আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ. ম রেজাউল করীম একজন আইনজীবী। টেলিভিশন টকশো’তে বেশ পরিচিত মুখ। সমসাময়িক যে কোনো ঘটনায় টিভির পর্দায় নিয়মিত দেখা যায় তাকে। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের দাবিতে তিনি সবসময় সোচ্চার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম আইনজীবীদের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয়। সদ্য বিলুপ্ত বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
বর্তমানে তিনি আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য। বার কাউন্সিলে ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে জড়িত। ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগ করেছেন। ১৯৮০ সালে খুলনা দৌলতপুর সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিপি, ১৯৮১ সালে খুলনা কৃষি কলেজের সাধারণ সম্পাদক জিএস ছিলেন। ১৯৮৯ সালে নাজিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে ১৯৯০ সাল থেকে অদ্যবধি জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য হিসেবে কাজ করছেন।
পেশাজীবনে গুরুত্বপূর্ণ মামলায় আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেলহত্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার আইনজীবী ছিলেন তিনি। ১/১১ এর দুর্যোগকালীন সময়ে তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে আইনি সহায়তা দিয়েছেন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, শেখ সেলিমের মতো রাজনীতিবিদদের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি তিনি একান্ত সাক্ষাতকার দেন।
প্রশ্ন: জীবনে প্রথমবার মন্ত্রী হওয়ার জন্যে আপনি কি প্রস্তুত ছিলেন?
শ. ম. রেজাউল করীম: মন্ত্রী হওয়ার জন্যে আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।
প্রশ্ন: এই চমকটা কী করে ঘটলো?
শ. ম. রেজাউল করীম: এই চমকটা পুরোপুরি আল্লাহ’র অসীম রহমত এবং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উদারতা, হৃদয়ের বিশালতা এবং মহানুভবতার জন্যে সম্ভব হয়েছে। সংসদে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবো এই স্বপ্ন আমার ছিল। হঠাৎ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আমাকে মন্ত্রী পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই দায়িত্বকে আমি চ্যালেঞ্জ মনে করি। আর এই চ্যালেঞ্জের সবটুকু গ্রহণ করার মত মানসিকতা, দৃঢ়তা, সাহস এবং সততা আমার আছে।
প্রশ্ন: নতুন মন্ত্রী এবং এত বড় মন্ত্রণালয়- চাপ অনুভব করছেন? কী করে সামাল দেন এই চাপ?
শ. ম. রেজাউল করীম: ইটস ট্রু। আমার মন্ত্রণালয়ে ১২টি অর্গান আছে। রাজউক, গণপূর্ত অধিদপ্তর, গৃহায়ন, আবাসন, চট্টগ্রাম ডেভলপমেন্ট অথরিটি, খুলনা ডেভলপমেন্ট অথরিটি, কক্সবাজার ডেভলপমেন্ট অথরিটি এই রকম বারোটি অর্গানের সমন্বয়ে এই গৃহায়ন এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে কিছুটা হিমশিম খাওয়ার মত অবস্থা। কঠিনেরে ভালবাসার প্রত্যয় আমার আছে। দৃঢ়তা আছে। আমার বিশ্বাস যে, একটি সমন্বিত অবস্থার ভেতর থেকে গৃহায়ন এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে অধিকতর জনমুখী, জনবান্ধব এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাজের যে স্পিরিট, সবকিছু উৎসর্গ করতে হবে জণকল্যাণে- সেই জায়গায় আমি সাফল্য দেখাতে সক্ষম হবো।
ঢাকা মহানগরীর যে সব স্থাপনা আছে তার বয়স কোন কোন এলাকায় ৫০০ বছরের বেশি। অপরিকল্পিতভাবে, বিল্ডিংয়ের জন্যে যে সরঞ্জাম প্রয়োজন এগুলো না দিয়ে এমনভাবে গড়ে উঠেছে পুরনো ঢাকাসহ অন্যান্য জায়গা যে, রাতারাতি এর পরিবর্তন করা সম্ভব না। কিন্তু নতুন নগর যখন হচ্ছে- সেখানে যেন পরিকল্পনার ব্যত্যয় না হয়, পরিবেশ পরিপন্থি কোন কিছু যাতে না হয় এবং জীবন যেনো ঝুঁকিপূর্ণ না হয়- তার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে আমরা ১৮১৮টি বহুতল ভবন চিহ্নিত করেছি যেখানে অনেক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে।
আমরা সেইগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। পুরনো ঢাকাকে রি-ডেভলপমেন্ট করে কীভাবে বসবাস উপযোগী, পরিবেশ উপযোগী করা যায়- তার জন্যে আমরা স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে এবং জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে আমাদের কর্মপন্থা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আধুনিক কয়েকটি শহর হয়েছে-পূর্বাচল, উত্তরা ও ঝিলমিল। সেখানে ৬০ শতাংশ জায়গা আমরা ফাঁকা রেখেছি- যাতে পরিবেশ ঠিক থাকে। জলাধার রাখা হয়েছে। কোনভাবেই পরিকল্পনার পরিপন্থি কোন কিছু যাতে না হয়। বিল্ডিং কোড দীর্ঘদিন অচল অবস্থায় পড়ে ছিল। এই বিল্ডিং কোডকে কারিগরী কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্ট নিয়েছি- আমরা শিগগিরই একটা গেজেট নোটিফিকেশনের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করবো।
এর ফলে অনিয়ম বা নিয়ম বর্হিভূত যে কোন ব্যত্যয় ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। আমরা ঢাকা মহানগরীকে পরিবেশ সম্মত পরিকল্পিত আধুনিক একটি নগরীতে পরিণত করবো- ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন: এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল গ্রাম হবে শহর। এর দায়িত্ব আপনার মন্ত্রণালয়ের। আর পুরো দেশটা যদি ঢাকা শহরের মতো কংক্রিটের জঞ্জাল হয়ে যায়- তাহলে দেশের চেহারা কী হবে?
শ. ম. রেজাউল করীম: আমার একটি স্বপ্ন রয়েছে। এই স্বপ্ন আমার না। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন। তিনি মনে করেন, ট্যাক্সের টাকা গ্রামের অসহায় দরিদ্র কৃষকও দেয়। শ্রমিকরা দেয়। ঢাকায় আমরা যারা বসবাস করি আমরাও দেই। কিন্তু নাগরিক সুবিধা আমরা যারা শহরে বাস করি তারাই বেশি ভোগ করি। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন যে, গ্রামের মানুষের নগরের সুবিধা দিতে হবে। শহরে পানি সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা আছে- আমি গ্রামে পানি সাপ্লাইয়ের কথা ভাবছি।
বিদ্যুতের সরবরাহ শহরে যেভাবে আছে- গ্রামে সেভাবে দিতে চাই। স্থাপত্য উন্নয়ন নিতে চাই। এজন্য প্রথম শর্তটা হবে ডিসেন্ট্রালাইজেশন। মানুষ কাজের জন্যে ব্যবসার জন্যে প্রতিষ্ঠার জন্যে সবাই শহরমুখী।
আমি যদি গ্রামে সেই স্থাপত্য আনতে পারি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিতে পারি তাহলে তারা ওই কেন্দ্রীকতায় থাকবে। যেমন, আমি চীনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ডেলিগেশনে গিয়েছি। চীনের গ্রামে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকের বাড়ির কাছেও পাকা বিল্ডিং আছে- রাস্তা আছে। তবে তা হতে হবে পরিকল্পিত। শহরের কংক্রিটের জঞ্জালকে গ্রামে স্থানান্তর করতে চাই না। গ্রামে সুপরিকল্পিত উন্নয়ন করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ডেলটা প্ল্যান। একশো বছরের পরিকল্পনাতে কী কী সম্ভাব্য হতে পারে সেটাকে সামনে রেখে ৫ বছর ৫ বছর করে আমরা বিন্যাস করেছি।
কংক্রিটের অনাকাঙ্খিত নগরীতে পরিণত করবো না গ্রামকে। কিন্তু গ্রামের জন্যে প্রয়োজন স্থাপত্য উন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও নগরের সুফল দেওয়ার জন্যে যে পরিকল্পনা আছে- আমার বিশ্বাস ৫ বছরের ভেতরে দেখবেন যে, আমাদের সনাতনী গ্রাম খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে শান্তির নীড় আধুনিক গ্রাম খুঁজে পাবেন যেখানে অসহায় মানুষকে টিনের নীচে কাঠের নীচে অথবা ছাউনির নীচে থাকতে হবে না। তারা নিশ্চিত আবাসন পাবে- যা তার রাষ্ট্রীয় এবং সাংবিধানিক অধিকার।
প্রশ্ন: বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আপনারা কী করছেন?
শ. ম. রেজাউল করীম: বিল্ডিং কোড দীর্ঘদিন আটকে ছিল নানা জটিলতার করণে। আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ে এনেছি। খুব শিগগিরই গেজেট নোটিফিকেশনের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করবো। এর ফলে আইনি ভিত্তিটা দৃঢ় হয়ে দাঁড়াবে যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে।
প্রশ্ন: আপনার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো সংস্থা রয়েছে সেগুলোর সাথে সমন্বয় করে কিভাবে কাজ করছেন?
শ. ম. রেজাউল করীম: আমার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো সংস্থা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংস্থা রাজউক। রাজউক একটা রেগুলেটরী বডি। নিয়ন্ত্রিতভাবে মহানগর কিভাবে চলবে। সেক্ষেত্রে প্ল্যান দেওয়া এবং ভূমির ছাড়পত্র দেওয়া ছাড়াও রাজউক আরও ডেভেলপড করেছে। রাজউকের আবাসন ব্যবস্থা ও চারটি দপ্তরে হয়রানির অভিযোগ ছিল সেগুলোকে আমরা ডিজিটাল ফরমেটে এনেছি। এখন আপনি বাসায় বসেই প্ল্যানের জন্যে আবেদন করতে পারবেন। ল্যাপটপে, কম্পিউটারে এমনকি মোবাইল ফোনে স্ক্যানিং করে আপনার বাসায় ম্যাসেজ চলে যাবে যে, আপনার প্ল্যানের অনুমোদন হয়েছে অথবা এই সব কারণে অনুমোদন হয়নি।
রাজউক আরেকটা কাজ করছে। আমরা স্যাটেলাইট টাউন গড়ে দেব এবং সেখানে আমরাই সব ব্যবস্থা করে দেবো। মানুষ দীর্ঘমেয়াদী কিস্তিতে তার বাড়ি করতে পারবে। এটা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সবার জন্যে আবাসন কেউ থাকবে না গৃহহীন- প্রধানমন্ত্রীর এই শ্লোগানকে বাস্তবায়ন করার জন্য। আরেকটি বড় উন্নয়ন সংস্থা- চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তারা ফ্লাইওভার এবং নয়নাভিরাম এক্সপ্রেস ওয়েসহ বিভিন্ন রকমের কাজ করছে। সেখানেও কিন্তু একই আইন করে দিয়েছি যাতে প্ল্যান নিতে আসলে তাকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্ল্যান দিতে হবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্ল্যান চাইতে হবে।
একজন নামপত্তনের জন্যে আসলেন তাকে নির্ধারিত ৭ দিনের মধ্যে নামপত্তন করে দিতে হবে। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একেবারেই নতুন একটি প্রতিষ্ঠান আমাদের। খুবই অল্প দিন হয়েছে আমরা তৈরী করেছি। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন একভাবে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন করেছেন, পর্যটন একভাবে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন করেছেন- সব কিছু মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় একটা মাস্টারপ্ল্যান করার জন্যে। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা গোটা কক্সবাজারে জেলাকে মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় এনেছি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকতকে যার যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারবেন না। সৈকতের কতোটা দূরে বিল্ডিং হতে পারবে? কোন এলাকায় ইন্ডাস্ট্রি হবে? কোন এলাকায় হোটেল করা যাবে? কোথায় করা যাবে না- এই সব কিছুকে একটা পরিকল্পিত নগরীর ভেতরে নিয়ে আসার জন্যে আমরা আমাদের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছি। কিছু কিছু জটিলতাও তৈরী হয়েছে। কেউ কেউ নিয়ম না মেনে স্থাপনা তৈরি করেছেন। কেউ কেউ একেবারে সমুদ্রের ভেতরে স্থাপনা করেছেন। আমরা সবকিছুকেই নিয়মের ভেতরে নিয়ে আসছি।
প্রশ্ন: আপনারা নতুন নতুন স্যাটেলাইট টাউন এবং আইকনিক টাওয়ারসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছেন- এ সম্পর্কে জানতে চাই?
শ. ম. রেজাউল করীম: উপশহর এলাকায় স্যাটেলাইট টাউন তৈরী করতে হবে। আমাদের পূর্বাচল স্যাটেলাইট টাউন তার অন্যতম। পূর্বাচল স্যাটেলাইট টাউনের পরিকল্পনা এমন করে করা হয়েছে যে, তার ৬০ ভাগ জায়গা ফাঁকা থাকবে। সেখানে আমরা কৃত্রিম লেক করেছি। খেলার জন্যে মাঠ রেখেছি। সেখানে সবুজের জন্যে বনায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং বড় ধরণের একটি আইকনিক টাওয়ার হবে এবং আমাদের পরিকল্পনার ভেতরে।
ঢাকা শহরের মূল যে নগর তার চেয়ে পরিকল্পিত নগর হবে স্যাটেলাইট শহর পূর্বাচল। সেখানে দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। বিদ্যুতের কানেকশন দেওয়া হয়েছে। ওয়াটার সাপ্লাইয়ের জন্যে ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হয়েছে। রাস্তার কাজ অলমোস্ট হয়ে গেছে। প্লটে প্ল্যান দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে। ২০০ এর উপরে হাউজিং এর প্ল্যান ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। আমরা চিন্তা করছি ৩ কাঠার জন্যে আলাদা প্ল্যান ৫ কাঠার জন্যে আলাদা প্ল্যান এবং ১০ কাঠার জন্যে আলাদা আলাদা প্ল্যান।
যে যার ইচ্ছে মতো বাড়ি করতে পারবেন না। আমরা টেন্ডার দিয়ে কম্পিটিশনের ভেতর দিয়ে প্ল্যান নিয়ে আসবো। আপনার ৩ কাঠার প্লট থাকলে আপনি ওই ৩ কাঠার প্ল্যানের জন্যে আবেদন করলে আমরা নির্ধারিত প্ল্যান দিয়ে দেবো। সকল ৩ কাঠার জন্যে একই প্ল্যান। কেউ যাতে সেড ব্যাকে জায়গা না রাখতে পারে। কেউ প্ল্যানের পরিপন্থি কোন কাজ যাতে না করতে পারেন। এইভাবে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় আমরা যে প্লট দিয়েছি সেটাও কিন্তু স্যাটেলাইট টাউন। এর বাইরে আমরা মালয়েশিয়ার একটা কোম্পানীর সাথে যৌথ চুক্তিতে ১৩ হাজারের উপরে ফ্ল্যাট নির্মাণ করছি এবং সেই সব ফ্ল্যাট হবে বিশ্বের আধুনিক ফ্ল্যাটের অন্যতম ফ্ল্যাট।
সেখানে যারা ফ্ল্যাটের টাকা দেবেন তারা কিস্তিতে নিতে পারবেন। উত্তরা থার্ড ফেজে আমরা একই ফ্ল্যাট তৈরি করছি এবং স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যে আলাদা ফ্ল্যাট তৈরী করছি। আরেকটা পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে- তুরাগ নদীর পাড়ে প্রাকৃতিক জলাধার রক্ষা করে যেখানে পানি আছে সেখানে পানি থাকবে এবং যেটুকু মাটি আছে ওই মাটির উপরে বিল্ডিং হবে। প্রকৃতির নয়নাভিরাম সবকিছু রেখে এটি হবে আলাদা নগরী। এভাবে ঢাকার পাশের এলাকা শ্রীনগরে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। সাভারে ও কেরাণীগঞ্জের একটা পার্টেও আমরা পরিকল্পনা রেখেছি। ঢাকার জনগোষ্ঠী এতো বেশি হয়ে গেছে যে, তা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে এই জন্যে ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করার জন্যে-পূর্বাচল নরসিংদী পর্যন্ত পৌছে গেছে নারায়ণগঞ্জে এবং গাজীপুরে।
আর পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ার পরে বিস্তার আরও হয়ে যাবে। আমরা বুড়িগঙ্গার অপর পাড়ে যেমন করছি তেমনি পদ্মা সেতুর অপর পাড়ের জন্যেও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকার চাপ কমিয়ে আনার জন্যে পরিকল্পিত, আধুনিক, সুসংগঠিত এবং পরিবেশবান্ধব নগরী গড়ার জন্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: আমরা শুনছি ঢাকাতে দুবাই ও মালয়েশিয়ার মত সুউচ্চ বিল্ডিং তৈরী হচ্ছে। কবে এই ভবন তৈরী হবে?
শ. ম. রেজাউল করীম: দেখুন, এটি আমাদের সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট পূর্বাচলে ৩০০ ফিটের পাশে একটা আইকনিক টাওয়ার। এই টাওয়ারটা বিদেশী পরিকল্পনায় আমরা করবো। কারণ বাংলাদেশে এটি নতুন কনসেপ্ট। এই টাওয়ারের ফিজিবিলিটি স্টাডি হয়ে গেছে। আমরা লক্ষ্য রাখবো এটি যাতে পরিবেশবান্ধব হয়। কোন দূর্ঘটনা আসলে যাতে তা নিরাপদ থাকে। এই বিষয়গুলো সক্রিয়ভাবে আমাদের কাজের ভেতরে আছে। যাদের দিয়ে আমরা করাবো সেই জায়গায় টেন্ডারের ভেতর দিয়ে ১০০ একরের উর্ধ্বে জায়গা ইতোমধ্যে তাদেরকে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছি। তারা কিছু টাকাও জমা দিয়েছেন। বাকী টাকা জমা দেওয়ার পরে তাদেরকে আমরা লীজ ডিড করে দেবো। লিজ ডিড হওয়ার পরে সেখানে এই আইকনিক টাওয়ার তৈরী হবে। প্রধানমন্ত্রীর একটি নির্দেশনা আছে যে, জায়গা আমাদের বাড়ছে না। এমনকি গ্রামের কৃষি জমিতে আমরা আবাসন করে জায়গা নষ্ট করে ফেলছি।
এই জন্যে আমরা চাই- জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে। যে অঞ্চল দিয়ে বিমান চলবে সেই অঞ্চলকে বাদ দিয়ে অন্য অঞ্চলে ৫ কাঠা জায়গা থাকলেও আমরা হাইরাইজ বিল্ডিং করতে চাই- যাতে এই বাংলাদেশের ছোট্ট পরিসরের প্রতি ইঞ্চির সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়। আমার বিশ্বাস- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের এখনকার সময়ের ভেতরেই ঢাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিশ্বের অন্যান্য আধুনিক দেশের যে দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো আছে তা ঢাকাতেও দেখা যাবে- ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন : এই সব বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণে সরকারের অন্যান্য বিভাগের সহযোগিতা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে কি করছেন আপনারা?
শ. ম. রেজাউল করীম: কেউ কেউ তার সীমাবদ্ধতার কারণে এগিয়ে আসছে না। যেমন, পূর্বাচলে ওয়াসা পানি সরবরাহ করতে অনিচ্ছুক। তারা বলছেন, আমাদের যে জনবল এবং জুরিসডিকশন আমরা তাতে পারছি না। এই জন্যে সেখানে আমরা রাজউকের নেতৃত্বে আলাদাভাবে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করছি। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে সেখানে আমরা আলাদা অথরিটি করবো শুধু পানির জন্যে। একইভাবে বিদ্যুতের জন্যে আমরা আলাদা ব্যবস্থা করছি। এছাড়া ঝিলমিল প্রকল্প, তুরাগ এবং অন্যান্য জায়গায় যেসব সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে তাদের সাহায্য আমরা নেবো আর যারা আসতে পারবেন না সেখানে আমরা নিজেরা ম্যানেজমেন্ট করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আলাদা অথরিটি করবো এর ফলে কোন প্রকার কনফ্লিকটিং অবস্থা হবে না।
এছাড়া আমাদের একটি বড় পরিকল্পনা আছে যে, সেবাগুলোকে মাটির নীচ দিয়ে নেওয়া। এই প্রক্রিয়াকেও আমরা বিশেষভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি। যেমন, ঢাকার অনেক জায়গায় বিদ্যুতের অনেক লাইন। একটা লাইন পড়ে গেলে আরেকটা কাজ করতে পারছে না। আমরা মাথায় রেখেছি যে, পূর্বাচলসহ আধুনিক নগরগুলোতে বিদ্যুত, পানি ও গ্যাসসহ সকল সেবা মাটির নীচ দিয়ে যাবে। উন্নত রাষ্ট্রের মত বোঝা যাবে না সার্ভিস কানেকশনটা কোথা থেকে আসলো? এটিও পরিকল্পিতভাবে করছি।
প্রশ্ন: এখনো ঢাকা শহরে অসংখ্য মানুষ ফুটপাতে ঘুমায়। তাহলে সবার জন্যে আবাসন এই কথার মাহাত্ম্য কোথায়?
শ. ম. রেজাউল করীম: আমি অত্যন্ত সাধারণ পরিবার এবং গ্রাম থেকে এসেছি। আমি কষ্ট এবং দারিদ্রতার অভিশাপ জানি। অসহায় মানুষের কষ্ট কেমন জানি? বিত্ত বৈভবে যারা ফুঁলে ফেঁপে উঠেছে তাদের বিশাল অট্টালিকাও আমি দেখি। কাজেই আমার সমন্বয়ের জায়গা একেবারে হৃদয় থেকে হবে, কৃত্রিমতা থাকবে না তাতে। এই কাজে আমার সবচেয়ে বড় সাহস বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তিনি বলেছেন যে, একজন মানুষও যেনো অসহায় অবস্থায় না থাকে। তার খাদ্যে তার বস্ত্রে তার আবাসন ব্যবস্থায়। তার জন্যে তিনি বলেছেন, ‘যতো মেগা প্রজেক্ট লাগে সব প্রজেক্ট দেবো।
সদিচ্ছা আর সততা থাকলে কিছুই লাগে না।’ আমার বিশ্বাস- সবাই আমাকে কিছুটা সময় দেন, দেখবেন প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন এবং পরিকল্পনা কিভাবে গৃহায়ন এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করে। এটি শুধু কথার ফুঁলঝুরি থাকবে না। আমি প্রমাণ করে দেবো- প্রধানমন্ত্রী যে আস্থা নিয়ে আমাকে মন্ত্রী করেছেন সেই আস্থা আমি পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে সক্ষম।
প্রশ্ন : এতো বড় মন্ত্রণালয়ে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে দুর্নীতি- একে আপনি চ্যালেঞ্জ মনে করছেন কিনা?
শ. ম. রেজাউল করীম: আমার মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট যারা তাদের নিয়ে বসেছিলাম। আমি তাদের সকলকে বলেছি যে, আমার দিক নির্দেশনা হলো প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা। তিনি বলেছেন দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স। কোন ভাবেই দুর্নীতি চলবে না। যদি কেউ দুর্নীতি করতে চান তাহলে আমাদের প্রয়াত নেতা সৈয়দ আশরাফের ভাষায় বলবো- দুর্নীতি করলে তাকে দুর্নীতিতে যেতে হবে। আর যদি প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারীর দায়িত্ব পালন করতে চান তাহলে দুর্নীতি পরিহার করতে হবে। যদি না করেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ আমার মাথার উপরে ছায়া হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, কোন ভাবেই দুর্নীতিকে ছাড় দেওয়া যাবে না। আমি ছোট্ট একজন মানুষ কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাস, সততা এবং স্বচ্ছতা অনেক দৃঢ়, অনেক শক্ত।
প্রশ্ন: আপনার মন্ত্রণালয়ের যে কোন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার বিরুদ্ধে আপনি প্রস্তুত?
শ. ম. রেজাউল করীম: যে কোন অনিয়ম যে কোন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা প্রতিরোধ করবো ইনশাল্লাহ। তাদেরকে বলেছি- সবাই আমরা ভালভাবে কাজ করতে চাই। ভালভাবে যারা কাজ করতে না চান? দে উইল ফেস দ্য কনসিকোয়েন্স।
প্রশ্ন: আগামী প্রজন্ম বা শিশুদের জন্যে আলাদা কোন ভাবনা আছে?
শ. ম. রেজাউল করীম: অবশ্যই আছে। প্রধানমন্ত্রীর এবারের কেবিনেটের দিকে তাঁকিয়ে দেখেন তিনি অধিকতর তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিদের এনেছেন। তিনি আমাদেরকে মিটিংয়ে বলেছেন- তরুণদেরকে ট্রেইনড আপ করতে হবে। কারণ অধিকাংশ ভোটাররা তরুণ এবং তরুণরাই স্বপ্ন দেখতে পারে। যারা একটু ওল্ড তাদের হয়তো অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু ক্রিয়েটিভিটির জায়গায় তরুণদের কাছাকাছি কেউ নাই। সেই জন্যে আমি মনে করি তরুণ এবং নতুন প্রজন্ম যারা- তাদের জন্যে আমাদের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতে হবে। তাদেরকে শক্তি দিতে হবে। তাদের প্রতিভার বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে।
প্রশ্ন : আপনি সকলের এমপি মন্ত্রী নাকি একটি দলের এমপি মন্ত্রী হয়ে থাকতে চান?
শ. ম. রেজাউল করীম: আপনি শুনলে আশ্চর্য হবেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ভোট নেওয়ার আগে তুমি একজন আর ভোট নেওয়ার পরে তুমি সকলের প্রতিনিধি। আমার এলাকায় নির্বাচনে প্রায় ৪০টা মিটিং করেছি। সবাইকে বলেছি- দল, মত, নির্বিশেষে সকলের ভোট চাই এলাকার উন্নয়নে এবং তাদেরক বলেছি আমি টিআর, কাবিখার ৪০ দিনের গম, উৎকোচ, শিক্ষক নিয়োগ, ঠিকাদারি কমিশন কোনদিন গ্রহণ করবো না। আল্লাহকে হাজির নাজির করে চ্যালেঞ্জ করে বলেছি এবং আরও বলেছি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার কেউ আমার দ্বারা হবেন না। আমার এলাকায় ভিন্ন দল করেন যারা তারাও আমাকে অনেকেই ভোট দিয়েছেন এবং প্রকাশ্যে বলেছেন- আপনার দলকে ভোট দিচ্ছি না। আপনাকে ভোট দিচ্ছি।
প্রশ্ন: সফল হওয়ার জন্যে কতো সময় প্রয়োজন আপনার?
শ. ম. রেজাউল করীম: অনেক বড় একটা মন্ত্রণালয় বারোটা অর্গানের সমন্বয়ে। টাইম লিমিট বলবো না তবে সনাতনী পদ্ধতিতে ধীরে ধীরে চলার গতিতে আমি বিশ্বাসী না। সারা দুনিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা যেখানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে আকাশে পাঠিয়েছি, সমুদ্র বিজয় করেছি। স্থল সীমানার বিরোধ আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে নিষ্পত্তি করেছি। নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু ৬০ শতাংশের উপরে কাজ হয়েছে। বাংলাদেশে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসায় কোন জায়গায় বিবস্ত্র লোক খুঁজে পাবেন না। কোথাও একটা লোক পাবেন না যে, লঙ্গর খানা খুলতে হচ্ছে না খেয়ে আছে। এই যে রেডিক্যাল চেঞ্জটা আসছে এই চেঞ্জের ধারাবাহিকতার সাথে সম্পৃক্ততা নিয়ে আমাদেরকে উদ্যাম গতিতে দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাবো।
প্রশ্ন: টেন্ডার এবং সন্ত্রাসের সাথে এই মন্ত্রণালয়ের যোগ আছে- নির্মূলে কী করবেন?
শ. ম. রেজাউল করীম: এটি নির্মূলের স্বপ্ন আছে। যদি নির্মূল করতে না পারি তাহলে সহনীয় মাত্রায়ও যদি নিয়ে আসতে পারি তাহলে মনে করবো আমি সার্থক হয়েছি।
প্রশ্ন: সেই প্ল্যানিং কী?
শ. ম. রেজাউল করীম: যেমন, টেন্ডার। আমি বলেছি টেন্ডার ম্যানুয়াল হবে না। ই-টেন্ডার সিস্টেমে হবে। এখানে একটি বক্স আছে। আপনি মাস্তান নিয়ে এসে কাউকে দিতে দেবেন না। ই -টেন্ডার সিস্টেম হবে। আপনি রাজশাহী বসে অনলাইনে টেন্ডার দিতে পারবেন। তার ভেতর থেকে এনালাইসিস হবে কে হাইয়েস্ট বিডার? কোন কোটা বা সিন্ডিকেট থাকবে তা আমি চাই না।
প্রশ্ন: ভাল কাজের জন্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস দরকার। অন্যান্য মন্ত্রণালয়েরও নানা স্থাপনা হচ্ছে সেগুলো ওয়ান স্টপ সেবার মাধ্যমে কিংবা গণপূর্তের মাধ্যমে না করলে ঝামেলা হয়?
শ. ম. রেজাউল করীম: আমাদের পরিকল্পিত নতুন শহরগুলোর ভেতরে কোন স্থাপনা করতে গেলে অবশ্যই আমাদের প্ল্যান ও অনুমতি নিতে হবে। এর বাইরে যার যার ইচ্ছা মতো মনে হলো কেউ ১০ তলা বিল্ডিং করলেন, কেউ গবাদী পশুর খামার করলেন, কেউ হাসপাতাল করলেন, কেউ পোল্ট্রি ফার্ম করলেন- এইগুলো আমরা কোনভাবেই অনুমোদন দিচ্ছি না। ফলে পুরনো ঢাকার যে বিপর্যয় হয়ে গেছে তার উত্তরণের জন্যে আমরা যেমন চেষ্টা করছি- এখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে নতুন শহরগুলোতে যাতে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র যা ইচ্ছে তাই গড়ে উঠতে না পারে- সেই ব্যাপারে আমাদের কঠোর নজরদারি আছে।
প্রশ্ন: দেশের আবাসন সেক্টরের সাথে ভূমি দস্যুতার সম্পর্ক আছে। প্রভাবশালীদের মোকাবিলার ব্যাপার আছে। এছাড়া রাজউকসহ অন্যান্য অর্গানের সাথে কাজ করতে গেলে অনেক বাধা ও চ্যালেঞ্জ আছে। তাই সবকিছুকে ডিজিটালাইজ করে মনিটরিং করার কোন ব্যবস্থার কথা কী ভাবছেন?
শ. ম. রেজাউল করীম: আমরা একটি বড় পরিকল্পনা নিয়েছি। আমার মন্ত্রণালয় এবং এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে সব প্রতিষ্ঠানকে আমরা ডিজিটালাইজড করবো। এই অটোমেশনে এমন পদ্ধতি থাকবে যে, এই মন্ত্রণালয়ে বসে আমি কোথায় কী কাজ চলছে তা আমি মনিটর করতে পারবো। কোন কাজ এগিয়ে যাচ্ছে না- কোন কাজে স্থবিরতা আছে এই সবকিছু আমি এখান থেকে পর্যবেক্ষন করতে পারবো ও নির্দেশনা দিতে পারবো। আর আমি অবশ্যই মানি একা কিছু্ই করা যায় না। সকলকে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হয়। রাজউকসহ সকল প্রতিষ্ঠানে- গণপূর্তে একসময় টেন্ডার সিন্ডিকেট ছিল। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন এখন সেইভাবে আর টেন্ডার সিন্ডিকেড নাই। রাজউকের আশপাশে গেলে হয়রানির অভিযোগি ছিল। খোঁজ নিয়ে দেখবেন এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতি। রাতারাতি সব আমি পাল্টাতে পারবো না। তবে সাধ্যমত চেষ্টা করছি এবং আশা করছি সকলেই এই পরিকল্পনায় আমার সাথে সহযোগিতা করবেন। ইতিমধ্যে আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দপ্তরসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অনেকের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি।
আমার মনে হয় না অন্য কোন মন্ত্রণালয়ে তাদের নিজের মন্ত্রণালয়ে কিংবা দপ্তরসমূহের এতো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই জাতীয় কোন ব্যবস্থা নিয়েছে। লক্ষ্য একটাই- কাউকে হয়রানি করা নয়- কাউকে চাকরিচ্যুত করা নয়। উদ্দেশ্য হলো- সবাইকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা। রাতারাতি সবকিছু সম্ভব না হলেও অনেক উন্নতি ইতিমধ্যে হয়েছে এবং ইনশাল্লাহ অদূর ভবিষ্যতে আরও উন্নতি হবে।
প্রশ্ন : আমাদের পুরনো অবকাঠামো থেকে আমরা বের হতে পারছি না। আধুনিক স্ট্রাকচারে স্থাপত্য নির্মাণ পুরনো ধ্যান ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে নতুনভাবে কী করবেন?
শ. ম. রেজাউল করীম: বিল্ডিং কোডকে চূড়ান্ত করতে গিয়ে সর্বোচ্চ লেভেলের আর্কিটেক্ট এবং অন্য যারা এক্সপার্ট আছেন তাদের সকলকে নিয়েই আমরা কাজ করছি, তাদের মতামত নিচ্ছি। এই কারণেই যে, আমাদের মতামত সঠিক নাও হতে পারে। এই ক্ষেত্রে যারা অভিজ্ঞ, পন্ডিত ও যারা দক্ষতা সম্পন্ন তাদের সকলকে নিয়ে আমরা কারিগরি এবং টেকনিক্যাল এক্সপার্ট কমিটি করি।তাদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা বিল্ডিং কোড চূড়ান্ত করছি। আমাদের যে নকল প্রণয়ন করা হবে- তা চূড়ান্ত করছি।বিল্ডিংয়ের গায়ে যে গ্লাস লাগানো হবে তা কোন প্রকৃতির গ্লাস লাগানো উচিত- তাই করছি। এখন কাজের পরিসর কিন্তু শুধু মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরে না? সমস্ত এক্সপার্টদের নিয়ে আমরা কাজ করছি। ফলে আমাদের যুগোপযোগী ও সময় উপযোগী পরিকল্পনা স্থাপত্য বিভাগ ও গণপূর্ত বিভাগ এবং বুয়েটের সমন্বিতভাবে কাজ চলছে। প্ল্যানার্স ইন্সটিটিউট, আর্কিটেক্ট ইন্সটিটিউট এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন- আমরা তাদেরও সহযোগিতা নিচ্ছি। বাংলাদেশে যারাই এই ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেন তাদের সকলকে নিয়েই কিন্তু আমরা কাজ করছি এবং আমার বিশ্বাস মান্ধাতা আমলের সনাতনী প্রথার বাইরে আমরা বেরিয়ে আসছি। বাংলাদেশে আর কোন ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিবেশ বিরোধী স্থাপনা তৈরী হতে দেওয়া হবে না।
প্রশ্ন: পুরনো ভবনগুলো রেনোভেশনের কোন প্রক্রিয়া কি আসবে?
শ. ম. রেজাউল করীম: আমরা রাতারাতি সব কিছু চেঞ্জ করবো না-কিছু রক্ষণশীলতা আমাদের আছে। মর্যাদাপূর্ণ যে সকল স্থাপনা আমাদের আছে সেই স্থাপনা কিন্তু আমরা ধরে রাখতে চাই। ধরেন, বঙ্গভবনের স্থাপনা। এটাকে আমরা একই রকম রাখতে চাই। রোজ গার্ডেনের স্থাপনা ও আহসান মঞ্জিলসহ অন্যান্য মর্যাদাপূর্ণ স্থাপনায় কোন চেঞ্জ আনা হবে না। তবে সরকারি অফিস ও অন্যান্য দপ্তরকে সময় উপযোগী করার পরিকল্পনা আমাদের আছে। তবে আমাদের অবশ্যই মাথায় রাখতে হয়- এই দেশের অর্থনৈতিক সম্পদ ও সামর্থ । সবকিছু ভেঙে রাতারাতি সব চেঞ্চ করতে গেলে যে আর্থিক বিনিয়োগ হবে, সেই বিনিয়োগ এখানে করার চেয়ে পদ্মা সেতুতে করা অনেক বেশি দরকারি। রাস্তাঘাটের সংযোগের বিনিয়োগ অনেক বেশি দরকার। ব্রিজ কালভার্ট অনেক জায়গায় নাই-সেখানে বিনিয়োগের অনেক বেশি প্রয়োজন। ইকনোমিক্যাল জোনে বিনিয়োগ অনেক বেশি প্রয়োজন।
এই সকল বিষয় আমরা তুলনামূলক বিবেচনা করে দেখেছি যে, যার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি তাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছি। কিন্তু কোন অবস্থাতেই সনাতনী আমলের চিন্তা চেতনা নিয়ে আদিম যুগে পড়ে থাকবো না। আরেকটি আপনার প্রশ্ন ছিল- প্রভাবশালীদের প্রভাবের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো কিনা? কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি তিনি মিডিয়ার মালিক হন বা অর্থের মালিক হন- কারও প্রতি উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোন ক্ষতি করার লক্ষ্য আমার নাই। তবে নিয়মের অধীনে সকলের সহযোগিতা চাইবো। যদি সহযোগিতা না করেন- ল উইল টেক ইট ওন কোর্স- আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কোনভাবেই আইনের ব্যত্যয় কেউ করবেন না, এটি আমার প্রত্যাশা। এই পর্যন্ত কেউ আমাকে অবৈধ অন্যায় কোন কিছু নিয়ে আসেন নাই। আমার বিশ্বাস ৫ বছরে যদি মন্ত্রী হিসাবে থাকি তবে এইভাবেই সকলের সহযোগিতা চাই। আইনের আলোকেই সকলকে থাকতে হবে।
প্রশ্ন : আপনার মন্ত্রণালয় নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
শ. ম. রেজাউল করীম: এই মন্ত্রণালয় অবকাঠামোগত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত। ফলে এই মন্ত্রণালয়ের জুরিসডিকশনের বাইরেও কিন্তু অনেক কিছু চলে যাচ্ছে। যেমন, ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট আলাদাভাবে তাদের নির্মাণ কাজ করছে, হেলথ মিনিস্ট্রি এবং স্থানীয় সরকারও তাদের নির্মাণ কাজ করছে। আমাদের কাজের অনেক পরিসর কিন্তু বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু যেটুকু আমাদের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের ভেতরে আছে সেইটুকুকে সুসংগঠিত করতে চাই। সেখানে অনিয়ম দুর্নীতি দূর করে জবাবদিহিতার ভেতরে সবকিছু নিয়ে আসতে চাই।
অনেক ভাল কাজ ইতিমধ্যে হয়েছে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ১৩ মাসের মধ্যে ২০ তলা বিল্ডিং নির্মাণ সম্পন্ন করে বাংলাদেশের গণপূর্ত বিভাগ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যে, আমরাও পারি। সেই আমরাও পারি জায়গা থেকে সকলকে নিয়ে টিম ওয়ার্কের মধ্য দিয়ে সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবার জন্যে আবাসন কেউ থাকবে না গৃহহীন এবং সরকারি সকল স্থাপনায় আমরা অনিন্দ্য সুন্দর দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ বান্ধব স্থাপনা পুরো বাংলাদেশে তৈরী করতে চাই- এটাই আমার স্বপ্ন।