বাংলাদেশ সিরিজ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড কতোটা হিসেব-নিকেষ করছে, তা জানা না গেলেও অজি মিডিয়াতে বাংলাদেশ সফর বেশ গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ সফরে আসা অস্ট্রেলিয়ান দলের ৭ জন খেলোয়াড়ের সাথে কাজ করা টাইগার কোচ চন্দ্রিকা হাতুরেসিংহেকে নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে অজি ক্রিকেট বিশ্লেষকদের কপালে। সর্বশেষ অ্যাশেজ সিরিজে ইংলিশদের অজি কোচ টেভর বেলিসের সাথে তুলনা করা হচ্ছে হাতুরেসিংহেকে।
সর্বশেষ অ্যাশেজ জয়ে ইংলিশ দলের জন্য অজি কোচ টেভর বেলিস কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন তা ইংল্যান্ড দলের অনেকেই বলেছেন। বেলিস অস্ট্রেলিয়ার মানুষ। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেট দল নিউসাউথ ওয়েলসসহ ছিলেন জাতীয় দলের কোচও।
ইংলিশদের বিপক্ষে খেলা অ্যাশেজ দলের অন্তত ৯ জন খেলোয়াড়ের সাথে নানা সময়ে কাজ করেছে তিনি। তাই অজিদের ভেতরের খবর ভালোই জানতেন। আর সেটাই ৩-২ ব্যবধানে অ্যাশেজ জয়ে কাজ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ইংল্যান্ড দলে তার সহকারী পল ফারবাস ও অলরাউন্ডার মঈন আলী।
তারা দু’জনেই বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার ভেতরের খবর তাদের জন্য ছিলো অমূল্য।
অ্যাশেজের পর আবার একই রকম অস্ত্রের মুখে অস্ট্রেলিয়া। এবার যারা প্রতিপক্ষ তাদের পরিচালকও যে অজিদের অনেক হাঁড়ির খবরই জানেন। কারণ তারও আছে অস্ট্রেলিয়ায় কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা।
আগামী মাসে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসছে অস্ট্রেলিয়া। সফরের জন্য তারা যে দল ঘোষণা করেছে নিউসাউথ ওয়েলেস ও সিডনি থান্ডারসের কোচ থাকাকালে সে দলের ৭ জন খেলোয়াড়ের সাথে কাজ করেছেন টাইগার কোচ হাতুরেসিংহে। যাদের মধ্যে আছেন অস্টেলিয়ান অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ, নাথান লায়ন, মিচেল স্টার্ক, উসমান খাজা, পিটার নেভিল, প্যাট কামিন্স ও স্টিভ ও’কিফি।
শ্রীলঙ্কা হয়ে ২৬টি টেস্ট ও ৩৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা হাতুড়েসিংহে ২০১১ সালে বিগব্যাশে নিউসাউথ ওয়েলেসের অন্তবর্তীকালীন কোচ হওয়ার পর সিডনি থান্ডারর্সের হেড কোচ হন এবং গত মে’তে হন টাইগারদের হেড কোচ।
সুতরাং অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে তার যে ভেতরের অভিজ্ঞতা তা আগামী মাসে কি বাংলাদেশকে সুবিধে দেবে? এই প্রশ্নের জবাবে ‘ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ডটকম’কে হাতুরেসিংহে বলেন, ‘দিতে পারে, নাও পারে’। তিনি বলেন, ‘তাদের পদ্ধতি এবং তারা কিভাবে খেলে সে সম্পর্কে অল্প জানি, তাই এ অর্থে আমি একটু আধটু সাহায্য করতে পারবো। কিন্তু তারা(অস্ট্রেলিয়া) খুবই ভালো দল। তাদের বিশ্বমানের খেলোয়াড় আছে। তারা খেলার ভেতর-বাহিরটা ভালোই জানেন।’
টাইগার কোচ আরো বলেন, ‘আপনি যখন একটি নির্দিষ্ট সময় কারো সঙ্গে কাজ করবেন। তখন তার শক্তি এবং সীমাবদ্ধতা আপনি জানবেন। কিন্তু এসব খেলোয়াড়রাও নিজেদের শক্তি ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানেন। এটা সাহায্য করে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে জানা তথ্য ব্যবহার করার জন্য আপনার সংকল্প থাকতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটা নির্ভর করে নির্দিষ্ট দিনে আপনি তা কিভাবে প্রয়োগ করবেন এবং আপনার খেলার কৌশল কি হবে। যদি আপনার ওই রকম খেলোয়াড় থাকে যে আপনার চাওয়া মতো সুযোগটা নিতে জানে।’
অভিষেকে পর ৯৩ টেস্টের মধ্যে ৭টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা চারটি টেস্টই হেরেছে টাইগাররা। তার তিনটি আবার ইনিংস ব্যবধানে। কিন্তু গত দুই বছরে দুই দলের পার্থক্য অনেক কমেছে।
বাংলাদেশ সিরিজের জন্য ঘোষিত অস্ট্রেলিয়ার ১৫ সদস্যের দলটি সেদেশের টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম অনভিজ্ঞ দল। সবাই মিলে ম্যাচ খেলেছেন ২০৭টি। অ্যাশেজের পর অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক থেকে শুরু করে একে একে অবসর নিয়েছেন ওপেনার ক্রিস রজার্স, শেন ওয়াটসন, রায়ান হ্যারিস ও ব্র্যাড হ্যাডিন। যে কারণে একটা শূণ্যতা তৈরি হয়েছে অজি দলে।
আর এই সময়ে বাংলাদেশ তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সময় অতিবাহিত করছে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার পর পাকিস্তান, ভারত ও সাউথ আফ্রিকার মতো পরাশক্তির বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে।
হাতুরেসিংহে বলেন, প্রত্যাশা মতোই সাফল্য আসছে। আর ক্রিকেটাররা যেভাবে সবকিছু হ্যান্ডেল করছে তা প্রশংসনীয়। ইনজুরির কারণে অজি দলের সঙ্গে আসতে পারছেন না ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। আর বিশ্রামে রাখা হয়েছে দুই পেসার মিচেল জনসন ও জস হ্যাজেলউডকে। অভিজ্ঞ তিন খেলোয়াড় অনুপস্থিত থাকলেও সতর্ক বাংলাদেশ কোচ।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি যেকোনোর সময়ের চেয়ে বর্তমান অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলা আমাদের জন্য ভালো। এক-দেড় বছর আগে হলে সুযোগটা খুব কমই থাকতো। কিন্তু সবাইকে এটা মনে রাখতে হবে তাদের (অস্ট্রেলিয়ার) ব্যাটসম্যানরা অবসর নিয়েছেন, বোলার নন। তাদের বোলিং আক্রমণ গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।’
হাতুড়েসিংহে বলেন, ‘জনসন এবং হ্যাজেলউডকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু এরপরও তাদের বোলিং আক্রমণ শক্তিশালী। এটা একটা চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে। যদি আমরা ২০ উইকেট নিতে পারি তাহলে সত্যিই তাদের চাপে রাখতে পারবো।’
বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ আমাদের খেলোয়াড়রা খুবই ভালো। তারা এখন এমন পর্যায়ে আছে যে কিভাবে একটি ম্যাচ সামলাতে হয় তা ভালো করেই জানে। খেলোয়াড়দের জন্য এটা নিজেদের প্রমাণ করার এবং সেরা দলের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সময়। তারা এটা জানে অস্ট্রেলিয়ার যে দলই আসুক সেটা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জেরই হবে।’
উপ-মহাদেশ সফর অস্ট্রেলিয়ার যেকোনো দলের জন্যই চ্যালেঞ্জ। এশিয়ায় খেলা গত ১৫ টেস্টের মধ্যে মাত্র একটিতে জিতেছে তারা। সর্বশেষ জয় ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার গলে। হেরেছে ৬টিতে। তবে গরম আর স্লোস পিচের সাথে মানিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্মিথ।
হাতুরেসিংহে আশা করছেন পিচের বাউন্সের স্বল্পতাই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে। সেই সাথে স্পিন তো আছেই। বাংলাদেশের সংস্কৃতিও সফরকারীদের আঘাত হয়ে আসতে পারে। কারণ ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ সফর করেছেন অস্ট্রেলিয়া দলে এমন খেলোয়াড় আছে মাত্র চারজন। তাই ক্রিকেট পাগল এই কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নিতেও সমস্যা হতে পারে অজিদের।
তিনি বলেন, ‘এখানে খুবই গরম এবং সেঁতসেঁতে। তবে বেশিভাগ অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়েরই ভারতে খেলার অভিজ্ঞা আছে। সেক্ষেত্রে এখানে খুব পার্থক্য হবে না। কিন্তু এখানকার সংস্কৃতি ভিন্ন, যে সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা কম। আর এটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে কিনা আমি জানি না। এটা ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। তবে এটা স্পষ্টভাবে ভিন্ন হতে যাচ্ছে।’