চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জয় বাংলা’র মর্যাদা রক্ষা করতে হবে

জয় বাংলা, এই স্লোগানেই জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশ নামের নতুন এক দেশের; বিজয়ী আর বীরের জাতি হিসেবে বাঙালির স্বীকৃতি মিলেছিল বিশ্বে। সেই জয় বাংলা এখন দেশের জাতীয় স্লোগান। তাকে এই পর্যায়ে আনতে বা জাতীয় স্লোগান করতে যে বলিষ্ঠ ভূমিকা, সেজন্য বুধবার জাতীয় সংসদে বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।

আমরা জানি, এটা ছিল বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা। কিন্তু সহজে সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে এ জন্য। নানা ধাপ পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ভাষণ শেষ করেছিলেন জয় বাংলা বলে। তারপর থেকে বাঙালি জাতির কাছে এই স্লোগান হয়ে উঠে অনুপ্রেরণার নাম, সাহসের প্রতিশব্দ।

কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বাঁক বদলে দেওয়া হয়। স্বাধীনতাবিরোধীরা একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে শুরু করে। তাদের দমন-পীড়নে জাতির অনুপ্রেরণার স্লোগান বলতে গেলে নিষিদ্ধের খাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। এমন অনেক ঘটনার উদাহরণ আছে, শুধু জয় বাংলা বলার অপরাধে জেল-জুলুম থেকে শুরু কারো কারো প্রাণ পর্যন্ত হারাতে হয়েছে।

এসব কারণে জাতির গর্ব আর মর্যাদার স্লোগান ভুলতে বসেছিল মানুষ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বঞ্চিত হয় সেই স্লোগান থেকে। তবে ২০১৩ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গড়ে উঠা গণজাগরণ মঞ্চে জয় বাংলা স্লোগান প্রবল শক্তি আর নতুন অনুপ্রেরণা হয়ে ফিরে আসে মানুষের মাঝে। সেদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার বিচারের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।

তবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এত বড় অপরাধীর এই সাজা মানতে পারেনি তরুণ সমাজ। সেই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জয় বাংলা স্লোগানে বিপুল সংখ্যক মানুষ শাহবাগে জড়ো হয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করে। শেষ পর্যন্ত তাদের দাবি মেনে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। বলতে সেদিন থেকেই জয় বাংলা আবারও ফিরে আসে বাঙালির সাহস আর অনুপ্রেরণা হয়ে।

তার প্রায় সাত বছর পর ২০২০ সালের ১০ মার্চ হাইকোর্টের এক রায়ে জয় বাংলা-কে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনার ভিত্তিতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি জয় বাংলা-কে জাতীয় স্লোগান করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ২ মার্চ সরকারের সেই সিদ্ধান্ত প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়।

সেই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সাংবিধানিক পদাধিকারী ব্যক্তি, দেশে ও দেশের বাইরে কর্মরত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব জাতীয় দিবস উদ্যাপন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় বা সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করবেন। এছাড়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাত্যহিক সমাবেশ (অ্যাসেম্বলি) শেষে এবং সভা-সেমিনারে বক্তব্যের শেষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করবেন।’

আমরা মনে করি, জয় বাংলা কোনো ব্যক্তি বা দলের স্লোগান নয়, এটা জাতীয় স্লোগান। এর মর্যাদা আমাদের সবাইকে রক্ষা করতে হবে।