলী মালেকসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মানবপাচার এবং দায়িত্বহীনতার কারণে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে বিচার হচ্ছে। প্রসিকিউটররা তার ১৮ বছরের কারাদণ্ড চেয়েছেন। লিবিয়া থেকে মানবপাচারের অন্যতম ‘রিং-লিডার’ এই মালেক।
তবে সিসিলির কারাগার থেকে বিবিসিকে লেখা চিঠিতে নিজের দায়-দায়িত্ব অস্বীকার করে মালেক বলেছেন, তিনি ওই নৌকার ক্যাপ্টেন ছিলেন না। বরং অন্যদের মতো তিনিও লিবিয়া থেকে ইটালিতে পাড়ি জমাতে ১৬শ’ ডলার দিয়েছিলেন। ইটালিতে তিনি আগেও বাস করতেন বলে দাবি তার।
আদালতে জমা পড়া দলিল এবং তথ্য-প্রমাণ অবশ্য বলছে, মালেকই ওই নৌকাটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু সাগরে একটি নৌকা চালানোর মতো বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা না থাকার কারণেই ৮শ’ যাত্রী নিয়ে সেদিন নৌকাটি ডুবে যায়। এমনকি মানবপাচার এবং মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে গ্রেফতার তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড এক সিরীয় নাগরিকও বলেছেন, মালেকই ক্যাপ্টেন ছিলেন এবং তার নৌকা চালানোর মতো অভিজ্ঞতা না থাকার কারণেই দুর্যোগের মধ্যে পড়া নৌকাটি উদ্ধার করতে আসা জাহাজকে ধাক্কা দিয়ে ডুবে যায়।
জরুরি বার্তা পেয়ে পর্তুগিজ যে জাহাজ ‘কিং জ্যাকব’ ওইদিন নৌকাটি উদ্ধার করতে গিয়েছিল তার ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আমব্রুসিও একইরকম বক্তব্য দিয়েছেন।
আর উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশী হাসান খান জানিয়েছেন, ক্যাপ্টেন হিসেবে মালেক বেশ কয়েকবার স্যাটেলাইট ফোনে উপকূলে থাকা তার সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। নৌকায় সশস্ত্রও ছিলেন মালেক।
মূলত স্যাটেলাইট ফোনেই তিনি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে গভীর সাগরে তাদের দুরবস্থার কথা জানানোর পর তারা কাছে থাকা পর্তুগিজ জাহাজ ‘কিং জ্যাকব’কে জরুরিভাবে উদ্ধারে পাঠায়। কিন্তু জাহাজটি কাছে যাওয়ার পর এবং তার গতি পুরোপুরি থামিয়ে দেওয়ার পরও নৌকার দায়িত্বে থাকা ক্যাপ্টেন তার আনাড়িপনার জন্য জাহাজের সঙ্গে নৌকার সংঘর্ষ ঘটায়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই নারী-শিশু-পুরুষসহ সাতশ’ মানুষ সাগরে ডুবে যায়। মাত্র ২৮ জনকে উদ্ধার করতে পারে কিং জ্যাকব।