জাতীয় দলের যে গুটিকয়েক ক্রিকেটার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের একজন মুমিনুল হক। নভেম্বরে স্ত্রীসহ কোভিড-১৯ পজিটিভ হন। সেই ধকল কাটিয়ে মাঠে ফেরার পর চোট পান আঙুলে। বঙ্গবন্ধু টি-টুয়েন্টি কাপ থেকে ছিটকে পড়ে যেতে হয় অস্ত্রোপচার টেবিলে।
মুমিনুলের উপর দিয়ে একটা ঝড়ই বয়ে গেছে যেন। তারপরও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতে পারেন তিনি। ১১ মাসের বিরতি কাটিয়ে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে ফেরার সিরিজে তিনিও যে ফিরতে পারছেন। ‘টেস্ট ক্রিকেটার’কে মিস করতে হচ্ছে না কোনো টেস্ট।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে অধিনায়ক মুমিনুল অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিলেন। কথা বললেন টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের নতুন পথচলা নিয়ে। সেখানে আত্মবিশ্বাসী মুমিনুলকেই পাওয়া গেল।
জানিয়ে দিলেন বুধবার শুরু হতে যাওয়া টেস্টে জয় ছাড়া কিছুই ভাবছেন না দলপতি।
মুমিনুলের জন্য প্রতিটি টেস্টই পরম আরাধ্য। ওয়ানডে, টি-টুয়েন্টি দলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টেস্ট ক্রিকেটকে আঁকড়ে থাকতে হচ্ছে তাকে। সাদা বলের ক্রিকেটে ফেরার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না সহসাই।টেস্ট অধিনায়ক তিনি। দলের সেরা ব্যাটসম্যানও। চট্টগ্রামের ২২ গজে নামলেই পান সেঞ্চুরি। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলা সবশেষ ইনিংসটি ১৩২ রানের। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই ম্যাচের পর আর টেস্ট খেলেনি বাংলাদেশ।
মুমিনুলের জন্য পয়মন্ত ভেন্যু জহুর আহমেদ। ১১ ম্যাচে ৬বার শতক পূর্ণ করেছেন সেখানে। একাধিকবার জাগিয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরির আশা। সেই মুমিনুলের ব্যাটের দিক এবারও তাকিয়ে থাকছে বাংলাদেশ।
প্রত্যাশা এতটাই উপরে নিয়ে গেছেন, সবাই ধরেই নিচ্ছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরিটা হয়ত আসতে যাচ্ছে চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্টেই।
মুমিনুল টেস্ট দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন হুট করেই। সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ হওয়ায় দায়িত্ব পান। অধিনায়ক হিসেবে দলকে সাফল্যে রাঙাতে পারেননি সেভাবে। ভারতে দুটি টেস্ট ও পরে পাকিস্তান সফরে একটি টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারে তার দল। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়েকে হারানোই তার অধিনায়কত্বে একমাত্র সাফল্য।
মুমিনুল কোনো ম্যাচেই পাননি পূর্ণশক্তির দল। দলের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব ফিরছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে। মুমিনুল এবার পরিকল্পনা সাজাতে পারবেন দারুণভাবে। সাকিবের মাধ্যমে একের ভেতর পাচ্ছেন দুজনকে। ব্যাটিং ও বোলিং শক্তি, দুটিই যে অনেক বেড়ে যায় সাকিব থাকলে চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর আগেরদিন দলপতি মনে করিয়ে দিলেন সেটি।
‘আমার কাছে মনে হয় উনি(সাকিব) একের ভেতর দুই। উনি থাকলে টিম কম্বিনেশন ভালো হয়। ব্যাটিং বলুন বোলিং বলুন, দল সাজানো অধিনায়কের জন্য সহজ হয়। তরুণ অধিনায়ক হিসেবে এটা আমার জন্য ভালো একটা সুযোগ। আশা করি সে খেলবে।’
চট্টগ্রামেই উইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে কুঁচকিতে চোট পেয়েছিলেন সাকিব। কয়েকদিন বিশ্রামে থেকে পুরোদমে অনুশীলন করছেন তিন দিন ধরে। যদিও শতভাগ ফিট হতে পারেননি এ অলরাউন্ডার। তারপরও সাকিবের খেলার সম্ভাবনাই বেশি। দলের সেরা খেলোয়াড়কে নতুন করে পথচলার শুরুতেই পাবেন আশাবাদী মুমিনুল।
করোনা বিরতির পর নতুন করে অধিনায়কত্বের শুরুর অভিযান কেমন হবে সেটিও জানালেন মুমিনুল, ‘সবসময় আগ্রাসী অধিনায়কত্ব করতে পছন্দ করি। রক্ষণাত্মক অধিনায়কত্ব আমার অতটা পছন্দ নয়। ম্যাচের পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় অন্যরকম হয়। তবে আক্রমণাত্মক থাকতেই পছন্দ করি।’
‘একবছর পর ক্রিকেটে ফেরা এটা সত্যি আনন্দের। আমার কাছে মনে হয় একবছর পর যেহেতু ফিরছি, নতুন করে আরেকটা সুযোগ এসেছে টেস্ট ক্রিকেট নতুনভাবে শুরু করার। এটাকে সুযোগ হিসেবেই দেখছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটু চ্যালেঞ্জ তো থাকেই। ওটার চাইতে যে জিনিসটা ভাবছি, আমরা দল হিসেবে ভালো পারফর্ম করার, নতুন করে শুরু করার সুযোগ পাচ্ছি।’